এবার রোজায় ডালের দামও চড়া

রোজার মাঝামাঝি সময় থেকে ডাল ও ডালজাতীয় পণ্যের চাহিদা কিছুটা কমবে। তখন দামও দ্রুত কমবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

রাজধানীর বাংলামোটর এলাকার মেসে থাকেন জিয়াউল ইসলাম। মেসে তাঁরা ১০-১২ জন নিয়মিত খাওয়াদাওয়া করেন। মাসে তাঁদের অন্তত ৫ কেজি মোটা দানার মসুর ডাল লাগে। মাঝেমধ্যে অ্যাংকর আর মুগ ডালও রান্নার পদে যোগ হয়। এসব ডালের মূল্যবৃদ্ধিতে মেসের খরচ বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে খরচ বেড়েছে ছোলার বাড়তি দামে। তা-ও আবার কম নয়। গতবারের চেয়ে এবার প্রতি কেজি ছোলার দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি। এ ছাড়া ইফতারের খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে।

জিয়াউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ডাল মেসের নিত্যদিনের খাবার। মাসে ডাল রান্না হয় না, এমন দিন হাতে গোনা। বাজারে মাছ-মাংসের দাম চড়া। এর মধ্যে ডালের মতো নিত্যপণ্যের বাড়তি দাম মেসের খরচ বাড়িয়েছে। এবার রোজায় ছোলার দামও বাড়ায় বাড়তি চাপ হয়ে গেছে।

ডালের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য প্রতিনিয়ত গবেষণা হচ্ছে। দুটি নতুন জাত অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। জলাবদ্ধতা সহনশীল মটর ডালের আরেকটি জাতের অনুমতির আবেদনপ্রক্রিয়াও চলমান। তাতে ভবিষ্যতে ডালের উৎপাদন আরও বাড়বে।
এ কে এম মাহাবুবুল আলম, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ডাল গবেষণা উপকেন্দ্র, গাজীপুর

এবারের রোজায় গতবারের তুলনায় অধিকাংশ নিত্যপণ্য বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। সাধারণ মানুষকে খেজুর থেকে শুরু করে ছোলা, চিনিসহ বিভিন্ন পণ্যে বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে। মাছ ও মাংসের বাজারও বেশ চড়া। সবজির বাজারেও যে তেমন স্বস্তি আছে বলা যাবে না। নতুন করে আলুর দাম বেড়েছে। সবকিছু যখন বাড়তি, তখন বাদ যায়নি ডালও।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত রোজায় ক্রেতারা মোটা দানার যে মসুর ডাল ১০০ টাকা কেজি দরে কিনেছিলেন, সেটির দাম এবার ১১০ টাকার আশপাশে। মাঝারি ও চিকন দানার মসুর ডালের দামও এখন বাড়তি। মুগ ডালের কেজি গত বছর ৯৫ থেকে ১৩৫ টাকা ছিল, তা বেড়ে এবার ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায় উঠেছে; অর্থাৎ এক বছরে মুগ ডালের দাম বেড়েছে ৩৯ শতাংশ।

যদিও টিসিবির এই হিসাব থেকে বাজারে মুগ ডালের দাম আরও বেশি। কোথাও কোথাও প্রতি কেজি মুগ ডাল ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। গতবার এক কেজি অ্যাংকর ডালের দাম ছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। তা এবার বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজিতে। এক বছরের ব্যবধানে এটির দাম বেড়েছে ১৭ শতাংশ। রোজার মাসে বাজারে ছোলার চাহিদা বেশ বাড়ে। গতবার ছোলার কেজি ছিল ৮০ থেকে ৯০ টাকা। এবার তা কিনতে হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। এটির দাম এক বছরে ২০ শতাংশ বেড়েছে।

টিসিবির তালিকার বাইরে বাজারে মাষকলাই ও খেসারির ডালের চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে রোজায় পেঁয়াজুর প্রধান উপকরণ খেসারির ডালের চাহিদা বেশ বেড়ে যায়। রোজার এক সপ্তাহ আগেও খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি খেসারির ডালের দাম ছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকা। সেই ডালের দাম বেড়ে এখন ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা হয়েছে। আর মাষকলাই ডালের কেজি এখন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। রোজায় চাহিদা বেশি থাকায় ইফতারির উপকরণ বেসনের দামও বেড়েছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পাইকারি ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শফি মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, মূলত আমদানি খরচ বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে ডালের বাজারে। এ ছাড়া অন্যান্য পণ্যের দামের প্রভাবও পড়েছে। রোজার মাঝামাঝি সময় থেকে ডাল ও ডালজাতীয় পণ্যের চাহিদা কিছুটা কমে আসবে। তখন ডালের দাম দ্রুত কমবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য বলছে, গত অর্থবছরের ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে দেশে মটর, মটর ডাল, ছোলা ও মসুর ডালের আমদানি কমেছে। গত তিন মাসে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে মটর ও মটর ডাল ৩৮ হাজার ২৪৯ টন কম আমদানি হয়েছে। ছোলা আমদানি কমেছে ১০ হাজার ২৯৭ টন। আর মসুর ডাল গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ হাজার ১১৫ টন কম আমদানি হয়েছে।

ডাল গবেষণাকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, দেশে বছরে ডাল ও ডালজাতীয় শস্যের চাহিদা ২৬ থেকে ২৭ লাখ টন। এর মধ্যে দেশে উৎপাদন হয় মাত্র ৯ লাখ টন। বাকিটা আমদানি করে মেটাতে হয়। দেশে চাষযোগ্য মোট জমির মাত্র ২ দশমিক ৪০ শতাংশে ডাল চাষ হয়। বর্তমানে ডালজাতীয় শস্যের হেক্টরপ্রতি উৎপাদন ১ হাজার ১২০ কেজি।

ডাল গবেষণা উপকেন্দ্র গাজীপুরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ কে এম মাহাবুবুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ডালের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য প্রতিনিয়ত গবেষণা হচ্ছে। দুটি নতুন জাত অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। জলাবদ্ধতা সহনশীল মটর ডালের আরেকটি জাতের অনুমতির আবেদনপ্রক্রিয়াও চলমান। তাতে ভবিষ্যতে ডালের উৎপাদন আরও বাড়বে।