কাঁচামালে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার চান ব্যবসায়ীরা

আমদানিনির্ভর কাঠের ওপর ভর করে দেশের আসবাব খাত গড়ে উঠেছে। গত চার দশকে বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডও দাঁড়িয়ে গেছে। তারা এখন আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের আসবাব তৈরি করে অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানিও করছে।

পাশাপাশি দেশে নন-ব্র্যান্ডের আসবাবেরও বড় বাজার রয়েছে। তবে ব্র্যান্ড বা নন-ব্যান্ড কোনো প্রতিষ্ঠানই দুই বছরের করোনার ধাক্কা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এরই মধ্যে বৈশ্বিক বাজারে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি ও দেশে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে গেছে দেশের আসবাব খাত।

এ রকম কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে আগামী ২০২২–২৩ অর্থবছরের বাজেটে কাঠ ব্যতীত স্ক্রু, তালা ও কাপড়সহ ১৩ ধরনের কাঁচামাল আমদানির ওপর থেকে সম্পূরক শুল্ক (সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি–এসডি) ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (রেগুলেটরি ডিউটি–আরডি) প্রত্যাহার চায় বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্প মালিক সমিতি। তাদের যুক্তি হলো, আসবাবশিল্পের কাঁচামালগুলো দেশে উৎপাদিত হয় না।

বিশ্ববাজারে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি ও ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার না করা হলে অনেক ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে।
সেলিম এইচ রহমান চেয়ারম্যান, আসবাব শিল্প মালিক সমিতি

তাই কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে এসডি ও আরডি থাকায় দেশে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পায়। ফলে আসবাবের দাম বেড়ে যায়। এতে দেশের আসবাব খাত আন্তর্জাতিক বাজারের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। একদিকে আসবাব আমদানি বেড়ে যায়, অন্যদিকে প্রবল প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে আসবাব রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো।

আসবাব শিল্প মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী দেশে এখন আসবাবের সাত হাজার কোটি টাকার বাজার রয়েছে। আর এই খাতে ২৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। আমদানিবিকল্প শিল্প হিসেবে এই খাত বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করছে। কিন্তু করোনার কারণে খাতটি প্রকট সমস্যায় পড়েছে। সব মিলিয়ে আসবাব খাতের টিকে থাকা কঠিন হয়ে গেছে।

জানতে চাইলে আসবাব শিল্প মালিক সমিতির চেয়ারম্যান সেলিম এইচ রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দেশের আসবাব খাতে প্রচুর ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ব্র্যান্ডের আসবাবও তৈরি করছে কিছু প্রতিষ্ঠান। সে জন্য বিদেশ থেকে খুবই কম পরিমাণে আসবাব আমদানি হয়।

তবে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে পণ্য তৈরির জন্য কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববাজারে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি ও ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার না করা হলে অনেক ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। তাতে বহু লোকের কর্মসংস্থান ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

আসবাব রপ্তানিকারক সমিতি আসবাব রপ্তানির জন্য আগামী অর্থবছরের বাজেটে কাঁচামাল আমদানিতে বন্ড সুবিধা চেয়েছে। তারা বলছে, আসবাবে বিনিয়োগের পরিমাণ বেশি হওয়ায় উৎপাদিত পণ্যের আংশিক অভ্যন্তরীণ বাজারে ও আংশিক বিদেশে বিপণন করতে হচ্ছে।

শতভাগ রপ্তানিমুখী না হওয়ায় এখনো বন্ড সুবিধা মিলছে না। সেজন্য গত বছর আংশিক রপ্তানিমুখী শিল্পে শতভাগ ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে বন্ডের সুবিধা প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছিল। ভিয়েতনামেও এমন ব্যবস্থা রয়েছে।