গুলশানে ২৫০ জনে একজন গরিব

ঢাকার গুলশানছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর গুলশান হলো দেশের সবচেয়ে বেশি ধনী এলাকা। ওই এলাকায় প্রতি ২৫০ জনে একজন গরিব মানুষ বসবাস করেন। বাকি ২৪৯ জনই দারিদ্র্যসীমার ওপরে বাস করেন। গুলশান থানা এলাকায় দারিদ্র্যহার দশমিক ৪ শতাংশ। যা সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন।

রাজধানীর অন্যতম অভিজাত এলাকা গুলশান। বড় ব্যবসায়ী, আমলা, মন্ত্রী, বড় চাকুরেসহ অভিজাত শ্রেণির লোকজনেরা গুলশান এলাকায় বাস করেন। দেশের সবচেয়ে দামি বিপণিবিতানগুলো এই এলাকায় অবস্থিত।

দেশের সবচেয়ে ধনি ও গরিব এলাকার দারিদ্র্যহারে বিশাল পার্থক্য। এটি দেশের উচ্চ বৈষম্যের সংকেত দিচ্ছে। সাধারণত যেখানে কাজের সুযোগ বেশি, সেখানেই মানুষ বেশি। ওই সব এলাকায় দারিদ্র্যহার দ্রুত কমে।
এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা

বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) দারিদ্র্য মানচিত্রে এই চিত্র পাওয়া গেছে। এত দিন জেলা পর্যায় পর্যন্ত দারিদ্র্য হার কত, তা পাওয়া যেত। এখন উপজেলা বা থানা পর্যায়ে দারিদ্র্যহার জানা যাচ্ছে। ২০১৬ সালের খানা আয় ও ব্যয় জরিপের ওপর ভিত্তি করে এই দারিদ্র্য চিত্র তৈরি করেছে বিবিএস।

বিবিএস সূত্রে জানা গেছে, দারিদ্র্য কম এমন এলাকা বিবেচনায় শীর্ষ পাঁচে থাকা সব এলাকা ঢাকা জেলায়। গুলশান ছাড়া এই তালিকার অন্য চারটি এলাকা হলো—নবাবগঞ্জ (দারিদ্র্যহার দশমিক ৭ শতাংশ), ধামরাই (দশমিক ৯ শতাংশ), কলাবাগান (১ দশমিক ১ শতাংশ) ও কেরানীগঞ্জ (১ দশমিক ২ শতাংশ)। ঢাকা জেলার সার্বিক দারিদ্র্যহার ১০ শতাংশ। নারায়ণগঞ্জে সবচেয়ে কম দারিদ্র্য, হার ২ দশমিক ৬ শতাংশ।

এবার দেখা যাক, দেশের কোথায় দারিদ্র্যহার সবচেয়ে বেশি। কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলা হলো দেশের সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকা। ওই উপজেলায় প্রতি ১০০ জনে প্রায় ৮০ জনই গরিব। দারিদ্র্যহার ৭৯ দশমিক ৮ শতাংশ, যা সারা দেশে সর্বোচ্চ।

দারিদ্র্যহারে দ্বিতীয় স্থানে আছে বান্দরবানের থানচি উপজেলা। ওই উপজেলায় দারিদ্র্যহার ৭৭ দশমিক ৮ শতাংশ। আর তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে আছে যথাক্রমে কুড়িগ্রামের রৌমারী (দারিদ্র্য হার ৭৬ দশমিক ৪ শতাংশ), চিলমারী (সাড়ে ৭৩ শতাংশ) ও নাগেশ্বরী (৭২ দশমিক ৭ শতাংশ)। সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্যপ্রবণ পাঁচটি উপজেলার চারটিই কুড়িগ্রাম জেলা। অবশ্য জেলা হিসেবে সবচেয়ে দরিদ্র জেলা কুড়িগ্রাম। কুড়িগ্রামে দারিদ্র্যহার ৭০ দশমিক ৮ শতাংশ।

এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দেশের সবচেয়ে ধনি ও গরিব এলাকার দারিদ্র্যহারে বিশাল পার্থক্য। এটি দেশের উচ্চ বৈষম্যের সংকেত দিচ্ছে। সাধারণত যেখানে কাজের সুযোগ বেশি, সেখানেই মানুষ বেশি। ওই সব এলাকায় দারিদ্র্যহার দ্রুত কমে। তিনি মনে করেন, প্রবৃদ্ধির সুষম বণ্টন হচ্ছে না। বিবিএসের এই দারিদ্র্যের চিত্র এটিও প্রকাশ করে। উন্নয়ন কিছু অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত হয়ে গেলে প্রবৃদ্ধির সুফল মেলে না।