আবাসন খাতের সংগঠন রিহ্যাবে ভোট না হওয়ার শঙ্কা, সমঝোতার চেষ্টা

  • গতকাল সকালে রিহ্যাবের নির্বাচনের তফসিল সংশোধন করেছে নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড।

  • প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময়সীমা ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ভোটের তারিখ পিছিয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি করা হয়েছে।

রিহ্যাব

নির্বাচনের প্রায় সব আয়োজন শেষ। প্রচার-প্রচারণাও শুরু করেছিলেন প্রার্থীরা। হঠাৎ করেই দৃশ্যপট বদলে গেছে। কারণ সমঝোতার মাধ্যমে নেতৃত্ব চূড়ান্ত করার উদ্যোগ নিয়েছেন সংগঠনের কয়েকজন সাবেক প্রভাবশালী নেতা। এর ফলে ১০ বছর পর সাধারণ সদস্যদের ভোটে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন শেষ পর্যন্ত নাও হতে পারে।

আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) ২০২৪-২৬ মেয়াদে নেতৃত্ব নির্বাচনে সমঝোতার বিষয়টি চূড়ান্ত করতে গতকাল মঙ্গলবার রাতে গুলশান ক্লাবে প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন সংগঠনটির সাবেক সভাপতি এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। গতকাল রাত আটটার দিকে এই প্রতিবেদন লেখার সময় সভাটি চলছিল।

অবশ্য তার আগেই গতকাল সকালে রিহ্যাবের নির্বাচনের তফসিল সংশোধন করেছে নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড। এতে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময়সীমা ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি ভোটের তারিখ ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে পিছিয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করা হয়। এর আগের তফসিল অনুযায়ী, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময়সীমাও গত শনিবার শেষ হয়েছে। তারপর সোমবার চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়।

এভাবে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় বাড়ানোর বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান ছাদেক আহমদের সঙ্গে গতরাতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রিহ্যাবের একজন সদস্য জানান, নেতৃত্ব চূড়ান্ত করতে সমঝোতা প্রক্রিয়ায় যাতে কোনো প্রকার জটিলতা না থাকে, সে জন্যই তফসিলে পরিবর্তন আনা হয়েছে। তা না হলে, সমঝোতা হওয়ার পরও ভোটের বাধ্যবাধকতা থেকে যেত।

রিহ্যাবের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসংখ্যা ২৯। তার মধ্যে ঢাকায় ২৬ ও চট্টগ্রামে পদ ৩টি। প্রাথমিকভাবে ঢাকায় ৯০ জন ও চট্টগ্রামে ৭ জন প্রার্থী হন। ৩১ জানুয়ারি বৈধ প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন বোর্ড। পরে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্ধারিত সময়ে ঢাকার দুজন প্রার্থী তাঁদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। তারপর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকাও প্রকাশ করেছিল নির্বাচন বোর্ড।

রিহ্যাবের এই নির্বাচন গত বছরের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সেই নির্বাচনের কমিশন গঠন এবং ভোটার তালিকায় অনিয়ম নিয়ে পাল্টাপাল্টি মামলার ঘটনাও ঘটে। একপর্যায়ে নির্বাচন স্থগিত হয়। অবশেষে উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত হয় সংগঠনের সব ব্যাংক হিসাব। একই সঙ্গে নভেম্বরের শেষ দিকে রিহ্যাবের তৎকালীন কমিটির বর্ধিত মেয়াদ স্থগিত করে প্রশাসক বসায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

রিহ্যাবে একসময় উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাভুটি হতো। ২০১৪ সালে ভোট ছাড়াই সভাপতি পদে আসেন আলমগীর শামসুল আলামিন। পরের তিন মেয়াদেও সমঝোতার ভিত্তিতে কমিটি হয়েছে এই সংগঠনে। ফলে ১০ বছর পর ভোট হওয়ায় সাধারণ সদস্যদের মধ্যে এই নির্বাচন নিয়ে বেশ আগ্রহ তৈরি হয়। ৪৭৬ জন ভোটার হন।

রিহ্যাবের এবারের নির্বাচনে প্রার্থীরা চারটি প্যানেল হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন। সেগুলো হচ্ছে সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. ওয়াহিদুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন আবাসন ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ, সেঞ্চুরি রিয়্যালটির চেয়ারম্যান এম জি আর নাসির মজুমদারের নেতৃত্বে ডেভেলপারস ফোরাম এবং রিহ্যাবের সাবেক সহসভাপতি নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে নবজাগরণ প্যানেল। এর বাইরে রিহ্যাবের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও হামিদ রিয়েল এস্টেট কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইন্তেখাবুল হামিদের নেতৃত্বে আরেকটি প্যানেল রয়েছে। তিনি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের ভাই।

সমঝোতায় নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে রিহ্যাবের কয়েকজন সাবেক নেতা গতকাল জানান, সংগঠনের প্রভাবশালী একটি অংশ ইন্তেখাবুল হামিদকে সভাপতি করার পরিকল্পনা করছে।

জানা যায়, চলতি সপ্তাহে হঠাৎ করেই সমঝোতার বিষয়টি সামনে আসে। তারপরই বিভিন্নভাবে তৎপরতা শুরু হয়। প্রার্থীদের সঙ্গে নসরুল হামিদের মতবিনিময় সভার আমন্ত্রণ জানান চার প্যানেলের শীর্ষ নেতারা। তারপর তফসিলে সংশোধন আনা হয়। চূড়ান্ত প্রার্থীদের তালিকাও সরিয়ে ফেলা হয়।

সমঝোতায় যাবেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ডেভেলপারস ফোরাম প্যানেলের নেতা এম জি আর নাসির মজুমদার গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সবাই যেদিকে মত দেবেন, সেদিকেই আমরা থাকব। আমরা তো বাইরের কেউ না।’