কালোটাকার সুযোগ সীমিত হচ্ছে

আগামী ৩ জুন বাজেট দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। নতুন বাজেটে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ কমিয়ে আনতে পারেন তিনি।

জাতীয় বাজেট
প্রথম আলো

আগামী অর্থবছরেও কালোটাকা সাদা করার সুযোগ থাকছে। তবে এবারের মতো ঢালাওভাবে এ সুযোগ থাকবে না। কিছু সুযোগ প্রত্যাহার করা হতে পারে। যেমন, শেয়ারবাজারে ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকার সুযোগ না–ও থাকতে পারে। আবার জমি কিনে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিতে চায় না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্র কিনে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বাদ যেতে পারে। বিনা প্রশ্নে কালোটাকা সাদা করার এই সুযোগগুলোর মেয়াদ আগামী ৩০ জুন শেষ হয়ে যাচ্ছে।

এনবিআরের দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। গত বাজেটে ঢালাওভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ায় বেশ সমালোচনা হয়েছে। আবার গত এক বছরে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে কিংবা জমি কিনে খুব বেশি করদাতা কালোটাকা সাদা করেননি।

চলতি ২০২০–২১ অর্থবছরের ৩০ জুন পর্যন্ত শেয়ারবাজার; ফ্ল্যাট-জমি; সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংকে রাখা টাকা কিংবা নগদ টাকা সাদা করার সুযোগ আছে। এনবিআরের সূত্রগুলো বলছে, আগামী অর্থবছরও কালোটাকা সাদা করার কিছু সুযোগ অব্যাহত থাকছে। সে ক্ষেত্রে এলাকা-আয়তনভেদে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিয়ে কালোটাকায় ফ্ল্যাট বা ভবন কেনার সুযোগ থাকতে পারে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে শিল্প খাতে পাঁচ বছরের জন্য কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে ১০ শতাংশ কর দিয়ে বিনিয়োগ করার সেই সুযোগটিও অব্যাহত রাখা হচ্ছে। ১০ শতাংশ কর দিয়ে নগদ বা ব্যাংকে রাখা টাকাও সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখার বিষয়টিও সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ তেমন একটা নেননি করদাতারা। গত জুলাই থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত মাত্র ৩৪১ জন শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে এ সুযোগ নিয়েছেন। জমি কিনেও খুব একটা কালোটাকা সাদা হয়নি। আর সঞ্চয়পত্র কিনে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ চায় না নীতিনির্ধারকেরা। কারণ, এমনিতেই ১০ শতাংশ কর দিয়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সঞ্চয়পত্র কেনার পর সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরকে প্রতিবছর গড়ে ১০ শতাংশের বেশি সুদ গুনতে হয়। এক বছর ধরেই সঞ্চয়পত্র বিক্রি তুলনামূলক বেড়েছে। নগদ টাকা সাদা করায় বেশি আগ্রহ করদাতাদের। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে সব মিলিয়ে ১০ হাজার ৩৪ জন করদাতা কালোটাকা সাদা করেছেন।

■ শেয়ারবাজার, জমিতে কালোটাকার সুযোগ থাকছে না। ■ করপোরেট করে সুখবর থাকতে পারে। ■ ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা অপরিবর্তিত থাকবে। ■ আগাম ভ্যাটে ছাড় মিলতে পারে।

কালোটাকা সাদা করার সুযোগ সীমিত করলেও আগামী বাজেটে ব্যবসায়ীদের জন্য সুখবর আসতে পারে। করোনার এ সময় ব্যবসা-বাণিজ্যে টিকে থাকতে করপোরেট করে ছাড় দিতে পারে এনবিআর। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির করপোরেট কর হার এখন সাড়ে ৩২ শতাংশ। এটি কমিয়ে ৩০ শতাংশ করা হতে পারে। সম্প্রতি কোম্পানি আইন সংশোধন করে এক ব্যক্তির নামে কোম্পানি খোলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের কোম্পানির করহার ২৫ শতাংশ করার নতুন প্রস্তাব আসতে পারে। এ ছাড়া শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে করহার কিছুটা কমানো হতে পারে।

এ বিষয়ে ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও এ কে খান গ্রুপের পরিচালক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করতে এবং বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে করপোরেট করহার কমানোর বিকল্প নেই। ভিয়েতনামসহ আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর করপোরেট করহার আমাদের চেয়ে কম। বাংলাদেশে এমনিতেই করহার বেশি। এ ছাড়া চূড়ান্ত কর দায় হিসেবে উৎসে কর কেটে নেওয়ার ফলে কিছু খাতে করপোরেট করহার ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়।’

বর্তমানে মোবাইল ফোন কোম্পানি এবং সিগারেট ও তামাকজাতীয় পণ্য উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের করহার ৪৫ শতাংশ; শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক সাড়ে ৩৭ শতাংশ এবং তালিকাভুক্ত নয় এমন ব্যাংককে ৪০ শতাংশ কর দিতে হয়। তুলনামূলক কম করহার এমন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেশি কর দেয় এমন প্রতিষ্ঠানও যাতে কিছুটা কর ছাড় পায়, সে জন্য কর-সুবিধা বাড়ানো হতে পারে। প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, তৃতীয় লিঙ্গ, রূপান্তরিত নারী-পুরুষসহ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী থেকে কর্মী নিয়োগ দেওয়া হলে করপোরেট করে ৫ শতাংশ পর্যন্ত কর ছাড় মিলতে পারে। শর্ত থাকতে পারে, প্রতিষ্ঠানের মোট জনবলের নির্ধারিত একটি অংশ (যেমন ৫ শতাংশ) বা ১০০ জনের বেশি এই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী থেকে নিয়োগ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা।

করোনার সময়ে প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই কমবেশি বিপদে আছে। পণ্য বা সেবা বিক্রির জন্য একটি প্রতিষ্ঠান তার আয়ের দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রচার-প্রসার খরচ করতে পারে। এই সীমা দ্বিগুণ করা হতে পারে বলে জানা গেছে। তবে তিন কোটি টাকার বেশি লেনদেন হলে লাভ-ক্ষতিনির্বিশেষ দশমিক ৫ শতাংশ কর দিতেই হয়। এই কর উঠিয়ে দেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের দাবি সত্ত্বেও এনবিআর এখন পর্যন্ত অনড়।

ভ্যাটে ছাড়

আমদানি পর্যায়ে আগাম ভ্যাটে ছাড় আসছে। উৎপাদনশীল খাতের কাঁচামাল, মধ্যবর্তী পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এখন ৪ শতাংশ আগাম কর (আগাম ভ্যাট) দিতে হয়। এটি কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হতে পারে। এ ছাড়া ভ্যাট রিটার্ন না দিলে বর্তমানে ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং আরোপিত ভ্যাটের ওপর সরল সুদে ২ শতাংশ সুদ আরোপের বিধান আছে। এ সুদ কমিয়ে ১ শতাংশ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত সীমা বাড়ছে না

ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা না বাড়ানোর পক্ষেই মত দিয়েছে এনবিআর। গত বছর এই সীমা আড়াই লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে তিন লাখ টাকা করা হয়েছে। এনবিআরের যুক্তি হলো করোনার কারণে গত এক বছরে এমনিতেই বহু করদাতার আয় কমে গেছে। অনেকেই করমুক্ত সীমার নিচে চলে আসতে পারে। তাই আপাতত করমুক্ত আয়সীমা না বাড়ানোর পক্ষেই অবস্থান এনবিআরের।

আগামী অর্থবছরে এনবিআরকে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্য দেওয়া হচ্ছে, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা বেশি।