আবারও মন্দার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে

করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় বিশ্বজুড়ে লকডাউন করা হয়। এর ফলে ২০২০ সালে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের জিডিপি সংকুচিত হয়। এরপর বিশ্ব অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল। কিন্তু এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে রাশিয়া ইউক্রেনে যুদ্ধ চাপিয়ে দিলে বিশ্ব অর্থনীতি আবারও হোঁচট খায়। এ বছরের শেষ প্রান্তিকে বিশ্বের বিভিন্ন বড় দেশ মন্দার কবলে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। বিশেষ করে রাশিয়ার তেল ও গ্যাস বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্ববাজারে এ দুটি পণ্যের দাম অনেকটাই বেড়ে যায়। ২০২০ সালে করোনার শুরুতে জ্বালানি তেলের দাম যেখানে প্রতি ব্যারেল মাইনাস ৩৭ ডলারে নেমে এসেছিল, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সেই জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে প্রতি ব্যারেল ১৪০ ডলার পর্যন্ত ওঠে। ফলে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশেই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ে। বেড়ে যায় উৎপাদন খরচ। শুধু বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ নয়, ইউরোপ–আমেরিকার মানুষও জ্বালানির মূল্য পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে। খবর বিবিসি ও সিএনবিসির

মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে। একদিকে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির চাপ; অন্যদিকে অর্থনীতির প্রসার ও মন্দা কাটিয়ে ওঠা—চ্যালেঞ্জটা এখন এ রকম। আপাতত মূল্যস্ফীতির রাশ টেনে ধরতে বিশ্বের প্রায় সব কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার হ্রাস করেছে। এতে অর্থের প্রবাহ কমে যাচ্ছে। আর আশঙ্কা করা হচ্ছে, চলতি বছর বিশ্বের বেশ কটি বড় অর্থনীতি মন্দার কবলে পড়বে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান নোমুরার প্রধান অর্থনীতিবিদ রব সুব্বারমন সিএনবিসিকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র শিগগির দীর্ঘমেয়াদি মন্দার কবলে পড়তে যাচ্ছে। ২০২২ সালের শেষ প্রান্তিক থেকে টানা পাঁচ প্রান্তিকে এই মন্দা অনুভূত হবে, যদিও এবারের মন্দা অতটা গভীর হবে না বলেই তাঁর মত। যুক্তরাজ্যও বছরের শেষ প্রান্তিকে মন্দার কবলে পড়বে বলে আশঙ্কা করছে সে দেশের অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকস।

এদিকে করোনার প্রথম বছর লকডাউনের কারণে বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত বছরের শেষ দিক থেকে সরবরাহব্যবস্থা আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করেছিল। কিন্তু রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সরবরাহব্যবস্থা আবারও হোঁচট খায়, যার জের এখনো চলছে।

বিশ্লেষকেরা বলেন, এবারের মূল্যস্ফীতি চাহিদাজনিত নয়, সরবরাহ ব্যবস্থাজনিত। ফলে নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে এই মূল্যস্ফীতির চাপ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না, বরং এতে মানুষের হাতে অর্থের প্রবাহ কমবে। তখন ক্রয়ক্ষমতা কমে যাবে এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার গতি হারাবে।