বিশেষ সাক্ষাৎকার

মানুষের জীবন-জীবিকা উন্নত করার বাজেট করছি

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হবে আগামী ২ জুন। বাজেট সামনে রেখে সার্বিক অর্থনীতি, ব্যাংক খাত, পুঁজিবাজার, এনবিআর পরিস্থিতি ইত্যাদি নিয়ে ২১ মে প্রথম আলোর সঙ্গে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে কথা বলেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফখরুল ইসলাম

প্রথম আলো:

বাজেটের আকার ছোট করলেও তো ধার করতে হবে ভালোই।

সালেহউদ্দিন আহমেদ: তা করতে হবে। দেশি-বিদেশি উৎস থেকে ধার তো নিতেই হবে। তবে দেশি উৎস থেকে কম ধার করব। বাজেট–ঘাটতিও রাখব মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশের নিচে। ব্যাংকঋণ বেশি নেব না।

প্রথম পার্থক্য হচ্ছে, এবারের বাজেটকে কোনোভাবেই উচ্চাভিলাষী বাজেট বলা যাবে না। এ বাজেটে অবাস্তব ও অবাস্তবায়নযোগ্য কোনো মিথ্যা আশ্বাস দেওয়া হবে না। তবে এটা ঠিক, আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে, তাই বাজেটের আকার ছোট করছি।
প্রথম আলো:

এ মুহূর্তে বাজেট সামনে রেখে কী চ্যালেঞ্জ দেখতে পাচ্ছেন?

সালেহউদ্দিন আহমেদ: মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। আর আছে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। শুধু বজায় রাখা নয়, টেকসই করা। এ ছাড়া বেসরকারি খাতকে উজ্জীবিত করা আরেকটা বড় চ্যালেঞ্জ।

প্রথম আলো:

বেসরকারি খাতকে কীভাবে উজ্জীবিত করবেন? এ খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি তো ৭ শতাংশের মতো। আমানতের প্রবৃদ্ধিও কম। এদিকে কর-জিডিপির হারও ৭–এর সামান্য বেশি। এত টানাটানির মধ্যেও আবার মেগা প্রকল্প হাতে নিচ্ছেন কেন?

সালেহউদ্দিন আহমেদ: কর-জিডিপি হার দশমিক ৫ শতাংশও যদি বাড়ত, তাহলেও তা ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে যেত। কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছি। দেখা যাক। আর বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধির জন্য আমরা আগামী বাজেটে ব্যবসাবান্ধব উদ্যোগ নিচ্ছি। আওয়ামী লীগ আমলে অনেক ঋণ চলে গিয়েছিল। ব্যাংক ইচ্ছা করলেই ঋণ দিতে পারছে না। আর মেগা প্রকল্প যেটা বলছেন, তা মেগা না। বে–টার্মিনালের উদাহরণ যদি দিই, এতে ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) মার্কিন ডলার লাগবে। মেট্রোরেল বা পদ্মা সেতুর মতো অত বড় প্রকল্প এটা নয়।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। আর আছে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। শুধু বজায় রাখা নয়, টেকসই করা। এ ছাড়া বেসরকারি খাতকে উজ্জীবিত করা আরেকটা বড় চ্যালেঞ্জ।
প্রথম আলো:

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জকে কীভাবে নিচ্ছেন?

সালেহউদ্দিন আহমেদ: আমরা সরবরাহব্যবস্থা নিশ্চিত করব। গুরুত্ব পাবে কৃষি খাত। সার আমদানি বন্ধ করিনি। চাল আমদানিও ভালো করেছি। সয়াবিন, মসুর ডালসহ নিত্যপণ্য কেনা হচ্ছে। এগুলো বজায় থাকবে। সৌভাগ্যক্রমে সিলেট অঞ্চলে এবার ভালো উৎপাদন হয়েছে। মাছ, ডিম ইত্যাদি পণ্যের দামও স্বস্তির জায়গায় এসে গেছে। মাঝখানে তো ডিমের দাম অনেক বেড়ে গিয়েছিল। আগামী বাজেটে আরও ব্যবস্থা নেব। ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের জন্য ভালো একটা ভূমিকা পালন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রথম আলো:

আমানতের প্রবৃদ্ধিও যে কমে গেছে!

