এনজিও

বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থায় (এনজিও) কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের প্রকৃত বেতন-ভাতা প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছে এনজিওবিষয়ক ব্যুরো। বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ও আবাসিক পরিচালকের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি নাগরিকেরা তাঁদের প্রকৃত বেতন–ভাতার প্রকৃত তথ্য গোপন করছেন। এতে রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। তাই বিদেশি এনজিওকর্মীদের বেতন-ভাতা খাত থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে তাঁদের নিয়োগপত্রে বাস্তবতার সঙ্গে মিল রেখে প্রকৃত বেতন–ভাতা উল্লেখ করতে হবে।

১৭ আগস্ট এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর পরিচালক তপন কুমার বিশ্বাস স্বাক্ষরিত চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, এনজিওতে নিয়োগ পাওয়া বিদেশি কর্মীদের বেতন তাঁদের কর্মস্থলে যোগদানের পর প্রথম মাস থেকেই ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে বেতন বিবরণী প্রতিবছর এনজিও ব্যুরোতে জমা দিতে হবে।

বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের নিজ দেশে অর্থ নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে গত বছর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) একটি গবেষণা করেছে। তাতে দেখা গেছে, বিভিন্ন এনজিওতে কর্মরত বিদেশি নাগরিকেরা প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে ২৬ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছেন।

টিআইবির মতে, বাংলাদেশে বৈধ ও অবৈধভাবে এখন বিদেশি নাগরিকের সংখ্যা আড়াই লাখ। যদিও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) হিসাবে, এই সংখ্যা মাত্র ১১ হাজার।

টিআইবি তাদের গবেষণায় দেখিয়েছে, বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি নাগরিকেরা তাঁদের প্রকৃত বেতন-ভাতা গোপন করছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁদের সহযোগিতা করছে নিয়োগকারী সংস্থা। এ কারণে এনজিওতে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের সত্যিকারের বেতনের চিত্র উঠে আসে না। যার ফলে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

বিভিন্ন এনজিওর আবাসিক পরিচালক ও নির্বাহী পরিচালকদের কাছে পাঠানো চিঠিতে এনজিও ব্যুরো বলেছে, ব্যাংকের মাধ্যমে বেতন-ভাতা গ্রহণ, বেতন বিবরণী নিয়মিত এনজিও ব্যুরোতে জমা দেওয়া ও আয়কর পরিশোধ ছাড়া কোনো বিদেশি এনজিওকর্মীর নিয়োগের মেয়াদ বাড়ানো যাবে না।

জানতে চাইলে এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর পরিচালক তপন কুমার বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘এনজিওতে কর্মরত বিদেশি নাগরিকেরা তাঁদের প্রকৃত বেতন উল্লেখ করছেন না, এ ধরনের অভিযোগ আমাদের কাছে আসছে। বেতন-ভাতা গোপন করতে তাঁদের সহযোগিতা করছে নিয়োগকারী সংস্থা। এ জন্য আমরা সব এনজিওকে চিঠি দিয়েছি, যাতে বাস্তবতার সঙ্গে মিল রেখে বেতন–ভাতার সঠিক তথ্য সরবরাহ করে।’

এনজিও ব্যুরোর কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁদের কাছে এমনও খবর আছে অনেক বিদেশি নাগরিক ব্যাংক হিসাব করেছেন আবার কর শনাক্তকরণ নম্বরও (টিআইএন) আছেন। কিন্তু তাঁরা ব্যাংকের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন করেন না। অবৈধ পথে নিজ দেশে (বিদেশে) টাকা পাঠান। তাই এনজিওগুলোকে বার্তা দেওয়া হয়েছে, এখন থেকে যেন এসব বিষয়ে কোনোভাবেই অবহেলা করা না হয়। বেতন–ভাতার প্রকৃত তথ্য যথাযথভাবে প্রকাশ করতে হবে।

আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী, বিদেশি নাগরিকদের আয়ের ওপর করহার ৩০ শতাংশ। কোনো বিদেশি নাগরিক ১০০ টাকা আয় করলে তাঁকে ৩০ টাকা কর দিতে হবে।
বিদেশি নাগরিকেরা যথাসময়ে যথাযথভাবে কর না দিলে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান ও ওই বিদেশি নাগরিককে শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। আয়কর আইনে ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ৫ লাখ বা প্রদেয় করের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা করার বিধান রয়েছে। এ ছাড়া তিন বছরের জেলের বিধানও আছে।

টিআইবি তাদের গবেষণায় উল্লেখ করেছে, বিদেশি নাগরিকদের নিয়োগ ও চাকরি করার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার অভাব ও নীতিমালা বাস্তবায়নের নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ না থাকার কারণে এমন ঘটনা ঘটছে।

এমন বাস্তবতায় এনজিওদের কাছে পাঠানো চিঠিতে এনজিওবিষয়ক ব্যুরো জানিয়েছে, কোনো এনজিওতে কর্মরত বিদেশি নাগরিক নীতিমালা পরিপন্থী কাজে লিপ্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে ওই বিদেশি কর্মীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা এনজিও ব্যুরোকে জানাতে হবে।