বছরে প্রথম পুরোনো গাড়ির দাম কমেছে যুক্তরাষ্ট্রে, এটি কী ইঙ্গিত দিচ্ছে

ছবি: এএফপি

মূল্যস্ফীতির কারণে গত কয়েক মাসে যুক্তরাষ্ট্রে সব জিনিসের দাম বেড়েই চলেছে। তবে দেশটিতে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ব্যবহৃত গাড়ির পাইকারি দাম কমেছে। গাড়ি উৎপাদকেরা নতুন গাড়ি ও ট্রাকের উৎপাদন বাড়িয়েছে। এ কারণেই ব্যবহৃত গাড়ির দাম কমেছে বলে জানিয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম অটোমোটিভ পরিষেবা সংস্থা কক্স অটোমোটিভ।

মার্কিন গণমাধ্যম সিএনবিসি জানিয়েছে, কক্স অটোমোটিভ ব্যবহৃত গাড়ির বিক্রি সম্পর্কে যে ম্যানহেইম মূল্যসূচক তৈরি করে, শুক্রবারে প্রকাশিত ওই সূচকে তারা মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে ৩ শতাংশ মূল্য হ্রাসের খবর দিয়েছে। অর্থাৎ, পাইকারি বাজারে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ের তুলনায় এপ্রিল মাসে ৩ শতাংশ কম দামে পুরোনো গাড়ি কিনতে পাওয়া যাচ্ছে।

বড় পরিসরে ব্যবহৃত গাড়ি সাধারণত অকশন বা নিলামের মাধ্যমে বিক্রি হয়। নিলামে অংশ নিয়ে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পাইকারি ক্রেতা এসব গাড়ি কিনে নেন। পরে তাঁরা আবার স্থানীয় বাজারে সেসব গাড়ি বিক্রি করেন। যুক্তরাষ্ট্রে এই নিলামপ্রক্রিয়ার মূল্যসূচকের হালনাগাদ খবর পাওয়া যায় কক্স অটোমোটিভ প্রকাশিত ম্যানহেইম ইউজড ভেহিকেল ভ্যালু ইনডেক্সে।

আগের তুলনায় এই দাম এখনো অনেক বেশি বলে জানিয়েছে সিএনবিসি। ম্যানহেইম সূচক অনুসারে, গত ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত গাড়ি যে দামে বিক্রি হয়েছিল, সে তুলনায় দাম এখনো ৫ দশমিক ২ শতাংশ বেশি রয়েছে। তবে ২০২২ সালের এপ্রিল মাসের তুলনায় বর্তমানে পাইকারি দাম প্রায় সাড়ে ৪ শতাংশ কমেছে।

করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বেই ব্যবহৃত গাড়ির দাম বেড়ে যায়। কারণ, বিশ্বব্যাপী করোনা বিধিনিষেধ ও সরবরাহ শৃঙ্খলে সমস্যার কারণে নতুন যানবাহন উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়। এতে বাজারে নতুন গাড়ির সরবরাহও কমে যায় এবং দাম বেড়ে যায়।

অন্যদিকে নতুন গাড়ির সংকট থাকায় ভোক্তারা প্রয়োজন মেটাতে ব্যবহৃত যানবাহন কিনতে আগ্রহী হন। বলা যায়, তাঁরা এক প্রকার বাধ্য হন। এই বাড়তি চাহিদার কারণে ব্যবহৃত গাড়ির পাইকারি ও খুচরা দামও বেড়ে যায়। এক বছরেরও বেশি সময় পর সেই দাম আবার কমার লক্ষণ দেখা গেল।

সাধারণত পাইকারি বাজারের দাম খুচরা বাজারকে প্রভাবিত করে। তাই বাজার–বিশ্লেষকেরা বলছেন, ব্যবহৃত গাড়ির পাইকারি বাজারে দাম আরও কিছুটা কমলে সাধারণ ভোক্তারা অনেক সাশ্রয়ী দামে গাড়ি কিনতে পারবেন।

কক্স অটোমোটিভের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ চার্লি চেসব্রো বলেন, ব্যবহৃত গাড়ির দাম কমছে। এই দাম ভবিষ্যতে আরও কমতে পারে। তবে সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বড় ধরনের মূল্য হ্রাসের ঘটনা ঘটবে বলে মনে হয় না।

যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির হার বেশ উঁচু। পুরোনো গাড়ির দাম বিনিয়োগকারী ও মার্কিন প্রশাসনের জন্য মূল্যস্ফীতি কমার ইঙ্গিত হিসেবে কাজ করে। গত বছরের শুরুর দিকে বাইডেন প্রশাসন পুরোনো গাড়ির দাম বেড়ে যাওয়াকে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে দায়ী করেছিল।

করোনা মহামারি শুরু হলে মানুষের ভ্রমণ বন্ধ হয়ে যায়। তখন প্রায় কেউই নতুন গাড়ি কেনা বা গাড়ি ভাড়া করতে চাননি। ফলে ব্যাংকের দায় ও অন্যান্য খরচ মেটাতে গাড়ি ভাড়া দেয়—এমন সংস্থাগুলোর বেশির ভাগই তাদের গাড়িগুলো নিলামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়। তখন ফেডারেল রিজার্ভের সুদহার কম ছিল। এতে কম সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবহৃত গাড়ির পাইকারি ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীরা অনেকটা কম দামে এসব গাড়ি কিনে নেন।

পরবর্তী সময় করোনা বিধিনিষেধ শিথিল হলে গাড়ির চাহিদা আবার বেড়ে যায়। তখন করোনার সংক্রমণ এড়াতে বিমান কিংবা গণপরিবহনে না চড়ে ব্যক্তিগত গাড়িতে চলাচলের আগ্রহ বেড়ে যায়। কিন্তু তখন বাজারে নতুন গাড়ির সরবরাহ কম থাকায় মানুষ ভাড়া গাড়ির ব্যবহার বাড়িয়ে দেয়। সুযোগটি নেন ব্যবহৃত গাড়ির ব্যবসায়ীরা। তাঁরা ব্যবহৃত গাড়ির দাম কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেন।

এ ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের সার্বিক খুচরা মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধিতে প্রভাব রাখে।