প্রবাসী আয়, বেতন–ভাতায় কর আরোপের পক্ষে পিআরআই

গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পিআরআই মনে করে, বাড়তি রাজস্ব আদায় সম্ভব হলে কর-জিডিপি অনুপাত ১০.৪ শতাংশে উন্নীত হবে।

করপ্রতীকী ছবি

আগামী অর্থবছরে অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করতে সরকারকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়াসহ কর ছাড়ের পরিমাণ কমাতে হবে বলে মনে করে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)। প্রতিষ্ঠানটি করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর পাশাপাশি মূল বেতনের বাইরে বাড়িভাড়াসহ বিভিন্ন ভাতার ওপর কর বসাতে আইএমএফ যে পরামর্শ দিয়েছে, তার সঙ্গে একমত পোষণ করেছে।

গতকাল বুধবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে পিআরআই নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, আইএমএফের পরামর্শ ঠিকই আছে। একজন করদাতার আয়ের প্রায় ৫০ শতাংশের মতো এই ধরনের ভাতা থেকে আসে, যা করের বাইরে থেকে যাচ্ছে।

সূত্রগুলো বলছে, আগামী অর্থবছর থেকে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকায় উন্নীত করার পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ।

নতুন সরকার এসেছে। এখন রাজস্ব খাত সংস্কারের সময়। বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধার সময় এখনই। সেই লক্ষণ কি দেখছি? সামনে বাজেট আসছে, এই বাজেটে সংস্কারের প্রতিফলন থাকা উচিত।
আহসান এইচ মনসুর, নির্বাহী পরিচালক, পিআরআই

আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, ‘শুনছি, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের মুনাফার ওপর করারোপের প্রস্তাব করেছে আইএমএফ। পৃথিবীর সব দেশেই এই ধরনের আয়ের ওপর কর বসে। ক্যাপিটাল গেইনের ওপর কর ছাড় দিয়ে কি আমরা শেয়ারবাজার চাঙা করতে পেরেছি? প্রবাসী আয়েও করারোপের কথা বলছে আইএমএফ। আমিও এর পক্ষে, তবে প্রবাসী আয়ে করারোপের বিষয়টি রাজনৈতিক অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। প্রবাসী আয়ে করারোপ হলে সমাজে এর ভিন্ন প্রভাব আছে।’

রাজস্ব নীতি নিয়ে বনানীর নিজস্ব কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে পিআরআই। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রাজস্ব আদায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা বাড়লে দেশে কর-জিডিপি অনুপাত ২ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়বে। এতে কর-জিডিপি অনুপাত ১০ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত হবে, তবে বাড়তি এই কর আদায়ে সরকারকে রাজস্ব খাত সংস্কার করতে হবে। এই বাড়তি রাজস্ব বিভিন্ন খাতে সরকার বিনিয়োগ করলে তা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি দশমিক ২ শতাংশ বাড়াবে।

পৃথিবীর যেসব দেশে কর-জিডিপির অনুপাত বেশ কম, বাংলাদেশ তার একটি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) যে চলমান ঋণ কর্মসূচি রয়েছে, তার অন্যতম শর্ত জিডিপির দশমিক ৫ শতাংশ বাড়তি রাজস্ব আদায় করতে হবে। এই শর্ত বাস্তবায়িত হলে অতিরিক্ত ৬৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান জাইদী সাত্তার ও পরিচালক আবদুর রাজ্জাক। পিআরআই পরিচালক বজলুল হক খন্দকার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

পিআরআই বলেছে, রাজস্ব আদায় বাড়লে সরকারি খরচও বাড়ানো সম্ভব হবে, যা দারিদ্র্য বিমোচনের গতি বাড়াবে। এতে প্রতিবছর অতিরিক্ত দশমিক ৯ শতাংশ হারে দারিদ্র্য বিমোচন হবে, তবে বাড়তি রাজস্ব আদায় সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছে পিআরআই। অটোমেশনের কথাও বলেছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া মূল্য সংযোজন কর আইনের মূল দর্শন অনুসারে ভ্যাট হার ১৫ শতাংশে রাখার পক্ষে মত দিয়েছে পিআরআই।

পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, নতুন সরকার এসেছে। এখন রাজস্ব খাত সংস্কারের সময়। বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধার সময় এখনই। সেই লক্ষণ কি দেখছি? সামনে বাজেট আসছে, এই বাজেটে সংস্কারের প্রতিফলন থাকা উচিত।

জাইদী সাত্তার বলেন, বাংলাদেশে উচ্চ শুল্ক আরোপের সংস্কৃতি আছে। উচ্চ শুল্ক হার বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করছে।

বজলুল হক খন্দকার বলেন, বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণি বাড়ছে। তাই সহজেই করের জাল বৃদ্ধি করা সম্ভব। শহরের বাইরেও কর দেওয়ার সামর্থ্যবান মানুষ আছেন।

আইএমএফের পরামর্শ প্রসঙ্গে পিআরআই

সম্প্রতি আইএমএফের একটি দল বাংলাদেশ ঘুরে গেছে। কোথায় কীভাবে কর ছাড় কমাতে হবে, সে বিষয়ে দলটি পরামর্শ দিয়েছে। কিছু পদক্ষেপ আগামী বাজেটে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ।

আহসান এইচ মনসুরের মতে, শুধু কর ছাড় কমিয়েই আগামী অর্থবছরের বাড়তি ৩০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। কর ছাড় না কমিয়ে কর-জিডিপির অনুপাত ১৫ শতাংশ উন্নীত করা সম্ভব নয়। ব্রিটিশ আমলের ব্যবস্থাপনা দিয়ে তা হবে না। এ জন্য রাজস্ব খাতের মৌলিক সংস্কার লাগবে।

ঋণ পরিশোধের চাপ

পিআরআইয়ের মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ঋণ পরিশোধ, ডলার–সংকট, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি—এসব বিষয় দেশের অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করছে। এসব ক্ষেত্রে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।