মূল্যছাড় দিয়েও গ্রাহক মিলছে না পারলারে
এমনিতে গ্রাহক নেই, তারওপর বেড়ে গেছে রূপচর্চা সামগ্রীর দাম। তাই দুশ্চিন্তা পিছু ছাড়ছে না এ খাতের উদ্যোক্তাদের।
বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ায় পারলার খুললেও গ্রাহক মিলছে না। তাই পারলার খুললেও দুঃখ ঘুচছে না মালিকদের। এমনিতে ব্যবসা নেই, তার মধ্যে দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে পণ্যের দাম। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পারলারমালিকদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। তাঁরা বলছেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কিছু গ্রাহক পাওয়া গেলেও অন্যান্য দিন গ্রাহক খুব একটা নেই।
পারলারমালিকেরা বলছেন, করোনায় গ্রাহকদের আচরণ বদলে গেছে। তাই খুব জরুরি না হলে কেউ ছোটখাটো কোনো সেবা নিতে পারলারমুখী হচ্ছেন না। আবার সামাজিক অনুষ্ঠান কমে যাওয়ায় অনুষ্ঠানকেন্দ্রিক সাজও কমে গেছে।
আমাদের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পারলারের প্রায় ১০ হাজার উদ্যোক্তা ও কর্মী রয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, এখন কেউই ৪০ শতাংশের বেশি গ্রাহক পাচ্ছেন না।
অথচ এ খাতের উদ্যোক্তারা আশা করেছিলেন, করোনার বিধিনিষেধ উঠে গেলেই আগের মতো আবার ব্যবসা সচল হবে। ১১ আগস্ট থেকে সরকার বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে। এর পর থেকে রাজধানীর অলিগলি থেকে শুরু করে অভিজাত এলাকার দামি পারলার সবই খুলেছে। কিন্তু সবখানেই দুশ্চিন্তা। উদ্যোক্তারা বলছেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ গ্রাহক পেয়েছেন তাঁরা। অন্যান্য দিন বলতে গেলে ফাঁকাই থাকছে পাড়া-মহল্লা ও গলির পারলারগুলো।
পারলারকর্মীদের প্রশিক্ষণদাতা প্রতিষ্ঠান উজ্জ্বলার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আফরোজা পারভীন বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পারলারের প্রায় ১০ হাজার উদ্যোক্তা ও কর্মী রয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, এখন কেউই ৪০ শতাংশের বেশি গ্রাহক পাচ্ছেন না। আমরা ধারণা করছি, করোনায় ঘরে থাকতে থাকতে গ্রাহকের আচরণ বদলে গেছে। অনেকেই এখন ছোটখাটো রূপচর্চার কাজ নিজেই বাড়িতে বসে করছেন।’
রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী, বেইলি রোড, এলিফ্যান্ট রোড, ধানমন্ডি, বকশীবাজার ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন মানের ১০টি পারলারের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জানান, একদিকে গ্রাহক নেই, অন্যদিকে বেড়ে গেছে পারলারে সৌন্দর্যচর্চার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রীর দাম। মন্দা বাণিজ্যে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নতুন করে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে তাঁদের। তাই খরচ কমাতে অনেকে পারলারের আকার ছোট করে ফেলেছেন। অনেকে বেশি ভাড়ার জায়গা ছেড়ে কম ভাড়ার জায়গায় পারলার স্থানান্তর করেছেন।
ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরের পাশে পারলার লা ভায়লেটা। করোনার আগে এটির দুটি শাখা ছিল। করোনার প্রথম ধাক্কা সামলাতে না পেরে একটি শাখা বন্ধ করে দেন পারলারটির উদ্যোক্তা ফারজানা খানম। অন্যটিও ছোট করে এনেছেন। ফারজানা বলেন, ‘আমার পারলারের অধিকাংশ গ্রাহকই ছিলেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মা ও শিক্ষকেরা। এ এলাকায় সন্তানকে স্কুলে দিয়ে তার জন্য অপেক্ষার ফাঁকে অনেকে পারলারে সৌন্দর্যচর্চার কাজ করাতেন। এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ, আমার সেই গ্রাহকেরাও নেই। তাই পারলার খুললেও ব্যবসা জমছে না।’
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এ ব্যবসায় এখন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়েছে রূপচর্চার পণ্যের দাম। এ খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিউটি সার্ভিস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিএসওএবি) সভাপতি কানিজ আলমাস খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বছর বাজেটে প্রসাধনের অগ্রিম কর ১৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। তাতেই বেড়ে গেছে পণ্যের দাম। রূপচর্চার বেশির ভাগ প্রসাধন বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। করের পাশাপাশি আমদানি খরচও আগের চেয়ে বেড়েছে।’