ঈদের আগেই ঋণ পাবেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা

করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণের জন্য আবেদন শুরু করেছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারা। আজ সোমবার থেকে পাঁচটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন নেওয়া শুরু হয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশন (এসএমই) এবং ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে তাঁরা এক সপ্তাহের মধ্যে ঋণ বিতরণ শুরু করবেন। সে ক্ষেত্রে পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগেই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা প্রণোদনার ঋণ পেতে যাচ্ছেন। একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ১ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন।

এসএমই ফাউন্ডেশনের তথ্য বলছে, ব্র্যাক ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক এবং আইডিএলসি ফাইন্যান্স—এই পাঁচ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারবেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা। এসব প্রতিষ্ঠানে গতকাল রোববার একজন করে ফোকাল পয়েন্ট ঠিক করা হয়েছে, যাঁরা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের আবেদন সমন্বয় করবেন। মোট ঋণের ৫০ শতাংশের বেশি নারী-উদ্যোক্তাদের দেওয়ার কথা জানিয়েছেন এসএমই ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা।

জানতে চাইলে ব্র্যাক ব্যাংকের নারী উদ্যোক্তা সেলের কর্মকর্তা সাবিহা সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, সকাল থেকেই অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ফোন দিচ্ছেন। ঋণের জন্য আবেদন করতে কী কী কাগজপত্র লাগবে, কীভাবে আবেদন করতে হবে, এসব জানতে চাইছেন।

সাবিহা সুলতানা বলেন, ‘যে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার ব্যবসা যেখানে, তার আশপাশে আমাদের ব্যাংকের শাখায় যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। ব্যাংকের দেওয়া শর্ত পূরণ হচ্ছে কি না, না হলে আরও কী কী কাগজপত্র লাগবে, এসব দেখে যত দ্রুত সম্ভব ঋণ বিতরণ শুরু হবে।’

দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা এবং পল্লি এলাকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সরকারের দ্বিতীয় দফার প্রণোদনার আওতায় মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ৩০০ কোটি টাকা ঋণ দেবে এসএমই ফাউন্ডেশন। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরে ১০০ কোটি টাকা এবং আগামী অর্থবছরে ২০০ কোটি টাকা বিতরণ করা হবে। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই ১১টি ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন। আপাতত পাঁচটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঋণ বিতরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

জানতে চাইলে এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মাসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঋণ বিতরণের আগে আমরা সব নারী উদ্যোক্তা অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা ব্যাংকে ফোকাল পয়েন্ট ঠিক করে দিয়েছি। উদ্যোক্তার যদি ব্যাংকে আবেদন নিয়ে কোনো সমস্যা হয়, আমরা তাৎক্ষণিক সেটি সমাধানের চেষ্টা করব। আশা করছি, ঈদুল ফিতরের আগেই ঋণ বিতরণ শুরু হবে।’

জানা গেছে, প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ ছাড়ের বিষয়ে গতকাল অনলাইনে নারী-উদ্যোক্তা সংশ্লিষ্ট অ্যাসোসিয়েশন ও চেম্বার নেতৃবৃন্দ এবং দেশের শীর্ষ নারী-উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন। সেই সভায় এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় এসএমই ফাউন্ডেশনের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের ২৫ শতাংশ নারী উদ্যোক্তার মধ্যে বিতরণ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু ফাউন্ডেশন আশা করে, নারী উদ্যোক্তাদের ৫০ শতাংশ ঋণ বিতরণ করা সম্ভব হবে।

এসএমই ফাউন্ডেশন বলছে, প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় উদ্যোক্তারা ৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাবেন। গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের পরিমাণ হবে সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ২৪টি সমান মাসিক কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করা যাবে।

জানা গেছে, ব্র্যাক ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, সাউথইস্ট ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, আইডিএলসি ফাইন্যান্স এবং লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স থেকে উদ্যোক্তারা ঋণ গ্রহণ করতে পারবেন। এসএমই ফাউন্ডেশনের সঙ্গে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেশের বিভিন্ন ক্লাস্টারের সদস্য উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি সারা দেশের নারী উদ্যোক্তা এবং এসএমই ফাউন্ডেশন, বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সংগঠন ও অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সুপারিশকৃত এসএমই উপখাত, ট্রেডবডি ও গ্রুপের তালিকাভুক্ত উদ্যোক্তা এবং সিএমএসএমই খাতের জন্য সরকারঘোষিত প্রথম দফার প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ না পাওয়া পল্লি ও প্রান্তিক পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের ঋণ দেবে।