বাজেট ও নাগরিক প্ল্যাটফর্ম
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিতে হবে
আসন্ন বাজেট নিয়ে জনমানুষের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম।
করোনার ক্ষতি যখন বিশ্ব কাটিয়ে উঠছিল, তখন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে নতুন অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। এই অনিশ্চয়তায় বাংলাদেশও পড়েছে। বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। এমন অবস্থায় পিছিয়ে পড়া মানুষকে নতুন করে বাড়তি সুরক্ষা দিতে হবে। এ জন্য আগামী বাজেট যেন গতানুগতিক সাধারণ বাজেট না হয়, দরকার ব্যতিক্রমী বাজেট।
গতকাল রোববার আগামী বাজেট নিয়ে এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। ‘আসন্ন বাজেট নিয়ে জনমানুষের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা আয়োজন করে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম। অনলাইনে এই আলোচনা সভা হয়। এতে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
বক্তারা আরও বলেন, এবারের বাজেটে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে দিকনির্দেশনা থাকা জরুরি। করোনায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানে কী কী ক্ষতি হয়েছে এবং কীভাবে তা পুষিয়ে নেওয়া যায়, এ ব্যাপারে বাজেটে উদ্যোগ থাকতে হবে। এ ছাড়া আরও বেশি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনা উচিত।
অনুষ্ঠানে বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘আগামী অর্থবছরের জন্য অসাধারণ সময়ে সাধারণ বাজেট যেন না হয়। এবার ব্যতিক্রমী বাজেট চাই। এ জন্য বাজেট ঘোষণার আগেই আগামী বাজেটের নীতিকাঠামো নিয়ে খসড়া প্রকাশ করা উচিত। সেই খসড়ার ওপর সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ যেন মতামত দিতে পারে। একই সঙ্গে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বাজেট কতটা বাস্তবায়িত হলো, তা-ও জনসমক্ষে প্রকাশ করা দরকার।’ তিনি আরও বলেন, আগামী বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নয়, কর্মসংস্থানই প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দাবি
বোগাজান আদর্শ শিক্ষালয়ের প্রধান শিক্ষক সাধন কুমার বলেন, করোনার কারণে শিক্ষকেরা সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন। তাই বাজেটে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দিতে বিশেষ বরাদ্দ রাখা উচিত।
প্রতিবন্ধীদের জন্য কাজ করা বেসরকারি সংস্থা সিএসআইডির নির্বাহী পরিচালক খন্দকার জহুরুল আলম মনে করেন, প্রতিবন্ধীদের জন্য বাজেটে তেমন বরাদ্দ নেই। ভাতা দেওয়া হয় মাসে মাত্র ৭৫০ টাকা। দৈনিক ২৫ টাকা করে বরাদ্দ মেলে, প্রয়োজনের তুলনায় যা অনেক কম। এখন সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু টাকার পরিমাণ বাড়ছে না।
হিজড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস। তিনি মনে করেন, হিজড়াদের জন্য এসএমই ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে; তাহলে তাদের আর রাস্তায় দেখা যাবে না।
উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী লামিয়া আক্তার শিশুদের জন্য আলাদা বাজেট চান। তিনি বলেন, প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে শিশুদের জন্য একজন মনোবিদ নিয়োগ দেওয়া উচিত।
দলিত সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি বিপ্লব চন্দ্র ঋষি বলেন, দলিত সম্প্রদায়ের নিজস্ব জমি নেই। তাই বাজেটে তাঁদের আবাসনের ব্যবস্থা করা উচিত।
আদিবাসীদের প্রতিনিধি খোকন মুরমু বলেন, বাজেটে আদিবাসীদের জন্য বরাদ্দ বিচ্ছিন্নভাবে থাকে, যা কার্যত খুঁজে পাওয়া যায় না।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মুসলেম মনে করেন, করোনার সময় নারী উদ্যোক্তা ও শ্রমিকেরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাঁদের জন্য আলাদা কর্মসূচি নেওয়া উচিত। নারীদের প্রশিক্ষণের জন্য বাজেটে আলাদা বরাদ্দ রাখতে হবে।
নারীর গৃহস্থালি কাজ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আওতায় আনতে হবে বলে মনে করেন নারীপক্ষের ব্যবস্থাপক সামিয়া আফরিন।