টিকে থাকতে পাঁচ সুবিধা দাবি হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিকারক সমিতির

কাঁচামালের সংকটের কারণে মাত্র ১৫ শতাংশ উৎপাদন সক্ষমতায় হিমায়িত খাদ্য প্রক্রিয়াজাত কারখানাগুলো চলছে।

মো. আমিন উল্লাহ

করোনার প্রথম ধাক্কায় বেশ বেকায়দায় পড়ে গিয়েছিলেন হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিকারকেরা। চিংড়ির দাম ওই সময় ১ থেকে ৩ ডলার পর্যন্ত কমে যায়। এর ফলে ৪৬০ কোটি টাকা সমমূল্যের ২৯০টি ক্রয়াদেশ বাতিল হয়। পরবর্তী সময়ে সমুদ্রগামী জাহাজে কনটেইনারের ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে বিপদে পড়েন খাতটির উদ্যোক্তারা।

এ অবস্থায় খাতটিতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে কৃষিপণ্যের মতো হিমায়িত চিংড়িতে ১০ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা চান রপ্তানিকারকেরা। একই সঙ্গে তাঁদের দাবি, হিমায়িত মাছ রপ্তানিতে নগদ সহায়তা ৫ থেকে ১০ শতাংশে উন্নীত করা।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে বাস্তবায়নের জন্য এই দাবি জানিয়েছে হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিকারক সমিতি (বিএফএফইএ)। তারা বলছে, করোনার সংকটময় মুহূর্তে বিশ্ববাজারে দেশের চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ রপ্তানির খাতটিকে অস্তিত্বের লড়াইয়ে টিকিয়ে রাখতে নগদ সহায়তা বাড়ানো দরকার।

হিমায়িত চিংড়ি ও মাছ রপ্তানির ওপর উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে দশমিক ২৫ শতাংশ করারও দাবি করেছে বিএফএফইএ। এ ক্ষেত্রে তাদের যুক্তি, কাঁচামালের সংকটের কারণে মাত্র ১৫ শতাংশ উৎপাদন সক্ষমতায় হিমায়িত খাদ্য প্রক্রিয়াজাত কারখানাগুলো চলছে। সে কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানি বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়ছেন রপ্তানিকারকেরা। অন্যদিকে ডলারের বিপরীতে ইউরো, রুবল ও ইয়েনের মূল্যস্ফীতি ঘটায় হিমায়িত চিংড়ি ও মাছের রপ্তানিমূল্য কমে গেছে। তাই কম দামে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন রপ্তানিকারকেরা।

ভেনামি চিংড়ির পরীক্ষামূলক চাষ শুরু হয়েছে। সেটি ব্যাপক হারে উৎপাদন না হওয়া পর্যন্ত সরকারকে উৎসে কর হ্রাস, প্রণোদনা বৃদ্ধির মতো সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।
মো. আমিন উল্লাহ সভাপতি বিএফএফইএ

হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তার ওপর অগ্রিম আয়কর আদায় বন্ধের দাবিও করেছে বিএফএফইএ। সংগঠনটি বলছে, নগদ সহায়তা কখনোই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় নয়। বরং নগদ সহায়তা উৎপাদন খরচের একটি অংশ, যা রপ্তানি পণ্যকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সাহায্য করে। বর্তমানে হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিতে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তার ওপর ১০ শতাংশ অগ্রিম আয়কর রয়েছে।

শতভাগ রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানার করপোরেট কর ১২ শতাংশ। তবে পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানার ক্ষেত্রে সেটি ১০ শতাংশ। পোশাক খাতের মতোই করপোরেট করে ছাড় দাবি করেছে বিএফএফইএ। এ ছাড়া করোনাকালে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ঋণের অর্থের অর্ধেক অনুদান ও বাকিটা সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে তিন বছরে পরিশোধের সুযোগ চান চিংড়ি ও মাছ রপ্তানিকারকেরা।

জানতে চাইলে বিএফএফইএর সভাপতি মো. আমিন উল্লাহ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারা বিশ্বে যে পরিমাণ চিংড়ি রপ্তানি হয় তার ৭৭ শতাংশ ভেনামি জাতের। বাগদা চিংড়ির চেয়ে ১০ গুণ উৎপাদন হয় ভেনামি। অথচ ১৫ বছর ধরে উচ্চফলনশীল এই জাতের চিংড়ি চাষের জন্য আমরা সরকারের হেন কোনো দপ্তর নেই, যেখানে যাইনি। কাজ হয়নি। ফলে ৭০-৮০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে টিকে আছে ২০টি। তাই সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে।’

আমিন উল্লাহ বলেন, ভেনামি চিংড়ির পরীক্ষামূলক চাষ শুরু হয়েছে। সেটি ব্যাপক হারে উৎপাদন না হওয়া পর্যন্ত সরকারকে উৎসে কর
হ্রাস, প্রণোদনা বৃদ্ধির মতো সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। না হলে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি খাত টিকে থাকতে পারবে না।