আবাসন খাতে সংকটের শঙ্কা ব্যবসায়ীদের 

রাজধানীর উত্তরায় একটি আবাসন প্রকল্প
ছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর বাড্ডা এলাকার পাঁচ কাঠার প্লট। গত আগস্টেও এখানে ছয়তলা পর্যন্ত আবাসিক ভবন নির্মাণের সুযোগ ছিল। এখন একই প্লটে চারতলা ভবন নির্মাণ করতে হবে। আবার গাজীপুর ও কেরানীগঞ্জের যেসব এলাকায় দুইতলার বেশি ভবন নির্মাণের সুযোগ ছিল না, সেখানে এখন পাঁচতলা পর্যন্ত আবাসিক ভবন নির্মাণ করা যাবে।

ঢাকা মহানগরের জন্য নতুন বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) পাস হওয়ায় ভবনের উচ্চতাসংক্রান্ত এমন পরিবর্তন এসেছে। নগর–পরিকল্পনাবিদদের মতে, নতুন ড্যাপের মাধ্যমে ঢাকা শহরের জনঘনত্ব নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে এবং ঢাকার বাসযোগ্যতা বাড়বে। তবে আবাসন ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন ড্যাপের কারণে ঢাকায় আবাসনসংকট সৃষ্টি হবে, ফ্ল্যাটের দাম আরও বাড়বে এবং আবাসন খাতে একধরনের শূন্যতা সৃষ্টি হবে।

গত ২৩ আগস্ট নতুন ড্যাপের অনুমোদন দেয় সরকার। এটি প্রণয়ন করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। ড্যাপটি এ সংস্থার আওতাধীন ১ হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকার জন্য প্রযোজ্য।

ড্যাপ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কেরানীগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর, কালীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের ১৮২ বর্গকিলোমিটার এলাকায় আগের চেয়ে বেশি উচ্চতার আবাসিক ভবন নির্মাণ করা যাবে। এসব এলাকা আগে গ্রামীণ বসতি হিসেবে চিহ্নিত ছিল। এ কারণে এখানে দুইতলার বেশি ভবন নির্মাণের সুযোগ ছিল না। বাকি অংশে (মেট্রোরেলের স্টেশনের আশপাশের এলাকা ছাড়া) ব্যক্তিগত ও তুলনামূলকভাবে ছোট আকৃতির প্লটে আবাসিক ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে উচ্চতা আগের চেয়ে কমানো হয়েছে। 

এটি করা হয়েছে ফ্লোর এরিয়া রেশিওর (এফএআর) মান কমানোর মাধ্যমে। এফএআর হচ্ছে একটি প্লটে কত আয়তন বা উচ্চতার ভবন নির্মাণ করা যাবে, তা নির্ধারণ করার সূচক। এফএআরের মান কমবেশির সঙ্গে ভবনের আয়তন বা উচ্চতা কমে বা বাড়ে। সাধারণত, একটি এলাকার পরিবহন সক্ষমতা, অবকাঠামো ও নাগরিক সুবিধা বিশ্লেষণ করে এফএআরের মান নির্ধারণ করা হয়।

এ ব্যাপারে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং–বিষয়ক এফবিসিসিআই স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, এফএআরের মান কামানোর প্রভাব শুধু ঢাকার আবাসন খাতেই নয়, এর সঙ্গে জড়িত অন্যান্য শিল্পের ওপরও পড়বে। নতুন ড্যাপে গুলশান, ধানমন্ডি ও বনানী এলাকার সঙ্গে অন্যান্য এলাকার বৈষম্য করা হয়েছে। এতে আবাসন ব্যবসায়ীরা গুলশান ও ধানমন্ডির মতো এলাকাতেই ভবন নির্মাণে আগ্রহী হবেন, অন্য এলাকায় নির্মাণ করবেন না। তাতে আবাসন খাতে একধরনের শূন্যতা সৃষ্টি হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, এফএআরের মান নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনের জন্য রাজউক চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমরা সাক্ষাৎ করেছি। একাধিকবার তাঁকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। রাজউক চেয়ারম্যানের কাছ থেকে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস পাওয়া গেছে।

তবে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি মোহাম্মদ ফজলে রেজা বলেন, এফএআরের মান কমার কারণে আবাসন খাতে শূন্যতা সৃষ্টি হবে, এটি ঠিক নয়। যদিও ব্যবসায়ীদের কতটা লাভ বা ক্ষতি হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে সার্বিকভাবে এফএআরের মান কমার কারণে ঢাকা শহরের বাসযোগ্যতা কিছুটা হলেও বাড়বে, কারণ ঢাকা শহরের বেশির ভাগ ওয়ার্ডেই ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি মানুষ বাস করে। এফএআর পরিবর্তনের ফলে জনঘনত্ব নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে, স্বতঃস্ফূর্ত ও পরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা এলাকার মধ্যে ভারসাম্য তৈরি হবে। 

বিআইপির তথ্য অনুযায়ী, বাড্ডা এলাকার আয়তন ৬০৯ একর। সেখানে বিদ্যমান নাগরিক সুযোগ-সুবিধা অনুযায়ী, একরপ্রতি সর্বোচ্চ ১৩২ জন মানুষ বসবাসের কথা। কিন্তু বাস করে প্রায় ২০০ জন। 

ড্যাপের তথ্য বলছে, বাড্ডা এলাকায় খেলাধুলার জন্য কোনো মাঠ বা পার্ক নেই। রাস্তাঘাটও তুলনামূলকভাবে সরু। নগর–পরিকল্পনাবিদেরা বলছেন, এমন এলাকায় আরও উঁচু ভবন নির্মাণের সুযোগ দিলে বিদ্যমান নাগরিক সেবায় আরও চাপ বাড়বে। এ কারণে এই এলাকার বাসযোগ্যতা কমবে।

ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক ও রাজউকের নগর–পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ঢাকার বাসযোগ্যতা বাড়ানো এবং সার্বিকভাবে সাধারণ মানুষের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই নতুন ড্যাপটি করা হয়েছে। তারপরও জনস্বার্থে কোনো সংশোধনীর প্রয়োজন হলে প্রতি তিন বছর অন্তর সেটি করার সুযোগও ড্যাপে রাখা হয়েছে।