এসএমই খাত/ উদ্যোক্তাদের জন্য পরিকল্পনামন্ত্রীর তিন চাওয়া

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান
ফাইল ছবি

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ট্রেড লাইসেন্স করা ও বারবার তা নবায়ন করার প্রক্রিয়া ব্যবসায়ীদের জন্য একধরনের যন্ত্রণার বিষয়। ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রেও তুলনামূলক কম অগ্রাধিকার পান ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের (এসএমই) উদ্যোক্তারা। তাই এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য তিনটি ক্ষেত্রে সুবিধা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) খাতের অর্থায়ন নিয়ে রোববার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব পরামর্শ দেন তিনি। জাতীয় এসএমই মেলার অংশ হিসাবে এসএমই ফাউন্ডেশন সেমিনারটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থ বিভাগের সামষ্টিক অর্থনীতি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) এমডি মো. জাহিদুল হক প্রমুখ।  

সেমিনারে এম এ মান্নান বলেন, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য গ্যারান্টার বা জামিনদার জোগাড় করা একধরনের যন্ত্রণার। কারণ, ব্যাংকগুলো জামিনদার ছাড়া ঋণ দিতে চায় না। ফলে নন–ব্যাংকিং মাধ্যমগুলো থেকে চড়া সুদে ঋণ নিতে বাধ্য হন উদ্যোক্তারা।
এ জন্য এসএমই খাতে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে গ্যারান্টির এই ঝুঁকি সরকারের নেওয়া উচিত বলে মনে করেন পরিকল্পনামন্ত্রী, যাতে খাতটিকে এগিয়ে নেওয়া যায়। তিনি বলেন, সরকার স্টার্টআপের মতো খাতে গ্যারান্টি ছাড়া ঝুঁকি নিয়ে এত টাকা বিনিয়োগ করতে পারল, সেখানে ছোট ছোট উদ্যোগগুলোকে সরকার কেন গ্যারান্টি দেবে না।

বাইরে গেলে রোদে, শীতে, ঠান্ডায় বাচ্চা মরে যেতে পারে। তাই বলে কি বাচ্চাদের মায়েরা বাইরে পাঠাবে না? গ্যারান্টির এই ঝুঁকি সরকারেরই নেওয়া উচিত।

এই আধুনিক ব্যাংকিংয়ের যুগেও চড়া সুদের মহাজনেরা কীভাবে টিকে আছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন পরিকল্পনামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমার গ্রামে আমি মাসে দুই–তিনবার যাই।

সেখানে দেখি সুদওয়ালারা আরামেই আছে। কারণ, তারা দ্রুত ও কম ঝামেলায় ঋণ দিতে পারে। মনে করেন, ‘একজন ঋণগ্রহীতা মহাজনের বাড়িতে গেল, উঠানে বসে একটু পান খেল, গল্প করল। এরপর টাকা নিয়ে চলে এল। আর ব্যাংকিং ব্যবস্থায় গেলে বেশ কয়েকটা ফরম পূরণ করতে হয়। ফরমে এত কিছু লেখা থাকে পড়তে গেলে মাথা খারাপ হয়। এসব বিষয়কে গ্রামের মানুষ জটিল মনে করে। তারা ভয় পায়। কীভাবে এসব জটিলতা কমানো যায়, তা নিয়ে আমাদের কাজ করা উচিত।’

এ ছাড়া দেশে যেসব অপ্রয়োজনীয় নিয়মকানুন আছে, সেগুলো বাতিল করার পরামর্শ দিয়েছেন এম এ মান্নান। তিনি বলেন, দেশে প্রতিটা ক্ষেত্রে এমন অনেক রকম আইনকানুন আছে, যেগুলো কোনো কাজে আসে না। এসব নিয়মকানুনকে পর্যায়ক্রমে বাদ দেওয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রী এসব নিয়মকানুন হালনাগাদ করার চেষ্টা করছেন। তবে এ নিয়ে সবার কাজ করা প্রয়োজন। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় এই দুটো প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে কাজ করে এসব জঙ্গল পরিষ্কার করতে পারে।

অনুষ্ঠানে এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘উত্তরবঙ্গকে পিছিয়ে পড়া বা বঞ্চিত অঞ্চল বলা হয়। এ ধারণা থেকেই দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন নীতি নির্ধারণ করা হচ্ছে। অথচ আমাদের কাছে যেসব তথ্য–উপাত্ত আছে তাতে দেখা যায়, বর্তমানে বরিশাল ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ ও উদ্যোক্তারা অন্যান্য অঞ্চল থেকে পিছিয়ে আছেন।’ তাই নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে হালনাগাদ তথ্য যাচাই করে নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।