সালেহউদ্দিন আহমেদ: মানুষের ব্যবসা বড় না হলে তো আমানত কমেই যায়। তবে বাণিজ্য সহজীকরণ করছি। বছর বছর লাইসেন্স নবায়ন করতে হবে না। সামনের সময় ভালো হবে। এ কারণেই বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন একটু বাড়িয়ে করা হচ্ছে। বাজেট–ঘাটতি হবে, তা তো হয়ই। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক ইত্যাদি সংস্থা থেকে ৩৫০ কোটি মার্কিন ডলার পাব। বাজেট–সহায়তা হিসেবে তা কাজে দেবে। যদিও তা যথেষ্ট নয়। বাজেট ছোট করার কারণে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) তাই ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনছি। আমরা দেখেছি, ৫ বছরের প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০ বছর চলে যায়। আমরা চেষ্টা করছি এগুলো যেন আর না হয়। টাকা ছাপানোর প্রবণতা যাতে কমে যায়।

বিশ্বব্যাপী মন্দা পরিস্থিতি চলছে। দেশে গত ১৫ বছরে কয়েকটি গোষ্ঠীর হাতে ছিল সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ। একটি গোষ্ঠী ছিল, যারা একদিকে ছিল ব্যাংকের মালিক, আবার ছিল সংসদ সদস্য। তখন সবার জন্য সমান সুযোগ ছিল না।
প্রথম আলো:

সরকারের যাত্রা শুরুর দিকে অনেক বিনিয়োগ আসবে বলে আমরা ধারণা পেয়েছিলাম; কিন্তু রাজনৈতিক সরকার দায়িত্বে না থাকলে নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষার অনিশ্চয়তার কারণে দেশি-বিদেশি কোনো বিনিয়োগই তো আসে না, এটাই তো সত্য?

সালেহউদ্দিন আহমেদ: এটা ঠিক, রাজনৈতিক সরকার থাকলে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হয়। অন্তর্বর্তী সরকার কিছু সংস্কার কাজ হাতে নিয়েছে। ব্যাংক, এনবিআর, তথ্যপ্রযুক্তি ইত্যাদি খাতের সংস্কারগুলো সফল হলে বিনিয়োগে সুফল পাওয়া যাবে। সংস্কারের সুবিধা পেতে একটু সময় লাগবে। আর বিনিয়োগ বেশি আসবে কোথা থেকে? বিশ্বব্যাপী মন্দা পরিস্থিতি চলছে। দেশে গত ১৫ বছরে কয়েকটি গোষ্ঠীর হাতে ছিল সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ। একটি গোষ্ঠী ছিল, যারা একদিকে ছিল ব্যাংকের মালিক, আবার ছিল সংসদ সদস্য। তখন সবার জন্য সমান সুযোগ ছিল না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর খুবই সিরিয়াস। মুদ্রানীতি ও বৈদেশিক বিনিময় হার নিয়ে গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল্যবোধ অনেক নেতিবাচক হয়ে গিয়েছিল। ওখানে ছিল নেতৃত্বের অভাব। ধীরে ধীরে আস্থা ফিরে আসছে।
প্রথম আলো:

ছয় থেকে সাতটি ব্যাংক মানুষের আমানত ফেরত দিতে পারছে না। ২০টির মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানও ভালো অবস্থায় নেই। ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ করা হয়েছে। অনেক বিমা কোম্পানির অবস্থাও খারাপ। এভাবে আর্থিক খাত চলছে। কী করবেন?

