নিবন্ধন দিতে সরকার পুরোপুরি প্রস্তুত নয়

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিজিটাল বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন দিতে ‘মাইগভ ডট বিডি’ নামক অ্যাপস চালু করেছে।

সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে অ্যাপস চালু করলেও ই-কমার্স এবং এফ-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে ডিজিটাল বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন (ডিবিআইডি) দিতে এখনো পুরোপুরি সক্ষম নয়। প্রস্তুতি ছাড়াই দুই সপ্তাহ আগে ডিবিআইডি সেবা চালু করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ডিবিআইডি দেওয়ার দায়িত্ব পেয়েছে এই মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর (ডিজেএসসি)। কিন্তু কাজটি কীভাবে করতে হবে, তা ডিজেএসসিকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। ফলে পুরো প্রক্রিয়া এত দিন অকার্যকর অবস্থায় পড়ে ছিল। সংগত কারণেই সেবাটি নিতে পারছিল না কেউ।

অবশ্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জট খুলতে যাচ্ছে। জট খোলার অংশ হিসেবেই ডিজেএসসির দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের গতকাল রোববার প্রশিক্ষণ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসপায়ার টু ইনোভেটের (এটুআই) একটি দল। ই-কমার্স ও এফ-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডিবিআইডি সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে সচিবালয়ে ৬ ফেব্রুয়ারি মাইগভ ডট বিডি নামের একটি অ্যাপসের উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। ওই দিন জানানো হয়েছিল, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ফেসবুক ব্যবহার করে যাঁরা ব্যবসা করবেন, তাঁদেরও ডিবিআইডি নিতে হবে। ডিবিআইডি নম্বরই ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন হিসেবে কাজ করবে।

সবাইকে বুঝতে হবে যে সেবাটি একবারেই নতুন। একটি সফটওয়্যার চালু হলে বাস্তবায়ন পর্যায়ে শুরুর দিকে একটু সমস্যা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এ ক্ষেত্রেও সেটাই হয়ে থাকতে পারে।
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান এ এইচ এম সফিকুজ্জামান গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সবাইকে বুঝতে হবে যে সেবাটি একবারেই নতুন। একটি সফটওয়্যার চালু হলে বাস্তবায়ন পর্যায়ে শুরুর দিকে একটু সমস্যা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এ ক্ষেত্রেও সেটাই হয়ে থাকতে পারে। তবে এ-টু-আই যেহেতু এরই মধ্যে প্রশিক্ষণ দিয়েছে, ফলে আর কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইক্যাব) সূত্রে জানা গেছে, তাদের তালিকাভুক্ত ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১ হাজার ৬০৯। আর এফ-কমার্সের সংখ্যা ২ লাখের বেশি। নিবন্ধন না থাকায় ফেসবুককেন্দ্রিক ছোট উদ্যোক্তারা ব্যাংক হিসাব খুলতে পারেন না। তবে ভবিষ্যতে ব্যাংক হিসাব তো বটেই, ব্যাংকঋণ পাওয়ার শর্ত হিসেবেও কাজ করবে ডিবিআইডি। গতকাল এ-টু-আই, ই-ক্যাব ও ডিজেএসসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সদ্য চালু হওয়া মাইগভ ডট বিডিতে গিয়ে আগ্রহীরা নিজেরাই নিবন্ধন করতে পারবেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের তালিকা ধরে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলা হয়। এর মধ্যে টেকনোবাজার বিডির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন কাউসার জানান, তিনি আর ব্যবসা করবেন না, তাই আবেদনই করেননি।

কিনলে ডট কমের সিইও মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক মৃধা জানান, তিনি আবেদন করেননি, তবে করবেন। ফরম পূরণে জটিলতা হচ্ছে বলে শুনেছেন।

মাইগভ ডট বিডিতে গিয়ে নিবন্ধন করার আবেদন তো করা যাবেই, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েব পেজে এবং ডিজেএসসির অভ্যন্তরীণ ই-সেবাসমূহ কলামের নিচেও রয়েছে ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধনের লিংক। এতে ক্লিক করলে সেটি নিয়ে যাবে ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধনের জন্য আবেদন নামে একটি পেজে। এখানে নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তালিকা এবং আবেদন ফরম পূরণের নিয়মাবলি উল্লেখ করা হয়েছে।

ডিজেএসসির নিবন্ধক শেখ শোয়েবুল আলমের সঙ্গে গতকাল মুঠোফোনে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

নিবন্ধনের সময় একজন উদ্যোক্তাকে বাধ্যতামূলকভাবে নিজের ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত কপি, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের পরিচালকগণ এবং প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) সত্যায়িত কপি দিতে হবে।

নিবন্ধনের সময়সীমা বলা হয়েছে ৩০ দিন। তবে যাঁদের টিআইএন, কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন নম্বর, ট্রেড লাইসেন্স বা ভ্যাট নিবন্ধন নম্বর নেই, তাঁদের নিবন্ধিত হতে সময় লাগবে। যাচাই-বাছাই হয়ে কত দিনে নিবন্ধন সম্পন্ন হবে, সেই নিশ্চয়তা নেই।

মাইগভ ডট বিডি অ্যাপসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এ-টু-আইয়ের ইমপ্লিমেন্টেশন স্পেশালিস্ট মোহাম্মদ সালাউদ্দিন গতকাল বলেন, ডিবিআইডি সেবা দেওয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, আরও দেওয়া হবে। এ বিষয়ে একটি পরিচালনা নির্দেশিকা বা নীতিমালা (এসওপি) হওয়ার পরই পরিপূর্ণ সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।

এদিকে এসওপির একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে এবং সেটি শিগগিরই চূড়ান্ত করা হবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।