ময়লার বিলের খরচও আয়কর নথিতে দেখাতে হবে

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রায় সব বড় শহরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে গৃহস্থালির বর্জ্য বা ময়লা সংগ্রহ করা হয়। সরকারিভাবে এই বর্জ্য সংগ্রহ করে অপসারণ করার কথা থাকলেও অনেক জায়গায় বেসরকারি উদ্যোগেও ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করা হয়। এ জন্য আপনি মাস শেষে বিল পরিশোধ করেন, যা ‘ময়লার বিল’ নামেই পরিচিত। এই বিলের পরিমাণ ১০০ থেকে ৫০০ টাকা। এ ‘ময়লা-বাণিজ্য’ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা আছে।

আপনি কি জানেন, বছর শেষে এই ময়লার বিলের তথ্যও আয়কর নথিতে দেখাতে হবে। বাসাবাড়ির ময়লা অপসারণ করতে আপনি মাসে তথা বছরে কত টাকা খরচ করলেন, সেই খরচের যাবতীয় তথ্য আপনার জীবনযাত্রার ব্যয় বিবরণীতে দেখাতে হবে। ময়লার বিলের পাশাপাশি গ্যাস, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য পরিষেবার বিপরীতে কত টাকা খরচ করলেন, তা–ও জানাতে হবে।

আপনি সামাজিক বা পারিবারিক উৎসবের আয়োজন করলে সেখানে কত খরচ করলেন, কত লোককে খাইয়েছেন, কমিউনিটি সেন্টার বা বড় রেস্তোরাঁ ভাড়ায় কত খরচ হলো, তা–ও জানাতে হবে।

একজন করদাতাকে প্রতিবছর আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় জীবনযাত্রার ব্যয় বিবরণী বাধ্যতামূলকভাবে জমা দিতে হয়। করযোগ্য আয় তিন লাখ টাকা অতিক্রম করলেই এটি দিতেই হবে। এনবিআরের বার্ষিক রিটার্ন ফরমের পাশাপাশি আইটি ১০ বিবি ২০১৬ ফরম পূরণ করে জীবনযাত্রার খরচ জানাতে হয়। এতে এনবিআরের কর কর্মকর্তারা বুঝতে পারেন, আপনার আয়ের সঙ্গে জীবনযাত্রার সংগতি আছে কি না। প্রতিবারের মতো এবারও আয়কর নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সেখানে কোন খাতে কত খরচ করলেন, তার বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার ছক রয়েছে।

আপনার যদি একটি গাড়ি থাকে, তাহলের সেই গাড়ির পেছনে কত খরচ হলো, তা–ও দেখাতে হবে। এ ক্ষেত্রে গাড়ির জ্বালানি খরচ, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কত হলো, তা ব্যয় বিবরণীতে দিতে হবে। এ ছাড়া গাড়িচালকের বেতন–ভাতার পেছনে কত হলো, সেটাও জানতে চান কর কর্মকর্তারা। এমনকি গৃহস্থালির কাজে সহায়তার জন্য আপনি গৃহকর্মীকে কত বেতন–ভাতা দিয়েছেন, সেটাও জীবনযাত্রার ব্যয়ের অংশ হিসেবে গণনা করেন কর কর্মকর্তারা। জানাতে হবে গৃহকর্মীকে দেওয়া টাকার খরচও সার্বিকভাবে আপনার জীবনযাত্রা কেমন, এর চিত্র তুলে ধরতে হবে আয়কর বিবরণীতে। এর মাধ্যমে আপনি কতটা ধনী, কত আয় করেন আর কত অর্থ খরচ করেন, সেটা দেখতে চায় এনবিআর। আপনার বৈধ আয়ের সঙ্গে আপনার জীবনযাত্রার মিল আছে কি না, তা মিলিয়ে দেখতেই এ হিসাব নেন কর কর্মকর্তারা

জীবনযাত্রার ব্যয়ের বিবরণীর ফরমে আবাসন খাত বলে একটি ঘর আছে। আপনি যদি ভাড়া বাসায় থাকেন, সেটা লিখতে হবে সেখানে। বছরে কত টাকা ভাড়া দেন, তা জানাতে হবে। এমনকি নিজের বা পৈতৃক বাড়ি থাকলেও তা উল্লেখ করতে হবে। এরপর বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণে খরচ কত হয়েছে, লিখতে হবে তা–ও। জীবনযাত্রার ব্যয়ের ফরমে সন্তানদের পড়াশোনার পেছনে বছরে কত খরচ করেন, সেটাও জানতে চাওয়া হয়েছে। দামি স্কুলে পড়ালে খরচ বেশি। আপনার আয়ের সঙ্গে সেই খরচের সংগতি আছে কি না, তা মিলিয়ে দেখতেই সন্তানদের পড়াশোনার খরচ জানতে চান কর কর্মকর্তারা।

স্ত্রী–সন্তানের পাশাপাশি আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবকে উপহার দিতে কত খরচ করলেন সেটি। পাশাপাশি মানবিক সহায়তা বা অনুদান দিলে, ইন্টারনেট, স্যাটেলাইট চ্যানেল সাবস্ক্রিপশনের বিলসহ যাবতীয় তথ্য দিতে হবে।

এবার আসি বিনোদন খাতের খরচে। যদিও করোনাকালে বিনোদন বা সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজন বেশ কমে গেছে। তবু আপনি সামাজিক বা পারিবারিক উৎসবের আয়োজন করলে সেখানে কত খরচ করলেন, কত লোককে খাইয়েছেন, কমিউনিটি সেন্টার বা বড় রেস্তোরাঁ ভাড়ায় কত খরচ হলো, তা–ও জানাতে হবে।

এ ছাড়া জানাতে হবে স্ত্রী–সন্তানের পাশাপাশি আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবকে উপহার দিতে কত খরচ করলেন সেটি। পাশাপাশি মানবিক সহায়তা বা অনুদান দিলে, ইন্টারনেট, স্যাটেলাইট চ্যানেল সাবস্ক্রিপশনের বিলসহ যাবতীয় তথ্য দিতে হবে।

প্রতিবছর ১ জুলাই থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত রিটার্ন দেওয়ার সময়। এই সময়ে আয়কর রিটার্ন দিয়ে সম্পদ ও ব্যয় বিবরণী জমা দিতে হয়। বাংলাদেশে ৬৩ লাখ কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) থাকলেও বছরে গড়ে ২৫ লাখের মতো টিআইএনধারী রিটার্ন দেন।