সম্ভাবনা বিপুল, বড় বাধা শুল্ক

হিমালয়কন্যা নেপালের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের সম্ভাবনা বিপুল। সে দেশের মানুষের কাছে বাংলাদেশের খাদ্যপণ্যের চাহিদা আকাশচুম্বী। কিন্তু শুল্ক ও অশুল্ক বাধার কারণে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা কাঙ্ক্ষিত হারে পণ্য রপ্তানি করতে পারছেন না। মোটরসাইকেলের ইঞ্জিনক্ষমতা বা সিসির সীমা থাকায় নেপালে মোটরসাইকেল রপ্তানিতে সমস্যায় পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। তাই রপ্তানি বাড়াতে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজনে যোগ দিতে গতকাল সোমবার ঢাকায় পৌঁছেছেন নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারি। দেশটির প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে আলোচনায় উঠে এসেছে দুই দেশের বাণিজ্যের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জের বিষয়টি।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাহাড়ঘেরা নেপালে খাদ্যপণ্য, মোটরসাইকেল, টেলিভিশন, ফ্রিজ, এয়ারকন্ডিশনারসহ বিভিন্ন পণ্য বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয়। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ থেকে ৩ দশমিক ৫৬ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থের পণ্য রপ্তানি হয়েছে নেপালে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৩০৩ কোটি টাকা। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ৪ দশমিক ৬০ কোটি ডলার। তার আগের অর্থবছর হয়েছিল ৩ দশমিক ৮০ কোটি ডলার। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, নেপালে রপ্তানির এই চিত্র কাঙ্ক্ষিত নয়। এটি আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।

নেপালে সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি করে থাকে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। জুস, ড্রিংকস, চিপস, বিস্কুটসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্য রপ্তানি করে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৯ সালের আগপর্যন্ত প্রতি মাসে গড়ে ২০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করত কোম্পানিটি। কিন্তু ২০১৯ সালে হঠাৎ করে পণ্যভেদে ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ শুল্ক বাড়িয়ে দেয় নেপাল। শুল্ক বসানোর পর কোম্পানিটির ৭০ শতাংশ রপ্তানি কমে গেছে বলে জানিয়েছেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের (বিপণন) পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল। তিনি বলেন, ‘শুল্ক বাধার পাশাপাশি আমাদের খুবই কম সময়ের জন্য ভিসা দেওয়া হয়। তা ছাড়া পণ্য খালাস করতেও অনেক সময় চলে যায়। এসব সমস্যার সমাধান করা গেলে রপ্তানি বাড়বে।’

২০১৭ সাল থেকে নেপালে মোটরসাইকেল রপ্তানি শুরু করে রানার গ্রুপ। গত বছর ১ হাজার ৭০০ মোটরসাইকেল রপ্তানি করেছে তারা। বর্তমানে ১৬৫ সিসির ওপরে মোটরসাইকেল আমদানি ও বাজারে ছাড়া নিষিদ্ধ। অথচ নেপালে ২০০ সিসির ওপরে মোটরসাইকেল রপ্তানি করতে হয়।

রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘রানারের মোটরসাইকেল সেখানে খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু সিসির সীমা থাকার কারণে আমরা তাদের চাহিদামাফিক মোটরসাইকেল দিতে পারছি না। তাই আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করেছি সিসির সীমা তুলে দেওয়ার জন্য।’

শুল্ক ও অশুল্ক বাধার কারণে নেপালের বাজারে পণ্য রপ্তানিই বন্ধ করে দিয়েছে এসিআই গ্রুপ। ২০১৩ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি নেপালে লিচি ড্রিংক, চানাচুরসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য রপ্তানি করত। কিন্তু ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসানোর কারণে পণ্য রপ্তানিই বন্ধ করে দিয়েছে এসিআই।

এসিআই ফুডসের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক ফজলে এলাহী বলেন, ‘নেপালের বাজারে আমাদের খাদ্যপণ্যের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু শুল্ক ও অশুল্ক বাধার কারণে পণ্য রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছি। বিষয়টি আমরা সরকারকে জানিয়েছি।’

এদিকে নেপালের বাজারে ফ্রিজ, টেলিভিশন, এয়ারকন্ডিশন, মোবাইল ফোন, ফ্যানসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করছে ওয়ালটন গ্রুপ। প্রতিবছরই পণ্য রপ্তানি বাড়ছে। জানতে চাইলে ওয়ালটনের নির্বাহী পরিচালক উদয় হাকিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানের দিক থেকে আমাদের পণ্য ভালো। দামেও সাশ্রয়ী। তাই নেপালের বাজারে ওয়ালটনের পণ্যের রপ্তানি বাড়ছে।’

এক সময় নেপালে হাতিলের আসবাব রপ্তানি হতো। কিন্তু দুই বছর আগে তা বন্ধ হয়ে যায়।