রিজার্ভের অর্থে আর তহবিল নয়, কমবে ইডিএফের আকার: গভর্নর
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে আপাতত আর কোনো তহবিল গঠন করা হবে না। এ ছাড়া রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে দেওয়া অর্থ ‘সমন্বয়’ করে এর আকার ধীরে ধীরে কমানো হবে।
আজ সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুষ্ঠিত এক সভায় আব্দুর রউফ তালুকদার জানান, ইতিমধ্যে ইডিএফের ১০০ কোটি ডলার সমন্বয় হয়েছে।
রপ্তানি খাতের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল গঠন করেছিল এবং এর জন্য বৈদেশিক মুদ্রার মজুত থেকে অর্থ নেওয়া হয়েছিল। এখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে এই তহবিল থেকে বিতরণ করা অর্থ সমন্বয় করা হবে, অর্থাৎ তহবিলের অর্থ ফেরত আসার পর নতুন করে আর সেই অর্থ বিতরণ করা হবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশের রপ্তানিমুখী শিল্পের বিকাশ ধরে রাখতে ১০ হাজার কোটি টাকার রপ্তানি সহায়ক প্রাক্-অর্থায়ন তহবিল করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ তহবিলে অংশগ্রহণকারী ৪৯টি ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে গভর্নর রিজার্ভের অর্থ নিয়ে কথা বলেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) রিজার্ভের অর্থে তহবিল গঠনের বিরোধিতা করেছে। বাংলাদেশের প্রকৃত রিজার্ভের হিসাব করতে ইডিএফে বরাদ্দ দেওয়া অর্থ বাদও দিতে পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। রিজার্ভ থেকে ৭০০ কোটি ডলার নিয়ে গঠন করা হয়েছে ইডিএফ।
আইএমএফ থেকে ঋণ পেতে চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। এ–সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব আরও পরের দিকে ওয়াশিংটনে অনুমোদিত হতে পারে। এমন সময়ে গভর্নরের এ বক্তব্য বাংলাদেশ ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে জানাল।
অনুষ্ঠানে গভর্নর বলেন, করোনাভাইরাস মহামারি–পরবর্তী অর্থনৈতিক অভিঘাত ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে বিরূপ অবস্থা বিরাজ করছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে দেশের রপ্তানিমুখী শিল্পকে আরও সহনশীল করার পাশাপাশি এ খাতের উন্নয়ন ও প্রসারের ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে ১০ হাজার কোটি টাকার রপ্তানি সহায়ক প্রাক্-অর্থায়ন তহবিল গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া সরকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থসামাজিক উন্নয়ন কৌশলের সঙ্গে সংগতি রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে।
আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ১০ হাজার কোটি টাকার প্রাক্-অর্থায়ন তহবিলটি দেশের রপ্তানি খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
এ অর্থায়ন কার্যক্রম শিগগিরই শুরু হবে। মাত্র ৪ শতাংশ সুদে এ তহবিল থেকে কাঁচামাল ক্রয় বা আমদানির বিপরীতে প্রত্যক্ষ ও প্রচ্ছন্ন রপ্তানিকারকদের দেশি মুদ্রায় ঋণ নেওয়ার সুযোগ থাকবে, যার মেয়াদ হবে ১৮০ দিন। ব্যাংক পর্যায়ে সুদহার হবে দেড় শতাংশ।
অনুষ্ঠানে ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছের স্বাগত বক্তব্য দেন। এ ছাড়া বক্তব্য দেন সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মাকসুদা বেগম, মোহাম্মদ ইব্রাহীম ভূঁইয়া, অতিরিক্ত পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিনসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।