ব্যবসা টেকাতে সুবিধা চায় ওয়েস্টিন হোটেল

  • পাঁচ বছরের জন্য আয়কর ও ভ্যাট প্রদান থেকে অব্যাহতি চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছে ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস।

  • ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২১৮ কোটি টাকা আয় করে, যা পরের বছরে করোনার কারণে ১৫৭ কোটিতে নামে।

  • বিদায়ী ২০২০–২১ অর্থবছরের জুলাই–মার্চ ৯ মাসে আয় করে ৫০ কোটি টাকা।

হোটেল দ্য ওয়েস্টিন ঢাকা

হোটেল দ্য ওয়েস্টিন ঢাকা একসময় জমজমাট থাকলেও গত দেড় বছরে বেশির ভাগ সময়ই অলস কাটাতে হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও নানা রকম বিধিনিষেধের কারণে দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীসহ অন্যান্য পেশাজীবীরা কম এসেছেন। বিভিন্ন করপোরেট অনুষ্ঠানও কমে গেছে। এই রেস্তোরাঁয়ও অতিথির সংখ্যাও ছিল নগণ্য। ফলে পাঁচ তারকা হোটেলটি আর্থিক সংকটে পড়েছে।

হোটেল ওয়েস্টিন ঢাকার ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে তাদের মূল প্রতিষ্ঠান ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস লিমিটেড সরকারের কাছে সহায়তা চেয়েছে। হোটেলের দুরবস্থার কথা তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহা. নূর আলী গত ২২ জুন অর্থমন্ত্রী, অর্থসচিব এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দুজন সদস্যকে চিঠি দেন। চিঠিতে পাঁচ বছরের জন্য আয়কর ও ভ্যাট প্রদান থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন তিনি।

মোহা. নূর আলী চিঠিতে বলেন, ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২১৮ কোটি টাকা আয় করেছিল, যা পরের বছরে করোনার কারণে ১৫৭ কোটিতে নামে। বিদায়ী ২০২০–২১ অর্থবছরের জুলাই–মার্চ ৯ মাসে আয় করে ৫০ কোটি টাকা। এই সময়ে স্থায়ী ব্যয় দাঁড়ায় ৪৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। তিনি দাবি করেন, করোনার আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তাঁদের মোট আয়ের ৫৮ শতাংশ বা ১ কোটি ৩২ লাখ মার্কিন ডলার বৈদেশিক মুদ্রায় অর্জিত হয়েছে। ২০০৭ সাল থেকে বিদায়ী অর্থবছর পর্যন্ত সরকারকে ৫০০ কোটি টাকার ভ্যাট ও আয়কর দিয়েছে ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট। গত বছরের মার্চে দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর সবকিছুই নিম্নমুখী।

২০০৭ সালে রাজধানীর গুলশানে ২৪তলা ভবনে ওয়েস্টিন ঢাকার যাত্রা শুরু হয়। হোটেলটিতে বিভিন্ন ধরনের ২৩৫টি কক্ষ রয়েছে। তার মধ্যে ১৯৭টি স্ট্যান্ডার্ড কক্ষ, ৩৭টি সুইট ও ১টি প্রেসিডেনশিয়াল সুইট। এ ছাড়া একাধিক রেস্তোরাঁ ও অনুষ্ঠানের জন্য জায়গাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।

ওয়েস্টিন ঢাকায় সরাসরি ১ হাজারের বেশি কর্মী কাজ করেন। এ ছাড়া হোটেলটির সম্প্রসারণ অংশের নির্মাণকাজ দেখভালের জন্য আছেন শতাধিক কর্মী। এমন তথ্য দিয়ে মোহা. নূর আলী চিঠিতে বলেন, ‘ওয়েস্টিন হোটেলের মূল গ্রাহক করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। করোনার কারণে অল্পসংখ্যক পর্যটক আমাদের সেবা নিয়েছেন। ফলে ব্যবসা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টিকা কার্যক্রম শুরুর পর চলতি বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে আমরা ঘুরে দাঁড়ানোর আশা করলেও সেটি হয়নি।’

এদিকে গত বছর কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকদের থাকা ও খাবার বাবদ হোটেলের বিল চেয়েও পাচ্ছে না ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টসের আরেকটি হোটেল হানসা। আর্থিক সংকটে পড়ে সেই বকেয়া অর্থ চেয়ে অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দেন প্রতিষ্ঠানটির এমডি মোহা. নূর আলী।

প্রতিষ্ঠানটির দাবি, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের গত বছরের ২ জুন থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেবা দেয় হানসা। চুক্তি অনুযায়ী জুন ও জুলাই মাসের হোটেল বিল পরিশোধ করলেও আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের ৬৪ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। অথচ এই সময়ে ভ্যাট, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ওয়াসা, আয়করসহ কর্মীদের বেতন-ভাতা ব্যাংকঋণ নিয়ে পরিশোধ করা হয়েছে। করোনার কারণে বর্তমানে ব্যবসায়িক মন্দা চলছে। তাতে আর্থিক সংকটে পড়ে হোটেল পরিচালনা অসাধ্য হয়ে পড়েছে।

এদিকে আর্থিক সংকটের মধ্যে ব্যবসায় টিকে থাকতে সরকারের কাছে সহায়তা চাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে মোহা. নূর আলী গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যবসার ক্ষতি পোষাতে আমরা কিছু প্রণোদনা চেয়েছি আর কর-ভ্যাটের সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করেছি।’