৭২ ঘণ্টার মধ্যে জরুরি তহবিল সরবরাহ

স্টার্ট ফান্ড বাংলাদেশ বা এসএফবি ১০ মিলিয়ন পাউন্ড আপত্কালীন জরুরি মুদ্রা তহবিল, যা ইউকে এইডের সহায়তায় ২০১৭ সালে গঠন করা হয়। সফলভাবে পরিচালিত স্টার্ট নেটওয়ার্কের আদলে স্টার্ট ফান্ডের এ তহবিল গঠন করা হয়েছে, যা আপত্কালীন পরিস্থিতির সতর্কবার্তা পাওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জরুরি তহবিল সরবরাহ করতে পারে। বাংলাদেশে পরিচালিত যেকোনো স্থানীয়, জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক বেসরকারি সদস্য সংস্থা এই জরুরি তহবিল থেকে আপত্কালীন মুহূর্তে অর্থসহায়তা পেতে পারে।

এসএফবি গড়ে তোলা হয়েছে গ্র্যান্ড বার্গেইন চুক্তি ও ওয়ার্ল্ড হিউম্যানিটেরিয়ান সামিটের প্রতিশ্রুতির চেতনায়। দেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি দুর্যোগ পরিস্থিতিতে অর্থসহায়তা প্রদানের পাশাপাশি এ তহবিল সংকটকালে সমন্বয় ব্যবস্থা উন্নতিকরণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্থানীয় ও জাতীয় সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি, স্থানীয়/জাতীয় মানবিক সংস্থাগুলোর অর্থসহায়তা প্রাপ্তি ও পরিচালনাপ্রক্রিয়া উন্নতিকরণ এবং ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের প্রতি জবাবদিহি উন্নতির জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

২০টি সদস্য সংস্থা নিয়ে যাত্রা শুরুর পর সদস্য বাড়ানোর লক্ষ্যে কঠোর অধ্যবসায় ও বিস্তৃত ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে এসএফবি এখন পর্যন্ত ২৭টি স্থানীয় ও জাতীয় বেসরকারি সংস্থাকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে সফল হয়েছে। ফলস্বরূপ, এ সদস্য পরিচালিত তহবিল অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে বিভিন্ন মানবিক সাড়ায় সহায়তা প্রদান করতে পারে। এ জন্য প্রতিটি আপত্কালীন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ধরনের দাতব্য সংস্থাগুলোর এক হয়ে কাজ করা, পদক্ষেপ সম্পর্কে অন্যদের অবহিত করা, সঠিক সমন্বয় এবং সম্প্রদায়কেন্দ্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিত।  

কাজ

দ্রুত অর্থসহায়তা প্রদান: ২০১৭ সাল থেকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিভিন্ন আপত্কালীন পরিস্থিতিতে প্রায় ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৪৭৫ জন মানুষকে সরাসরি সহায়তা প্রদান করেছে এসএফবি। এ পর্যন্ত তহবিল থেকে সদস্য সংস্থা ও অংশীদারদের প্রায় ৬ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন পাউন্ড অর্থসহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এই উদ্ভাবনী ফান্ডিং মডেল প্রথাগত মডেল থেকে সরে আসতে তৈরি করা হয়েছিল যেন আপত্কালীন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার আগেই সহায়তা নিশ্চিত করা যায়। মূলত, তিনটি মুখ্য মানবিক চাহিদার ওপর ভিত্তি করে এই তহবিল থেকে দ্রুত ও কার্যকর অর্থসহায়তা প্রদান করা হয়। এগুলো হলো—

১। অপর্যাপ্ত অর্থসহায়তা প্রাপ্ত ক্ষুদ্র বা মাঝারি সংকট, ২। দীর্ঘস্থায়ী মানবিক সংকট ও ৩। আসন্ন সংকটের পূর্বাভাস।পূর্বাভাসভিত্তিক সতর্কবার্তা বিশ্লেষণ করে আসন্ন সংকটে আগাম সহায়তা প্রদানের ভাবনাটি সাময়িক কালে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হচ্ছে। পূর্বাভাসভিত্তিক সতর্কবার্তা, বিশ্লেষণ ও প্রতিক্রিয়া প্রদানের জন্য ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে ন্যাশনাল ফোরওয়ার্নে প্ল্যাটফর্ম গঠন করে স্টার্ট ফান্ড বাংলাদেশ। স্থানীয় ও জাতীয় পূর্বাভাসকারী, বিশ্লেষক ও বিভাগীয় বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে ফোরওয়ার্নকে স্থানীয় পর্যায়ে এগিয়ে নিতে এই পদক্ষেপ। এই পর্যন্ত এসএফবি তিনটি আসন্ন সংকটের পূর্বাভাস প্রদান করে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করেছে। এগুলো হলো মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা আসার ফলে উপকূলীয় মৎস্যজীবী ও জেলে পরিবারগুলোর আসন্ন খাদ্যসংকট/নিরাপত্তাহীনতা, রাজধানী ও আশপাশের শহরগুলোয় কোভিডকালে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা ও নদীভাঙনের কারণে এর আশপাশের অধিবাসীদের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিয়ে ফোরওয়ার্নের করা পূর্বাভাসটি ছিল বিশ্বে এ ধরনের প্রথম পূর্বাভাস প্রদান।

স্থানীয় সামর্থ্য বাড়ানো ও বিনিয়োগ: এসএফবি প্রথম তহবিল, যা স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের এনজিওগুলোকে সরাসরি আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রদান করে। ফলে, নির্দিষ্ট অঞ্চলে সংকট সৃষ্টির আশঙ্কার বিষয়টি প্রাধান্য পায় এবং স্থানীয়ভাবে দ্রুততার সঙ্গে পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করা যায়। এসএফবি প্রদত্ত পূর্বসতর্কতার ফলে তারা পরোক্ষ ব্যয় পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থা করতে পারে, যা টেকসই উন্নয়নে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের এনজিওগুলো এখন আপত্কালীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরাসরি এ তহবিল থেকে অর্থসহায়তা পেতে পারে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে একজোট হয়ে সংকট মোকাবিলা করতে পারে। এ ছাড়া সংকটের আগেই আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর স্থানীয় কার্যালয় তহবিল প্রাপ্তির জন্য আবেদন করতে পারে এবং আরও বেশি সক্রিয় থাকে। বিজ্ঞপ্তি