বিশ্বব্যাংক বা আইএমএফের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা সব সময় বুদ্ধিমানের কাজ নয়: ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ

ব্যাংকিং অ্যালমানাক গ্রন্থের পঞ্চম সংস্করণের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ (বাঁ থেকে তৃতীয়) ও সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদসহ (বাঁ থেকে দ্বিতীয়) অনুষ্ঠানের আমন্ত্রিত অতিথিরা। আজ শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবেছবি: বিজ্ঞপ্তি

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, ‘ব্যাংক খাতের সংস্কারে বাংলাদেশ ব্যাংকের পথনকশা নতুন কিছু নয়। বরং পথনকশা বাস্তবায়নের ব্যর্থতায় এ খাতকে দুর্বল করেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে ব্যাংকিং খাতের দুটি সংস্কার কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। তাই এ বিষয় সম্পর্কে আমি অবগত। প্রভাবশালী গোষ্ঠী সংস্কারের উদ্যোগগুলোকে ব্যাংকিং আইনে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করে।’

বাংলাদেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যভিত্তিক গবেষণাগ্রন্থ ব্যাংকিং অ্যালমানাক গ্রন্থের পঞ্চম সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। আজ শনিবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি ছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতায় সাপ্তাহিক শিক্ষাবিচিত্রার গবেষণা সেলের উদ্যোগে গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। বইটির পঞ্চম সংস্করণের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও ব্যাংকিং অ্যালমানাক-এর সম্পাদনা পরিষদের চেয়ারম্যান সালেহউদ্দিন আহমেদ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, ‘সংস্কার কার্যক্রমের বাস্তবায়ন কঠিন হবে, যদি আমরা আগের উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ব্যর্থতা কী ছিল, তা না জানতে পারি।’ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ মনে করেন, বিশ্বব্যাংক বা আইএমএফের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা সব সময় বুদ্ধিমানের কাজ নয়, কারণ বাংলাদেশের বাস্তবতা অন্যান্য দেশের চেয়ে ভিন্ন। তিনি বলেন, আমানতের সুদের হারের ওপর সর্বোচ্চ সীমা আরোপ করতে হবে। তা না হলে দুর্বল ব্যাংকগুলো আমানত পাবে না। তাতে তাদের ব্যবসা ঝুঁকিতে পড়বে। ব্যাংকিং খাত অর্থনীতির প্রাণ। কিন্তু এ খাতের ব্যর্থতা আমাদের সবারই জানা।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ব্যাংকিং অ্যালমানাক-এ উপস্থাপিত তথ্যের আলোকে একজন ব্যাংকার, গবেষক, বিনিয়োগকারী, আমানতকারী জানতে পারবেন কোন ব্যাংকটির অবস্থা কেমন। সেই আলোকে তিনি ব্যাংকের সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন। কোন ব্যাংকে কী সুবিধা আছে, শেয়ার কোন ব্যাংকের কেমন, আমানত কোথায় রাখলে বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে, এসব তথ্যও একসঙ্গে এই বইয়ে পাওয়া যাবে। সে হিসেবে বইটি তথ্য সহায়কের ভূমিকা রাখবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা প্রতি সংস্করণেই চেষ্টা করছি নতুন ও জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট তথ্য সংযোজন করতে। কিন্তু আমাদেরও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ ধরনের প্রকাশনার জন্য যে পরিমাণ তহবিল প্রয়োজন, সে সহায়তা পাওয়া যায় না। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি, সর্বশেষ তথ্য দিয়ে প্রকাশনাটির ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে। ব্যাংকগুলো আমাদের যে তথ্য দিচ্ছে আমরা সেগুলোই সন্নিবেশ করে উপস্থাপন করছি। এতে অন্তত দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাতের তুলনামূলক একটা চিত্র তুলে ধরা সম্ভব হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে এফএএস ফাইন্যান্সের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, ব্যাংকিং অ্যালমানাক দেশের আর্থিক খাতের একটি তথ্যসমৃদ্ধ প্রকাশনা। এবারের সংস্করণে ডিজিটাল ব্যাংকিং বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যা স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার সহায়ক। ব্যাংক ও আর্থিক খাত নিয়ে গবেষণার জন্য ব্যাংকিং অ্যালমানাক গুরুত্বপূর্ণ দলিল।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন এক্সিম ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ মো. আব্দুল বারি, ব্যাংকিং অ্যালমানাক-এর প্রকল্প পরিচালক আবদার রহমান, অর্থনীতিবিদ এম এস সিদ্দিকী। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন গ্রন্থটির নির্বাহী সম্পাদক মোহাম্মদ এমদাদুল হক।