বাসাবাড়ির ময়লাও এখন অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ খাত

আবাসন, মোবাইল ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং, বেসরকারি হেলিকপ্টার খাত অর্থনীতিতে যোগ হয়েছে।

  • ২০০৫-০৬ ভিত্তিবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

  • ২০১৫-১৬ ভিত্তিবছরে তা কমে হয়েছে ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

  • পুরোনো ভিত্তিবছরে জিডিপির আকার ছিল ৩০ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা।

বাসাবাড়িতে তৈরি হওয়া ময়লা-আবর্জনা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোতে এখন বাসাবাড়িতে গিয়ে বর্জ্য সংগ্রহ করছে সিটি করপোরেশন কিংবা পৌরসভা। সে জন্য স্থানভেদে একজন ভাড়াটেকে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে। ফলে এর বাণিজ্যও বেশ বড় হয়ে উঠেছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বছরে ৩৫০ কোটি এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৩০০ কোটি টাকার ময়লাবাণিজ্য হয়। নতুন এ খাতের টাকা অর্থনীতিতে যোগ হচ্ছে।

এই বাস্তবতায় মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির নতুন ভিত্তিবছরে নতুন খাত হিসেবে ময়লা যোগ করা হয়েছে। ভিত্তিবছর ২০০৫-০৬ অর্থবছরে এ খাত ছিল না। এদিকে ২০১৫-১৬ অর্থবছর নতুন ভিত্তিবছর চূড়ান্ত করেছে সরকার। অবশ্য ভিত্তিবছর পরিবর্তন করায় জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমলেও, আকার বেড়েছে। ময়লার পাশাপাশি আবাসন, মোবাইল ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং, বেসরকারি হেলিকপ্টার খাত অর্থনীতিতে যোগ হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে জিডিপির নতুন ভিত্তিবছরের তথ্য প্রকাশ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ২০০৫-০৬ ভিত্তিবছর পরিবর্তন করে ২০১৫-১৬ ভিত্তিবছর হিসেবে চূড়ান্ত হয়েছে। নতুন ভিত্তিবছরে বেশ কিছু নতুন খাত যোগ হয়েছে। এসব খাত অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও, এত দিন জিডিপির হিসাবের বাইরে ছিল। নতুন খাত যোগ হওয়ায় জিডিপির আকার বেড়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, দেশে নতুন নতুন ব্যবসা গড়ে উঠছে। এতে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বেড়েছে। জিডিপির আকার বেড়ে ৪১১ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। এটা হয়েছে ব্যবসার কলেবর বাড়ার কারণে। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম, পরিকল্পনা বিভাগের সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তীসহ অন্যরা।

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ভিত্তিবছর পরিবর্তন করায় ২০২০-২১ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমেছে। ২০০৫-০৬ ভিত্তিবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। কিন্তু ২০১৫-১৬ ভিত্তিবছরে তা কমে হয়েছে ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ। পুরোনো ভিত্তিবছরে জিডিপির আকার ছিল ৩০ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা। নতুন ভিত্তিবছরে চলতি মূল্যে জিডিপির আকার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।

অর্থাৎ, ভিত্তিবছর পরিবর্তন করায় জিডিপির আকার বেড়েছে চার লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। বিবিএসের তথ্য বলছে, কৃষি, শিল্প ও সেবা—এই তিন খাতেই নতুন নতুন উপখাত যোগ হয়েছে। যেমন কৃষির শস্য উপখাতে নতুন ২০টি ফসলের অবদান জিডিপিতে যোগ হয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ড্রাগন ফল, স্ট্রবেরি, ক্যাপসিকাম, লটকন, কচুশাক, শরুফা ও মাল্টা। কৃষিতে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির মাংসের উৎপাদন এবং বন খাতের তথ্য যোগ হয়েছে।

সার্বিকভাবে ২০১৫-১৬ অর্থবছর ভিত্তিবছর হিসেবে নির্ধারিত হওয়ায় সে বছর কৃষিতে চলতি মূল্যে মূল্য সংযোজন বেড়েছে ১৫ শতাংশ। শিল্প খাতে মূল্য সংযোজন বেড়েছে ৩৬ শতাংশ। আর সেবা খাতে মূল্য সংযোজনের আকার ১৪ শতাংশ বেড়েছে।

মাথাপিছু জাতীয় আয় বেড়ে ২,৫৫৪ ডলার

বিবিএস বলছে, ভিত্তিবছর পরিবর্তিত হওয়ায় মাথাপিছু জাতীয় আয় বেড়েছে। পুরোনো ভিত্তিবছরে মাথাপিছু জাতীয় আয় ছিল ২ হাজার ২২৭ ডলার। নতুন ভিত্তিবছরে মাথাপিছু জাতীয় আয় বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৫৫৪ ডলার। টাকার অঙ্কে যা ২ লাখ ১৬ হাজার ৫৮৯ টাকা। সে হিসাবে মাসিক আয় ১৮ হাজার ৪৯ টাকা।

নতুন ভিত্তিবছর নির্ধারণের কারণে জিডিপির অনুপাতে বিনিয়োগ ও সঞ্চয় বেড়েছে। ২০০৫-০৬ ভিত্তিবছরের হিসাবে ২০২০-২১ অর্থবছরে জিডিপির অনুপাতে বিনিয়োগ ছিল ২৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। নতুন ভিত্তিবছরের হিসাবে একই অর্থবছরে জিডিপির অনুপাতে বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। জাতীয় সঞ্চয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ১৫ শতাংশ। পুরোনো ভিত্তিবছরে যা ছিল ৩০ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

১০ বছর পরপর জিডিপির ভিত্তিবছর পরিবর্তন করা হয়। এর আগে ভিত্তিবছর ছিল ১৯৯৫-৯৬। পরবর্তী সময়ে তা পরিবর্তন করে ২০০৫-০৬ নির্ধারণ করা হয়। সেটিও পরিবর্তন করে এখন ২০১৫-১৬ করা হলো। নতুন ভিত্তিবছর নির্ধারণ করার বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রীর বক্তব্য হলো, ওই বছর দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল ছিল। কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল না। আগের ভিত্তিবছরে ১৫টি
খাতের ওপর ভিত্তি করে জিডিপির প্রবৃদ্ধি নিরূপণ করা হতো। নতুন ভিত্তিবছরে তা বাড়িয়ে ১৯টি করা হয়েছে।

নতুন ভিত্তিবছরে সবচেয়ে বেশি বিকাশ ঘটেছে শিল্প খাতের।