সালেহউদ্দিন আহমেদ: ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ হয়েছে। এটা ভালো কাজে দেবে। ব্যাংক খাতের কয়েকটা দিক নিয়ে কাজ চলছে। একটা হচ্ছে সম্পদ উদ্ধার। একটা বিশেষ তহবিলও করা হচ্ছে। টাকা ফেরতের পাশাপাশি এ তহবিল থেকে জনহিতকর কাজ করা হবে। আবার মানি লন্ডারিংয়ের বিপুল অঙ্কের অর্থ চিহ্নিত হয়েছে। মূল কথা হচ্ছে, ব্যাংকগুলোর প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে, যা ফিরে আসছেও। যেমন ইসলামী ব্যাংকের প্রতি আস্থা ফিরে আসছে। অন্য ছোট যেসব ব্যাংক পারবে না, সেগুলোর ব্যাপারে ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশকে কাজে লাগানো যেতে পারে। তবে একটা কথা বলতে পারি যে আমানতের টাকা সবাই ফেরত পাবেন। সময় লাগতে পারে। বিমা খাতকেও ঠিক করা জরুরি। এটা অনিয়ন্ত্রিত ছিল। মালিকেরা প্রিমিয়ামের টাকা নিয়ে বাড়ি চলে যেতেন। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছে। মালিকেরা সহযোগিতা করতে চান না।

প্রথম আলো:

রাজনৈতিক নেতাদের মামলা দিয়ে ধরা হচ্ছে; কিন্তু আর্থিক খাতের লুটেরাদের বিচারের কী হবে?

সালেহউদ্দিন আহমেদ: বসুন্ধরা গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, সামিট গ্রুপ, সিকদার গ্রুপসহ ১২টি গ্রুপকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ২০০ কোটি টাকার বেশি অনেকের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। আমাদের দেশে ফরেনসিক নিরীক্ষায় দক্ষতা কম। ফলে আর্থিক খাতের তছরুপকে ভালোভাবে ধরা যায় না। আবার ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ধাপ (লেয়ার) তৈরি করে অর্থ আত্মসাৎ করেন। যেটা দেখেছি, রাজনীতিবিদদের চিহ্নিত করা খুব সহজ। লোকজন জানেন যে রাজনীতিবিদের তো ১০টা ফ্ল্যাট থাকার কথা নয়। তারপরও লন্ডনে দেখলেন না, একজনের কতটা ফ্ল্যাট আছে! ব্যবসায়ীদের টাকা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে বলা হয় যে ব্যবসায়ী হয়তো নয়ছয় করেছেন বেশি; আর রাজনীতিবিদদের ক্ষেত্রে বলা হয়, তাঁরা ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তবু কাউকেই আমরা ছাড়ছি না এবং একটা বার্তা দিচ্ছি যে ভবিষ্যতে এ রকম করে কেউ পার পাবেন না।

আবার মানি লন্ডারিংয়ের বিপুল অঙ্কের অর্থ চিহ্নিত হয়েছে। মূল কথা হচ্ছে, ব্যাংকগুলোর প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে, যা ফিরে আসছেও। যেমন ইসলামী ব্যাংকের প্রতি আস্থা ফিরে আসছে। অন্য ছোট যেসব ব্যাংক পারবে না, সেগুলোর ব্যাপারে ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশকে কাজে লাগানো যেতে পারে।
প্রথম আলো:

ছাড়া-ধরার জন্য তদবির আসে?

সালেহউদ্দিন আহমেদ: এটা ছেড়ে দিন, ওটা ছেড়ে দিন, এই করুন, সেই করুন—এ রকম প্রচুর তদবির আসে। তবে আমরা দেখেশুনেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। যেটা করছি, ব্যক্তিগত হিসাব জব্দ করলেও প্রতিষ্ঠানেরগুলো করছি না।

প্রবৃদ্ধি মানে কয়েকটা শিল্প হবে, তা হবে না। প্রবৃদ্ধির সুফল যেন সবাই পান, সেই লক্ষ্য সামনে রেখে বাজেট করতে যাচ্ছি। এ বাজেট হবে জনগণের জীবন-জীবিকা উন্নত করার বাজেট। এ বাজেট হবে বাস্তবসম্মত, কল্যাণমুখী ও সমতাভিত্তিক।
প্রথম আলো:

বাংলাদেশ ব্যাংক কি ঠিকঠাক চলছে?

