জোরেশোরে গ্যাস অনুসন্ধানের কোনো বিকল্প নেই’

গ্যাস
প্রতীকী ছবি

দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমেছে, বেড়েছে আমদানিনির্ভরতা। আর তাতেই গ্যাসসংকট বড় আকার ধারণ করেছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন এমন মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘সংকট সমাধানে এখনই উদ্যোগী না হলে দেশ দীর্ঘমেয়াদি সংকটে পড়বে। এ জন্য আমাদের সামনে জোরেশোরে গ্যাস অনুসন্ধানের কোনো বিকল্প নেই।’

শিল্প খাতে টেকসই উন্নয়নের জন্য জ্বালানি নিরাপত্তাবিষয়ক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) এ সেমিনারের আয়োজন করে। এতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন ও জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান প্রমুখ।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ইজাজ হোসেন। এতে তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে আমরা বড় আকারে জ্বালানিসংকট দেখতে পেয়েছি। কিন্তু এ সংকট এখানেই শেষ হবে না। আবারও হতে পারে। এ জন্য আমাদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।’

দেশে গ্যাস উৎপাদন কমে আমদানিনির্ভরতা বাড়ছে বলে উল্লেখ করেন ইজাজ হোসেন। বলেন, দেশে ২০১৮-১৯ সাল থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি শুরু হয়। এরপর থেকে প্রতিবছর এর আমদানির পরিমাণ বাড়ছে। অন্যদিকে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮৯২ বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফ) গ্যাস তোলা হয়। অথচ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তোলা হয়েছিল ৯৭২ বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফ)। অর্থাৎ দেশি গ্যাস উৎপাদন প্রতিনিয়ত কমছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে পুরোপুরি আমদানিনির্ভর হওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।

ইজাজ হোসেন বলেন, বর্তমানে শিল্প খাতে ৮০ শতাংশ দেশি গ্যাস ও ২০ শতাংশ এলএনজি গ্যাস ব্যবহৃত হচ্ছে। আর বর্তমানে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১২ টাকা। দেশি গ্যাসের উৎপাদন যেভাবে কমছে, তাতে ২০৩০ সাল নাগাদ শিল্প খাতে দেশি গ্যাসের ব্যবহার কমে ৫০ শতাংশে নেমে আসবে। আর পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে তা ২০ শতাংশে গিয়ে ঠেকবে। তখন প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম হতে পারে ৪০ টাকার বেশি। জ্বালানি খরচ এত বেশি হলে দেশে তখন একটা ভয়ংকর অবস্থা তৈরি হবে।

প্রতিবেশী দেশ ভারতের উদাহরণ দিয়ে ইজাজ হোসেন বলেন, ‘নয়াদিল্লির সাতটি জেলার শিল্পকারখানায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় কয়লা আর সবচেয়ে কম ব্যবহার করা হয় গ্যাস। আর আমাদের দেশে গ্যাসের ওপর নির্ভরতাই সবচেয়ে বেশি। সস্তায় গ্যাস পাওয়ার কারণে শিল্প খাত কখনো বিকল্প জ্বালানির কথা মাথায় নেয়নি। সংকট তৈরি হওয়ায় সবাই এর গুরুত্ব বুঝেছে। এখন সরকারের উচিত কয়লা, এলপিজি ও তেলসহ জ্বালানির বিকল্প উৎসগুলো ব্যবহারে তাদের উৎসাহিত করা।’

দেশে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) বেশি দাম সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বিশ্বের অন্য অনেক দেশের চেয়ে আমাদের দেশে এলপিজির দাম বেশি। এই খরচ কিন্তু কমানো যায়। এলপিজি সরবরাহ খাতে অনেক সমস্যা আছে। এসব সমস্যা দূর করা গেলে এটির দাম কমবে।’

শিল্প ও বিদ্যুৎ খাতে আরও বেশি পরিমাণে কয়লা ব্যবহার করার প্রস্তাব দেন ইজাজ হোসেন। বলেন, ‘নিজেদের কয়লা ব্যবহারের পাশাপাশি ভারত, নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমার থেকে কয়লা আমদানি করা যেতে পারে। এ ছাড়া জ্বালানি সংরক্ষণ, সাশ্রয় ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ অন্যান্য উৎসের প্রতি মনযোগ বাড়াতে হবে আমাদের।’

বর্তমান বাস্তবতায় গ্যাস ব্যবহারের নীতির ক্ষেত্রেও বেশ কিছু পরিবর্তন আনা প্রয়োজন বলে মনে করেন ইজাজ হোসেন। বলেন, বিদ্যুৎ খাতকে অবশ্যই গ্যাসের চাহিদা কমাতে হবে। একই সঙ্গে ভর্তুকির পরিবর্তে আমদানিমূল্য পরিশোধের জন্যও প্রস্তুত হতে হবে। না হলে সরকার পুরোপুরি আমদানিনির্ভর হয়ে এভাবে ভর্তুকি দিয়ে যেতে পারবে না।