রোজার আগেই চাঙা প্রবাসী আয়

প্রবাসী আয়ের প্রবাহে যে ছেদ পড়েছিল, তা কাটতে শুরু করেছে। সদ্য বিদায়ী মার্চে প্রবাসীরা দেশে প্রায় ১৮৬ কোটি মার্কিন ডলার পাঠিয়েছেন, যা স্থানীয় মুদ্রায় ১৬ হাজার ৩৩ কোটি টাকার মতো (প্রতি ডলার ৮৬.২০ টাকা ধরে)। এই আয় গত আট মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

প্রতিবছরই রমজান মাসে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্স তথা প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। এবারে অবশ্য রমজান শুরু হওয়ার আগেই প্রবাসী আয় চাঙা হয়ে উঠেছে। পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে চলতি এপ্রিল মাসে প্রবাসী আয় মার্চের তুলনায় বাড়বে বলে আশা করছেন ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে প্রবাসীরা দেশে ১৭০ কোটি ৪৪ লাখ ডলার বা সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা পাঠান। ফেব্রুয়ারিতে আসে ১৪৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার বা ১২ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকার প্রবাসী আয়, যা এর আগের ২১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। তবে মার্চে তা বেড়ে ১৮৫ কোটি ৯৯ লাখ ডলারে ওঠে। অবশ্য এই মার্চের তুলনায় গত বছরের একই মাসে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ আরও বেশি ছিল, যা পরিমাণে ১৯১ কোটি ডলার।

ব্যাংকাররা বলছেন, দেশে এখন ডলারের সংকট রয়েছে। এ জন্য ব্যাংকগুলো বেশি টাকা দিয়ে হলেও প্রবাসী আয় আনছে। এ ছাড়া ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পাঠালে আগের চেয়ে বেশি প্রণোদনা মিলছে। সে জন্য অবৈধ পথে প্রবাসী আয় আসা কমছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে প্রতি ডলারের মূল্য ৮৬ টাকা ২০ পয়সা। তবে ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয় আনতে ৯০ টাকা দরেও ডলার কিনছে। এর চেয়ে বেশি দামে তারা সেই ডলার ভোগ্যপণ্য আমদানিকারকদের কাছে বিক্রি করছে।

ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠানো প্রবাসী আয়ে সরকার আগে ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দিত। গত ১ জানুয়ারি থেকে প্রণোদনার হার বাড়িয়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়। নগদ প্রণোদনা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রবাসীরা জানুয়ারিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে প্রবাসী আয় পাঠিয়েছিলেন। যদিও ফেব্রুয়ারিতে তা আবার কমে।

এদিকে করোনাভাইরাসের প্রকোপের শুরুতে প্রবাসী আয় কিছুটা ধাক্কা খেলেও ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রবাসী আয়ে নতুন রেকর্ড হয়। এর কারণ হিসেবে বিশ্লেষকেরা বলেন, সেই সময় বিদেশে যাতায়াত প্রায় বন্ধ ছিল। এ জন্য প্রবাসী আয় আসার অবৈধ পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রবাসীরা বৈধ পথেই আয় পাঠান।

এদিকে দেশে আমদানি যে হারে বাড়ছে, সেই হারে প্রবাসী আয় ও রপ্তানি বাড়ছে না। এ কারণে আমদানি দায় মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকে গচ্ছিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে রিজার্ভের পরিমাণ কমছে। তবে ডলার কেনা ও বেচার মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক এখন মার্কিন মুদ্রাটির দাম নিয়ন্ত্রণ করছে।