সালেহউদ্দিন আহমেদ: আমি মনে করি, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর খুবই সিরিয়াস। মুদ্রানীতি ও বৈদেশিক বিনিময় হার নিয়ে গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল্যবোধ অনেক নেতিবাচক হয়ে গিয়েছিল। ওখানে ছিল নেতৃত্বের অভাব। ধীরে ধীরে আস্থা ফিরে আসছে। এখন অবশ্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা একটু ভয় পাচ্ছেন। আগের ব্যর্থতার কারণে কেউ ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। কারণ, কিছু ঘটলে তো তাঁদের ধরা হবে। এসব কারণে কাজের গতি শ্লথ হয়ে গেছে। আমি বলব, তাঁরা সৎ সাহস নিয়ে চলতে পারেন।

প্রথম আলো:

আর্থিক খাতে যেসব সংস্কার কমিশন করা হয়েছে, সেগুলোর সুপারিশ বাজেটে কতটা প্রতিফলিত হবে?

সালেহউদ্দিন আহমেদ: আর্থিক হিসাব কিন্তু এখন নেতিবাচক নয়। আর আইএমএফের অর্থ পাওয়ার আগেই রিজার্ভ ভালো। সুপারিশগুলোকে যত দূর সম্ভব কাজে লাগানো হবে।

প্রথম আলো:

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আসার কোনো বাস্তবতা আছে কি?

সালেহউদ্দিন আহমেদ: এটার একটা প্রক্রিয়া আছে, যা চলছে। কিছু চিহ্নিত করা হয়েছে। কারও হিসাব জব্দ হয়েছে, কারও সম্পত্তি নিলামে উঠছে। দেশের বাইরে যা গেছে, তা বের করা একটু কঠিন। কেম্যান আইল্যান্ডের মতো জায়গায়ও গেছে, যেখানে কোনো কর দিতে হয় না।

প্রথম আলো:

আগামী অর্থবছর থেকে কি জমির নিবন্ধন মাশুলের ভিত্তি বাজারমূল্য হবে, যা বর্তমানে মৌজা মূল্যের ভিত্তিতে নেওয়া হয়?

সালেহউদ্দিন আহমেদ: এটা নিয়ে আমরা কিছু করার চেষ্টা করছি। কিছুটা বাজারভিত্তিক করা যায় কি না। এখনো ঠিক করিনি। ঢাকার গুলশানে একটা ফ্ল্যাট যে দামে নিবন্ধিত হয়, যিনি কেনেন তাঁকেই মাশুল দিতে হয়। ৩ কোটি টাকার ফ্ল্যাট হয়তো নিবন্ধিত হয় ৬০ লাখ টাকায়।

প্রথম আলো:

সরকারি পদ্ধতিতেই তো তাহলে কালোটাকা উৎপাদিত হচ্ছে দেশে!

সালেহউদ্দিন আহমেদ: হ্যাঁ। অনেক সৎ লোক বিনা কারণে কালোটাকার মালিক বনে যাচ্ছেন। আপাতত গ্রামপর্যায়ে এ চিন্তা করছি না। পৌরসভা বা বিভাগীয় শহরে চিন্তা করছি। এবার হয়তো পারব না। ভূমিসচিবকে প্রধান করে এ ব্যাপারে একটা কমিটি করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার তাঁরা একটা বৈঠক করেছেন। হঠাৎ এ বাজেটে কিছু করা হবে না। ঢালাওভাবে করলে আবার অবিচার করা হবে।

প্রথম আলো:

পুঁজিবাজার তো অনেকটা মুমূর্ষু পর্যায়ে চলে গেছে। এ বাজার নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?

