পায়রা বন্দরে আগ্রহ বাড়ছে ব্যবসায়ীদের

পায়রা বন্দরে জাহাজ
ফাইল ছবি: সংগৃহীত

পটুয়াখালীর পায়রা বন্দর ব্যবহারে দেশি ব্যবসায়ীদের আগ্রহ বাড়ছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় দুইটি শিল্পগোষ্ঠী এই বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি শুরু করেছে।

পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার অ্যান্ড মেরিন শাখা সূত্রে জানা গেছে, মেঘনা গ্রুপের আমদানি করা ৫৩ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন সিমেন্ট ক্লিংকার ও লাইমস্টোনবাহী মাদার ভেসেল এমভি মেঘনা হারমনি গতকাল বৃহস্পতিবার এই বন্দরে ভিড়েছে। জাহাজটি ভিয়েতনাম থেকে ৯ ডিসেম্বর সকালে ৪৩ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন সিমেন্ট ক্লিংকার ও ১০ হাজার ১০০ মেট্রিক টন লাইমস্টোন নিয়ে পায়রা বন্দরের ফেয়ারওয়ে বয়ার কাছে আসে।

বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন এস এম শরীফুর রহমান বলেন, এমভি মেঘনা হারমনি থেকে ইতিমধ্যে ১৬ হাজার মেট্রিক টন সিমেন্ট ক্লিংকার ও লাইমস্টোন কার্গো লাইটারে করে (খালাস) নেওয়া হয়েছে। বাকি ৩৭ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন সিমেন্ট ক্লিংকার ও লাইমস্টোন খালাস করতে জাহাজটিকে বন্দরের অভ্যন্তরীণ নোঙরে আনা হয়েছে। এসব পণ্য দ্রুত খালাস করে ঢাকায় নেওয়া হবে।

এস এম শরীফুর রহমানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আগামী সপ্তাহে মেঘনা গ্রুপের মালিকানাধীন আরও একটি জাহাজের ৬০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন লাইমস্টোন নিয়ে পায়রা বন্দরে ভেড়ার কথা। এ ছাড়া একই গ্রুপের আরও পাঁচ জাহাজ পণ্য আমদানির প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এসব জাহাজ বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য নিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই পায়রা বন্দরে ভিড়তে পারে।

এর আগে ১০ ডিসেম্বর দুবাই থেকে ৩ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন লিকুইফায়েড পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) নিয়ে পায়রা বন্দরের ফেয়ারওয়ে বয়ার কাছে প্রথম ভেড়ে এমভি বসুন্ধরা চাতকী নামে বসুন্ধরা গ্রুপের একটি জাহাজ। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে আরও ৩ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন এলপিজি নিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের আরও একটি জাহাজ এ বন্দরে এসে পৌঁছানোর কথা।

পায়রা বন্দরের রাজস্ব শাখা সূত্র জানায়, ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এই বন্দরে মোট ১ হাজার ৭৮ কোটি ১০ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে।

পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল গোলাম সাদেক গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বন্দরের নিজস্ব জলযানযোগে অভ্যন্তরীণ নোঙরে ভেড়ানো এমভি মেঘনা হারমনি জাহাজটি পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেঘনা গ্রুপের মতো বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান পায়রা বন্দর ব্যবহার করে বিদেশ থেকে বিভিন্ন পণ্য আনতে শুরু করেছে। এ কারণে আমরা মনে করছি, ভবিষ্যতে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে পায়রা বন্দর বিরাট ভূমিকা পালন করবে।’

আমদানি-রপ্তানিকারকদের উদ্দেশে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বলেন, পায়রা বন্দর এখন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। দেশের ব্যবসায়ীরা বিদেশ থেকে এই বন্দর ব্যবহার করে পণ্য নিয়ে আসতে পারেন। ব্যবসায়ীদের বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

পটুয়াখালীর পায়রা বন্দর প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালে। ২০১৬ সালে সাগরে বড় জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে স্থানান্তরের মাধ্যমে পণ্য পরিবহন শুরু হয় বন্দরটিতে। বন্দরটিতে এখনো পণ্য ওঠানো-নামানোর মতো সুবিধা তৈরি হয়নি। বন্দরটিতে একটি বহুমুখী টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

পায়রা বন্দর ব্যবহারকারীরা জানান, এ বন্দর দিয়ে খোলা পণ্য পরিবহন বাড়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ, বহির্নোঙরে পণ্য স্থানান্তরের পর অভ্যন্তরীণ নদীপথে ঢাকা অঞ্চলে সহজে পরিবহন করা সম্ভব হবে। চট্টগ্রামে খোলা পণ্য সাগর উপকূল পাড়ি দিতে হয়, যেটি পায়রা বন্দরে দিতে হবে না।