উৎপাদন শুরুর অপেক্ষায় ১৪ শিল্পকারখানা

এসব কারখানায় বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৯ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা। তবে গ্যাস-পানির সংকটে রয়েছে কয়েকটি কারখানা।

দেশের সরকারি-বেসরকারি ৫টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে নির্মাণকাজ শেষে আনুষ্ঠানিক উৎপাদনের অপেক্ষায় রয়েছে ১৪টি শিল্পকারখানা। এসব কারখানায় বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৯৬ কোটি ৭৩ লাখ মার্কিন ডলার, যা দেশীয় মুদ্রায় ৯ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১০১.৩৭ টাকা ধরে)। ইতিমধ্যে কর্মসংস্থান হয়েছে ৩ হাজার ৮৭১ জনের। শিগগিরই তা বেড়ে সাড়ে ১৭ হাজারে দাঁড়াবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২৬ অক্টোবর এসব কারখানার উৎপাদন কার্যক্রমের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।

উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রতিশ্রুত সব পরিষেবা এখনো নিশ্চিত হয়নি বলে অভিযোগ বিনিয়োগকারীদের। তবে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) কর্মকর্তাদের দাবি, বেশির ভাগ সুযোগ-সুবিধাই নিশ্চিত করা হয়েছে। বাকি কাজও দ্রুত শেষ হয়ে যাবে।

বেজা জানিয়েছে, সরকার এখন পর্যন্ত ৯৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন দিয়েছে, যার মধ্যে ২৮টিতে উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে। সরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর মধ্যে বেজার সবচেয়ে বড় প্রকল্প মিরসরাইয়ে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। এখানে প্রথমবারের মতো চারটি কারখানা উৎপাদনে যাচ্ছে আগামী সপ্তাহে। একইভাবে মৌলভীবাজারের শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রথম কোনো কারখানার যাত্রা শুরু হচ্ছে। উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা বাকি ৯টি শিল্পকারখানা তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে অবস্থিত।

সরকারি-বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে ইতিমধ্যে ২৯টি শিল্পকারখানা বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে। সেই তালিকায় এবার যুক্ত হচ্ছে আরও ১৪টি শিল্পকারখানা। এ ছাড়া ৯টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিগগিরই নতুন আরও ২৯টি শিল্পকারখানার নির্মাণ শুরু হবে।

মিরসরাইয়ে উৎপাদনে যাচ্ছে চার কারখানা

২০১৬ সালে মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত সেখানে ১৩৬টি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগের অনুমোদন পেয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। এতে কর্মসংস্থান হবে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ লোকের।

বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে প্রথমবার চারটি কারখানার উৎপাদন শুরু হবে। সেগুলো হচ্ছে ম্যাকডোনাল্ড স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ, নিপ্পন ও ম্যাকডোনাল্ড স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ, এশিয়ান পেইন্টস ও সামুদা কনস্ট্রাকশন। এর মধ্যে দেশীয় প্রতিষ্ঠান ম্যাকডোনাল্ড স্টিলের কারখানায় বিভিন্ন ধরনের ইস্পাতের কাঠামো তৈরি হবে। রং উৎপাদনকারী কোম্পানি এশিয়ান পেইন্টসের কারখানাও উৎপাদন শুরুর অপেক্ষায় আছে। অবকাঠামো নির্মাণে প্রয়োজনীয় প্রি-কাস্ট পাইল তৈরি করবে টিকে গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সামুদা কনস্ট্রাকশন।

শ্রীহট্টতে ডাবল গ্লেজ কারখানা

মৌলভীবাজারের শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলে ডাবল গ্লেজিং বাংলাদেশ নামের একটি কারখানা উৎপাদনে যাচ্ছে। তারা উৎপাদন করবে শব্দ ও তাপ নিরোধক কাচ। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটির প্রাথমিক বিনিয়োগ প্রায় ২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

এ ছাড়া আরও পাঁচটি প্রতিষ্ঠান এখানে কারখানা স্থাপনের অনুমতি পেয়েছে। সব মিলিয়ে শ্রীহট্টর ২২৭ একর জমিতে বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে ১৩ হাজার ২৪০ কোটি টাকার।

দুই মেঘনায় সাত কারখানা

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্থনৈতিক অঞ্চল ও মেঘনা অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৭টি কারখানার উৎপাদন শুরু হচ্ছে। ৪ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা বিনিয়োগে এসব কারখানায় ১৩ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে।

মেঘনা অর্থনৈতিক অঞ্চলে পলিভিনাইল ক্লোরাইড বা পিভিসি ও পেট রিজিন তৈরি করবে রপ্তানিমুখী কোম্পানি মেঘনা পিভিসি লিমিটেড। আরেক কোম্পানি সোনারগাঁও সোলার এনার্জি বছরে ৫০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। এ ছাড়া মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্থনৈতিক অঞ্চলে ফয়েল ও অফসেট কাগজ বানাবে মেঘনা ফয়েল প্যাকেজিং লিমিটেড, বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ তৈরি করবে মেঘনা বাল্ক ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ এবং তরল কালি বানাবে সাকাটা ইনক্স ও সিগওয়ার্ক। এ ছাড়া টিআইসি ইন্ডাস্ট্রিজ হ্যাঙ্গারসহ রপ্তানিমুখী বিভিন্ন প্লাস্টিকসামগ্রী তৈরি করবে।

সিটিতে দুই কারখানা

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সিটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রায় ৪ হাজার ৪১০ কোটি টাকা বিনিয়োগে নির্মিত ২টি কারখানা উৎপাদনে যাচ্ছে। কারখানা ২টিতে ইতিমধ্যে কর্মসংস্থান হয়েছে ৮৭৫ জনের।

এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে সিটি সিড ক্রাশিং ইন্ডাস্ট্রিজ ভোজ্যতেল ও পোলট্রি খাবারের কাঁচামাল সয়ামিল উৎপাদন করবে। আর সিটি পলিমারস দৈনিক ১০ লাখ বিভিন্ন ধরনের পলিব্যাগ উৎপাদন করবে।

গ্যাস-পানির সংকট

মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে উৎপাদনের অপেক্ষায় থাকায় একটি কারখানা গ্যাস পায়নি। চাহিদা অনুযায়ী পানি মিলছে না। নিষ্কাশননালার সমস্যা পুরোপুরি সমাধান হয়নি, অন্যদিকে শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলে গ্যাস যায়নি। পাকা সড়ক নির্মাণও শেষ হয়নি।

এ বিষয়ে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান ইউসুফ হারুণ বলেন, ‘যেসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে উৎপাদন শুরু হয়েছে, সেখানে সব ধরনের পরিষেবা নিশ্চিতের কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে তিতাস গ্যাস কোম্পানি আর শ্রীহট্টতে জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ গ্যাস সরবরাহে কাজ করছে। আশা করছি, এক-দুই মাসের মধ্যে এসব কাজ শেষ হবে। এ ছাড়া নিষ্কাশননালাসহ অন্যান্য কাজও শেষের দিকে।’

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলে সরকার বড় ধরনের অবকাঠামোগত সুবিধা দিলেও এখনো শিল্পকারখানার চাহিদা অনুযায়ী সব ধরনের পরিষেবা নিশ্চিত করতে পারেনি। এতে বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হন। সরকারের উচিত হবে, চাহিদা অনুযায়ী পরিষেবা নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ বিনিয়োগকারীদের জানানো এবং সে অনুযায়ী তা বাস্তবায়ন করা।