সালেহউদ্দিন আহমেদ: এই বাজারের প্রধান নিয়ন্ত্রক খুব শক্ত। তাঁর পদত্যাগ চান অনেকে। তিনি আবার সমঝোতা করেন না। গত ১৫ বছরে পুঁজিবাজারে যত অনিয়ম হয়েছে, ব্যাংক খাতের তুলনায় কম নয়। এই বাজারে ফ্লোর প্রাইস দিয়ে রাখা হয়েছিল। বিশ্বের কোন দেশে তা আছে? আমরা দেখেছি যে গাজীপুরের ঠিকানায় যে কোম্পানি, তাতে গরু চরে। অথচ ১০০ টাকার শেয়ার ৬০০ টাকা হয়ে গেছে। বড় কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) কেন আসছে না? আইপিওতে আসা মানে হলো, আপনার লাভ–ক্ষতির তথ্য প্রকাশ করতে হবে। নিরীক্ষা লাগবে। বার্ষিক সভায় সব ধরা পড়বে। সুকুক বন্ডের নামে আইসিবি থেকে তিন হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেলেন সালমান এফ রহমান। সমবায় অধিদপ্তরের আবুল খায়ের হিরু নামের একজন আছেন, তিনিও তো অনেক টাকা বানিয়েছেন। আমার মতে, শেয়ারবাজার স্বল্প সময়ের বিনিয়োগের জায়গা না। বিশ্বের কোনো পুঁজিবাজারে মাসে মাসে মুনাফা পাওয়া যায় না। এখানে বিনিয়োগ হতে হবে দীর্ঘ মেয়াদে।

অনেক সৎ লোক বিনা কারণে কালোটাকার মালিক বনে যাচ্ছেন। আপাতত গ্রামপর্যায়ে এ চিন্তা করছি না। পৌরসভা বা বিভাগীয় শহরে চিন্তা করছি। এবার হয়তো পারব না। ভূমিসচিবকে প্রধান করে এ ব্যাপারে একটা কমিটি করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার তাঁরা একটা বৈঠক করেছেন। হঠাৎ এ বাজেটে কিছু করা হবে না। ঢালাওভাবে করলে আবার অবিচার করা হবে।
প্রথম আলো:

আগামী বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ কমানোর কথা শোনা যাচ্ছে।

সালেহউদ্দিন আহমেদ: জিডিপির তুলনায় কমবে। তবে কিছু কিছু ভাতা বাড়বে। এখন তো আমাদের টাকা দিতে হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের। তাঁদের পেনশন বন্ধ ছিল এত দিন। আপনি যদি কোরিয়া বা থাইল্যান্ডের সঙ্গে তুলনা করেন, এ খাতে আমরা তাদের ধারেকাছেও নেই।

প্রথম আলো:

ভারত যে ১৭ মে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি কিছু পণ্য আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করল?

সালেহউদ্দিন আহমেদ: বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এটা নিয়ে মূল্যায়ন করছে। ভারতের সঙ্গে এ নিয়ে আমরা ঝগড়াঝাঁটি করব না; বরং আলাপ-আলোচনা করব, দর-কষাকষি করব।

প্রথম আলো:

যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠানো প্রবাসী আয়ে ৫ শতাংশ হারে করারোপ করা হবে। এটি বাংলাদেশের জন্য কি গুরুতর উদ্বেগের কারণ হবে না?

সালেহউদ্দিন আহমেদ: কী আর করব। আমরা একটা স্টাডি করতে পারি। তবে যুক্তরাষ্ট্রে যাঁরা থাকেন, তাঁরা কিন্তু দরিদ্র নন। অন্তত তাঁরা মধ্যপ্রাচ্যে থাকা ব্যক্তিদের মতো নন। এমনিতে ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা আছে। দেখি, এখন কী করা যায়। চট করেই বাড়াতে-কমাতে পারব না।

প্রথম আলো:

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক নিয়ে শেষ পর্যন্ত আমরা কী করছি?

