পারলার থেকে ভ্যাট আদায়ে ধস

করোনার কারণে ম্যানিকিউর, পেডিকিউর, ব্রু প্লাক ও চুল কাটার জন্য রূপসচেতন নারী, বিশেষ করে তরুণীদের বিউটি পারলারে যাতায়াত ব্যাপকভাবে কমেছে। সরকারও বিউটি পারলার বন্ধ রাখতে বিভিন্ন সময়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ফলে বিউটি পারলার থেকে ভ্যাট আদায় কমেছে। এই খাত থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আদায় করা হয়।

ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেটে সব মিলিয়ে ২৬৫টি বিউটি পারলার আছে। তাদের কাছ থেকে বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা আদায় হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩০ শতাংশ কম।

করোনার কারণে গত এক বছরে আরও অনেক ব্যবসায় মন্দা চলছে। যেমন মানুষ হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাওয়া যেন ছেড়ে দিয়েছে। আর মিষ্টি খাওয়ার অভ্যাসও কমিয়েছে অনেকে। তাই এসব ব্যবসা থেকে সরকারের রাজস্ব আয় কমেছে।
ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেট হলো মাঠপর্যায়ে দেশের সবচেয়ে বড় ভ্যাট আদায়কারী সংস্থা। এই সংস্থার অধীনে ৬১ হাজার ৩৬২টি ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান আছে, যা সারা দেশের এক-পঞ্চমাংশ।

বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেট ৯ হাজার ১৩২ কোটি টাকার ভ্যাট আদায় করেছে, যা আগেরবারের চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি।
বিধিনিষেধের কারণে মিষ্টির দোকানও দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ভ্যাট আদায়ে (১৫ শতাংশ হারে)। বিদায়ী অর্থবছরে ৭৮৫টি নিবন্ধিত মিষ্টির দোকান থেকে ভ্যাট আদায় হয়েছে ৫ কোটি টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে ৬ কোটি টাকা কম।

হোটেল-রেস্তোরাঁর সেবার ওপর সাড়ে ৭ থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আছে। ঢাকা দক্ষিণ কমিশনারেটে ১ হাজার ৬১৩টি রেস্তোরাঁ ও ১৯১টি হোটেল আছে। বিদায়ী অর্থবছরে এসব হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে সাড়ে ৪৮ কোটি টাকা ভ্যাট পাওয়া গেছে। আগেরবার এর পরিমাণ ছিল ৫৪ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী সমিতির প্রধান উপদেষ্টা খন্দকার রুহুল আমিন বলেন, গত এক বছর ব্যবসা হয়নি বললেই চলে। বছরের বড় একটা সময় রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখতে হয়েছে।

আসবাব, এয়ারলাইনস, টেলিভিশন-ব্যাটারি, মোটর গ্যারেজ—এসব ব্যবসাও খারাপ গেছে।

যারা ভালো করেছে

মূলত উৎপাদন খাত ভালো করেছে। পুরান ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকার ৬৮৪টি প্লাস্টিক কারখানা থেকে ১৬ কোটি টাকা ভ্যাট আদায় হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ২২ শতাংশ। মোটরসাইকেল ব্যবসাও জমজমাট গেছে। ৫টি মোটরসাইকেল সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ভ্যাট আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫২১ শতাংশ। ভ্যাট মিলেছে প্রায় ১৯ কোটি টাকা। একটি ইনজেকশন সিরিঞ্জ বানানোর কারখানা থেকে আগেরবারের চেয়ে প্রায় ৫১ শতাংশ বেশি ভ্যাট মিলেছে।

ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেট পুরান ঢাকার ৮৭টি কেমিক্যাল কারখানা থেকে আগেরবারের চেয়ে দ্বিগুণ ভ্যাট পেয়েছে।

নির্মাণ সংস্থার ব্যবসাও ভালো গেছে। এই খাতের ৮৪টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে গত বছর প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা আদায় হয়েছে। প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৩ শতাংশ। উৎপাদন ও সেবা খাত ছাড়াও স্থানীয় ট্রেড থেকে ভ্যাট আদায় হয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। এই খাতে ৩১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার এস এম হুমায়ন কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনার মধ্যেও আমরা তদারকি বাড়িয়ে রাজস্ব আদায়ে ১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। তবে কিছু কিছু খাত এমনিতে বিপাকে পড়েছে, সেখান থেকে কম রাজস্ব আদায় হয়েছে।’