দেশি পেঁয়াজের মজুত ভালো, আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ
দেশে পেঁয়াজের ভান্ডার হিসেবে পরিচিত পাবনার সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলার কৃষকদের ঘরে আজ বুধবার পর্যন্ত কমপক্ষে ৯২ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ মজুত আছে। এই তথ্য জানিয়ে দুই উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়া নিয়ে ভোক্তাদের অযথা আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। একই কথা বললেন সুজানগর ও সাঁথিয়ার অন্তত ১০ জন আড়তদার।
কৃষি কর্মকর্তা, আড়তদার ও কৃষকেরা পৃথক আলোচনায় প্রথম আলোকে বলেন, আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে সুজানগর, সাঁথিয়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আগাম জাতের পেঁয়াজ উঠতে শুরু করবে। সেই পর্যন্ত, অর্থাৎ আগামী তিন মাস কৃষকের ঘরে থাকা পেঁয়াজেই দেশের চাহিদার বড় অংশ পূরণ হয়ে যাওয়ার কথা
এদিকে বুধবার সকালে সাঁথিয়া উপজেলার অন্যতম মোকাম করমজা হাটে গিয়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ পাইকারিতে ৬৫ থেকে ৬৭ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দাম কমতে থাকে। দুপুরে একই হাটে প্রতিকেজি ৬০ থেকে ৬২ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা যায়।
স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, উপজেলা হিসেবে দেশে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদিত হয় সুজানগরে। পরের অবস্থানেই রয়েছে সাঁথিয়া উপজেলা। এবার সুজানগরে ১৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে ২ লাখ ৪৭ হাজার ২৪৮ টন। আর সাঁথিয়া উপজেলায় আবাদ হয়েছে ১৬ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে। তাতে ১ লাখ ৯৫ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে।
সাঁথিয়া ও সুজানগর উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দুই উপজেলার কৃষকেরা বেশি দাম পাওয়ার আশায় এখনো ঘরে পেঁয়াজ রেখে দিয়েছেন। তাঁদের ঘরে এখন মজুত পেঁয়াজের পরিমাণ ৯২ হাজার ২৪৮ টন। এর মধ্যে সুজানগর উপজেলায় ৫২ হাজার ২৪৮ হাজার টন ও সাঁথিয়া উপজেলায় ৪০ হাজার টন মজুত রয়েছে
গতকাল মঙ্গলবার ও বুধবার সরেজমিন বিভিন্ন হাটে গিয়ে দেখা গেছে, অন্যান্য দিনের তুলনায় পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। দাম বাড়ার খবরে কৃষকেরা হাটে পেঁয়াজ আনতে শুরু করেছেন। এ ছাড়া হাটে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার অনেক ব্যবসায়ীর উপস্থিতি চোখে পড়েছে। ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, এক সপ্তাহ আগে দুই উপজেলার বিভিন্ন হাটে পাইকারিতে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজিদরে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। ভারতে দাম বাড়ার খবরের পর থেকেই পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে।
সাঁথিয়ার করমজা হাটের মুন্নাফ ট্রেডার্সের মালিক মুন্নাফ প্রামাণিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাগরে হিসাবে পাবনায় কৃষকের ঘরে এখনো ৩৫ থেকে ৪০ ভাগ পেঁয়াজ মজুত আছে। আগাম পেঁয়াজ হাটে আসার আগপর্যন্ত এই পেঁয়াজে দেশের চাহিদার অনেকটাই পূরণ হবি বলে আমি মনে করি। আর অন্যান্যবার ব্যবসায়ীরা প্রচুর পেঁয়াজ মজুত রাখলেও এবার কৃষকেরাই পেঁয়াজ মজুত রেখেছেন বেশি।’
সাঁথিয়ার সোমাসনারী গ্রামের কৃষক আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘দেড় বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ কইর্যা এবার ৬০ মণ পেঁয়াজ পাইছিল্যাম। এর অর্ধেক পেঁয়াজ এখনো ঘরে আছে।’
করমজা হাটের আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা বলেন, এখান থেকে মঙ্গলবার হাটবারে প্রায় ৪০০ টন ও বুধবার আরও প্রায় ৬০ টন পেঁয়াজ ঢাকায় গেছে। এ ছাড়া সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলার আরও কয়েকটি হাট থেকেও প্রচুর পেঁয়াজ ঢাকায় গেছে।
এদিকে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দুই উপজেলার মধ্যে সাঁথিয়া উপজেলায় ইতিমধ্যেই আগাম জাতের পেঁয়াজের আবাদ শুরু হয়েছে। উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, এই উপজেলায় ইতিমধ্যে ১৫ হেক্টর জমিতে আগাম বা মূলকাটা জাতের পেঁয়াজ লাগানো হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই দুই উপজেলার বেশির ভাগ জমিতে আগাম জাতের পেঁয়াজের আবাদ শেষ হবে।
সাঁথিয়ার করমজা মল্লিকপাড়া গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, আগাম জাতের পেঁয়াজ আবাদের জন্য জমি ঠিক করছেন নান্নু মল্লিক। তিনি বলেন, এই এলাকার সব জমিই বেশ উঁচু হওয়ায় আগাম জাতের পেঁয়াজের আবাদ করা যাচ্ছে। তবে বৃষ্টির আশঙ্কায় কেউ কেউ আবার এক থেকে দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করতে চান।
সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা যথাক্রমে রাফিউল ইসলাম ও সঞ্জীব কুমার গোস্বামীর সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, কৃষকের ঘরে এখনো প্রচুর পেঁয়াজ আছে। নতুন পেঁয়াজ বাজারে না আসা পর্যন্ত আগামী দুই-তিন মাস এই পেঁয়াজে দেশের চাহিদার বড় অংশ পূরণ করা সম্ভব হবে। তাই পেঁয়াজ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।