সালেহউদ্দিন আহমেদ: ১০০ পণ্যে শুল্ক কমানোর একটা চিন্তা করছি। এমনিতেও শুল্ক হার কমিয়ে আনতেই হবে, যা আন্তর্জাতিক চর্চা।

প্রথম আলো:

এনবিআর ভাগের অধ্যাদেশ বাস্তবায়ন নিয়ে আপনার চূড়ান্ত অবস্থান কী? এখনো তো কর্মবিরতি চলছে।

সালেহউদ্দিন আহমেদ: দুটি বিভাগ করে যেটা করা হয়েছে, এটাই আন্তর্জাতিক চর্চা। নীতি যিনি করবেন, তিনি আদায় করবেন না; কিন্তু এটা তাঁদের পছন্দ হচ্ছে না। তাঁরা সচিব হতে চান দুটি বিভাগ থেকেই। বিশ্বের কোনো দেশেই কিন্তু এ রকম হয় না। তাঁদের বলেছি, রাজস্ব খাতের লোকেরাই অগ্রাধিকার পাবেন; কিন্তু তাঁরা চান অগ্রাধিকার নয়; বরং কর বিভাগ থেকেই নির্দিষ্ট করে দিতে হবে।

প্রথম আলো:

অধ্যাদেশ বাস্তবায়ন করতে গেলে কি আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস আইন সংশোধন করতে হবে না?

সালেহউদ্দিন আহমেদ: সংশোধন করতে হবে। এ জন্যই তো ছয় মাস সময়ের কথা বলেছি। এখনই তো কার্যকর হচ্ছে না। ফলে তাঁদের এত চিন্তা করার কী আছে? জনবল কাঠামো বদলাতে হবে। এনবিআরের লোকবল কমবে না; বরং বাড়বে। আর নীতি বিভাগে হয়তো ১০০ জনের মতো নিয়োজিত থাকবেন। জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা হয়তো তরুণ কর্মকর্তাদের বুঝিয়েছেন…তাঁদের তো অনেক ব্যাপারস্যাপার আছে।

প্রথম আলো:

একই যুক্তিতে তো নিরীক্ষা ও হিসাব বিভাগ আলাদা করার দরকার ছিল। সম্প্রতি একটা অধ্যাদেশ পাস হয়েছে, তাতে তা উপেক্ষিত থেকেছে।

সালেহউদ্দিন আহমেদ: হ্যাঁ, এটা সত্য হলে ভালো হতো; কিন্তু এখন চট করে এত দিকে যেতে চাইনি।

প্রথম আলো:

বাজেট দিয়ে শেষ করি। আগামী বাজেট কী ধরনের বাজেট হবে?

সালেহউদ্দিন আহমেদ: এটি হবে সমতাভিত্তিক ও কল্যাণকামী বাজেট। আগে যে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল, তার সুবিধা সমাজের সব মানুষ পাননি। এখন যে প্রবৃদ্ধি হবে, তার সুবিধা সমাজের সব পর্যায়ে পড়বে। প্রবৃদ্ধি মানে কয়েকটা শিল্প হবে, তা হবে না। প্রবৃদ্ধির সুফল যেন সবাই পান, সেই লক্ষ্য সামনে রেখে বাজেট করতে যাচ্ছি। এ বাজেট হবে জনগণের জীবন-জীবিকা উন্নত করার বাজেট। এ বাজেট হবে বাস্তবসম্মত, কল্যাণমুখী ও সমতাভিত্তিক।

প্রথম আলো:

সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

সালেহউদ্দিন আহমেদ: প্রথম আলোকেও ধন্যবাদ।