সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ব্যাংকগুলোর কমিশন কমল ৯ গুণ

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের আর্থিক পণ্য সঞ্চয়পত্র ও সঞ্চয় কর্মসূচি বিক্রি করে দেওয়ার বিপরীতে ডাকঘর ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এত দিন যে হারে কমিশন পেয়ে আসছিল, তা ৯ গুণ কমিয়েছে সরকার।

২০০৪ সাল থেকে কমিশনের হার ছিল দশমিক ৫০ শতাংশ। তা কমিয়ে নতুন হার করা হয়েছে দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। অর্থাৎ ডাকঘর বা ব্যাংকগুলো আগে যেখানে ১০০ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে দিলে ৫০ পয়সা করে কমিশন পেত, সেখানে এখন পাবে ৫ পয়সা। শুধু তা–ই নয়, একটি নিবন্ধনের বিপরীতে যত টাকার সঞ্চয়পত্রই বিক্রি করা হোক না কেন, কমিশন সর্বোচ্চ ৫০০ টাকার বেশি হবে না।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) গত বৃহস্পতিবার সঞ্চয়পত্র বিক্রির ওপর নতুন কমিশন হার নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, যা সেদিন থেকেই কার্যকর হয়েছে। প্রজ্ঞাপনের কপি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ বিভাগ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, ডাক অধিদপ্তর, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

এ সম্পর্কে রাষ্ট্রমালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শামস-উল-ইসলাম গত সোমবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘৯ শতাধিক শাখার মাধ্যমে আমরা সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে সহায়তা করি। বিনিময়ে সামান্য কিছু কমিশন পাই। স্বীকার করি, সরকারকে ব্যয় সংকোচন করতে হবে। কিন্তু এক ধাক্কায় কমিশন এত বেশি না কমিয়ে আরেকটু কম কমানো হলে ভালো হতো। আমরা কমিশনের হার নতুন করে আবার বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ জানাব।’

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, পাঁচ ধরনের সঞ্চয়পত্র বিক্রির ওপর কমিশনের হার কমানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের আওতাধীন অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে এগুলো পরিচালিত হয়। যেসব সঞ্চয়পত্র বিক্রির ওপর কমিশনের হার কমানো হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পেনশনার সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র ও ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক মেয়াদি হিসাব।

বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্যিক ব্যাংক, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর ও ডাকঘর সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে থাকে। তবে সঞ্চয় অধিদপ্তর নিজস্ব এই আর্থিক পণ্য বিক্রির বিপরীতে কোনো কমিশন পায় না। কারণ, সঞ্চয়পত্র বিক্রি করাই তার কাজ। আর বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো কমিশন নেয় না।

অবশ্য যত সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়, তার সামান্য অংশই বিক্রি করে সঞ্চয় অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ ব্যাংক। সঞ্চয় অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ডাকঘরই বিক্রি করে অন্তত ৭০ শতাংশ সঞ্চয়পত্র। সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির নিট পরিমাণ ছিল ৪০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক ও ডাকঘরের মাধ্যমে ৩০ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে বলে ধরা যায়। এ বিক্রির বিপরীতে দশমিক ৫০ শতাংশ হারে গত অর্থবছরে তারা কমিশন পেয়েছে ১৫০ কোটি টাকার মতো। এবার একই পরিমাণ সঞ্চয়পত্র বিক্রি করলে পাবে ১৫ কোটি টাকা।
এ ব্যাপারে বক্তব্য নেওয়ার জন্য সঞ্চয় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাকছুদা খাতুনের মুঠোফোনে তিন দিন ধরে চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরিচয় ও বিষয়বস্তু উল্লেখ করে খুদে বার্তা দেওয়ার পরও তিনি কোনো জবাব দেননি।

কোভিড-১৯–এর প্রভাব মোকাবিলায় সরকারের নেওয়া ব্যয় সংকোচন নীতির অংশ হিসেবে সম্প্রতি আইআরডির এক বৈঠকে সঞ্চয়পত্র বিক্রির বিপরীতে ডাকঘর ও ব্যাংকের কমিশন কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে অনুযায়ী প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। আইআরডির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগের প্রজ্ঞাপনটি ১৭ বছর ধরে চালু ছিল, যেটিতে দশমিক ৫০ শতাংশ হারে কমিশন দেওয়ার কথা বলা হয়। এখন যেহেতু অনলাইন পদ্ধতি চালু হয়ে গেছে, ফলে ব্যাংক ও ডাকঘরের কাজ কমেছে। ফরম পূরণ করে টাকা বা চেক জমা দিলে ১৫ থেকে ২০ মিনিটেই গ্রাহকের পক্ষে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের কাজটি সারা হয়ে যায়।

সঞ্চয় অধিদপ্তরের সঞ্চয় কর্মসূচি রয়েছে ১১টি। শুধু পাঁচটির ক্ষেত্রে এই কমিশন হার করা হলো কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে আইআরডির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের আওতায় যে পাঁচটি এসেছে, সেগুলো নিয়েই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। বাকিগুলোর জন্য আগের হার, অর্থাৎ দশমিক ৫০ শতাংশই বহাল রয়েছে।

জানতে চাইলে আইআরডির যুগ্ম সচিব (সঞ্চয়, স্ট্যাম্প) সুরাইয়া পারভীন গত সোমবার বলেন, অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু হওয়ায় সঞ্চয়পত্র ও সঞ্চয় কর্মসূচি বিক্রির কাজটি আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়েছে। তা ছাড়া আগের হারটি অনেক পুরোনো। নতুন করে এ হার যৌক্তিক করা হয়েছে।

ডাকঘরকে কমিশন দেওয়া হলেও ডাকঘর আবার সরকারি কোষাগারেই করবহির্ভূত রাজস্ব (এনটিআর) হিসেবে তা জমা দেয়। ফলে প্রজ্ঞাপনটি মূলত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্যই প্রযোজ্য এবং এই কমিশন হারের সঙ্গে গ্রাহকদের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই।