পরীক্ষামূলক চাষ আরও এক বছর

গলদা চিংড়ি

দেশে নিষিদ্ধ থাকা বিদেশি ভেনামি জাতের চিংড়ির প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষামূলক চাষ সফল হয়েছে। ইতিমধ্যে এ চিংড়ি মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাইয়ে রপ্তানি করেছে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। এতে তাদের মুনাফাও হয়েছে। তা সত্ত্বেও কৃষকদের জন্য ভেনামি চিংড়ি চাষ বাণিজ্যিকভাবে উন্মুক্ত না করে নতুন দুটি কোম্পানিকে এক বছর পরীক্ষামূলক চাষের অনুমোদন দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। এতে চিংড়িচাষি ও হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিকারকেরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

চিংড়িচাষি ও হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিকারকেরা বলছেন, পাঁচ বছর আগেও দেশের রপ্তানি আয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিল হিমায়িত চিংড়ি খাত। কাঁচামালের অভাব ও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে এই খাতের রপ্তানি কমেছে। খাতটির বার্ষিক রপ্তানি আয় পাঁচ হাজার কোটি টাকা থেকে সর্বশেষ ২০২০-২০২১ অর্থবছরে চার হাজার কোটিতে নেমে গেছে। এ অবস্থায় ভেনামি চিংড়ি চাষের সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু মৎস্য অধিদপ্তর ‘অজ্ঞাত কারণে’ অনুমতি দিচ্ছে না।

এ সম্পর্কে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) খন্দকার মাহবুবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখনো বাণিজ্যিকভাবে চিংড়ি চাষ উন্মুক্ত করার সময় আসেনি। বিদেশি ভেনামি চিংড়িতে রোগবালাই বেশি। যেনতেনভাবে এই চিংড়ি চাষ করতে দেওয়া হবে না। এতে আমাদের নিজস্ব চিংড়ি গলদা-বাগদার ক্ষতি হতে পারে। যাঁরা এটি চাষে আগ্রহী, তাঁদের আবেদন করতে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে ১১টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। অনুমোদন পেয়েছে দুটি প্রতিষ্ঠান।’

গত বছরের ৩১ মার্চ থেকে আধা নিবিড় পদ্ধতিতে বাংলাদেশে ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমোদন দেয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

জানতে চাইলে এম ইউ সি ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শ্যামল দাস বলেন, ‘ভেনামি চিংড়ির প্রথম পরীক্ষামূলক চাষ সফল হয়েছে। এই সফলতার ওপর ভিত্তি করে বাণিজ্যিক চাষ উন্মুক্ত করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’

গত ৯ ডিসেম্বর ভেনামি চিংড়ির বাণিজ্যিক উৎপাদন ও রপ্তানি বৃদ্ধিতে জরুরি ভিত্তিতে করণীয় নির্ধারণে আন্তমন্ত্রণালয় সভা হয়। বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভার কার্যপত্রে বলা হয়েছে, উচ্চ ফলনশীল ভেনামি চিংড়ি আধা নিবিড় পদ্ধতিতে যেখানে প্রতি হেক্টরে উৎপাদন হয় প্রায় ১০ মেট্রিক টন, সেখানে বাগদা চিংড়ি হয় মাত্র দুই মেট্রিক টন। এ জন্য সারা বিশ্বে ভেনামি চিংড়ি জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

ফাহিম সি ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ ইনসেনটিভ শ্রিম্প কালচার অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএসসিএ) সভাপতি এম এ হাসান বলেন, ‘মৎস্য অধিদপ্তর ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু পোনা উৎপাদনের অনুমতি দেয়নি। পোনা উৎপাদনের অনুমোদন না দিলে আমি শুধু চিংড়ি চাষে আগ্রহী নই। কারণ, এখানে বড় অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। বিদেশ থেকে পোনা আমদানি করে চাষ করলে খরচ বাড়বে। এতে কাঙ্ক্ষিত ফল আসবে না, খাতটিও দাঁড়াবে না।’ তিনি পোনা উৎপাদন, চিংড়ি চাষ ও রপ্তানির বিষয়ে সমন্বিত পদক্ষেপ দাবি করেন।

এম এ হাসান অভিযোগ করে বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় হ্যাচারিতে ভেনামি পোনা উৎপাদনের অনুমোদন দিলেও মৎস্য অধিদপ্তর অজ্ঞাত কারণে তা দিচ্ছে না। আসলে মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা চান না যে দেশে ভেনামি চিংড়ি চাষ সফল হোক। কারণ, গলদা ও বাগদা চিংড়ি প্রকল্পের মতো ভেনামি চিংড়িতে বিদেশি অনুদান ও প্রকল্প না থাকায় কর্মকর্তারা এ বিষয়ে আগ্রহী হচ্ছেন না।’

তবে অভিযোগটি অস্বীকার করে মৎস্য অধিদপ্তরের ডিজি খন্দকার মাহবুবুল হক বলেন, এই তথ্য ঠিক নয়। পলিসি অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়। তিনি আরও বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমরা হ্যাচারিতে ভেনামি পোনা উৎপাদনের অনুমোদন দেব না। কারণ, পোনা উৎপাদন হলো, কিন্তু পরে কেউ ভেনামি চাষ করল না। তখন কী হবে? তারপরও আমরা বিষয়টি দেখছি।’