সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ল, নাকি কমল

আগামী অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ জিডিপির ২.৫৫%, যা চলতি অর্থবছরে ছিল ৩.১১%। আগামী অর্থবছরে প্রতিবন্ধীদের ভাতা বাড়ছে ১০০ টাকা।

চলতি ২০২১–২২ অর্থবছরে ২০ লাখ ৮ হাজার প্রতিবন্ধী ব্যক্তি মাসে ৭৫০ টাকা হারে ভাতা পেয়ে আসছেন। তাঁদের সংখ্যা আগামী ২০২২–২৩ অর্থবছরে ৩ লাখ ৫৭ হাজার বাড়িয়ে ২৩ লাখ ৬৫ হাজার করা হচ্ছে। জনপ্রতি মাসিক ভাতাও ১০০ টাকা বাড়িয়ে করা হচ্ছে ৮৫০ টাকা।

এ ছাড়া মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির আওতায় চলতি অর্থবছরে উপকারভোগী রয়েছেন ১০ লাখ ৪৫ হাজার। আগামী অর্থবছরে উপকারভোগীর সংখ্যা ২ লাখ ৯ হাজার বেড়ে দাঁড়াবে ১২ লাখ ৫৪ হাজার। এ খাতে নতুন অর্থবছরে বরাদ্দ করা হয়েছে ১ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া আগামী অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের কর্মসূচির সংখ্যা ১২৩টি থেকে কমিয়ে ১১৫টি করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

নতুন বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা। এই বরাদ্দ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩ দশমিক ১১ শতাংশ।

চলতি ২০২১–২২ অর্থবছরে এ খাতের বরাদ্দ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক বজলুল হক খন্দকার ৭ জুন প্রথম আলোকে বলেছিলেন, মূল সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলোকে ধরা হলে বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৫ থেকে ১ দশমিক ৭ শতাংশের বেশি হবে না। আসলে সরকারের প্রবণতা হচ্ছে এ খাতকে বড় করে দেখানো।

গতকাল বাজেট ঘোষণার পর বজলুল হক খন্দকারের কাছে জানতে চাইলে বলেন, ‘আশা করেছিলাম, এবার কিছুটা হলেও সংশোধন হবে। সরকার এ খাতে যে বরাদ্দের কথা বলে থাকে, সেটাও বিবেচনায় নিলে দেখা যাচ্ছে জিডিপির তুলনায় বরাদ্দ কমে গেছে।’

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গতকাল বৃহস্পতিবার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘প্রতিবছর সামাজিক সুরক্ষার আওতা ও বাজেট বরাদ্দ উভয় বৃদ্ধি করে যাচ্ছি। এ খাতে বাজেট বরাদ্দ ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৮ গুণ বেড়েছে। দরিদ্র ও অসহায় মানুষকে সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় আনার জন্য দুর্যোগপ্রবণ এলাকা, দরিদ্রতম এলাকা এবং জনসংখ্যার ঘনত্বের অনুপাতের মতো বিষয়গুলো নেওয়া হচ্ছে বিবেচনায়।

দুস্থ–প্রবীণ ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষায় বয়স্ক ভাতা দেওয়া হচ্ছে এবং বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত ভাতার ক্ষেত্রে প্রবীণ নারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। বর্তমানে ৫৭ লাখ ১ হাজার জন বয়স্ক ব্যক্তি মাসিক ৫০০ টাকা হারে ভাতা পাচ্ছেন। এ খাতে আগামী অর্থবছরের জন্যও ৩ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী জানান, ‘প্রতিবছর সামাজিক সুরক্ষার আওতা ও বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করে যাচ্ছি। শহর এলাকায় ‘‘শহর সমাজসেবা কার্যক্রম’’ এবং ‘‘অ্যাসিডদগ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পুনর্বাসন কার্যক্রম’’ নামে মোট চারটি সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।’

অর্থ বিভাগ আগামী অর্থবছরের জন্য যে ১১৫টি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির তালিকা তৈরি করেছে, তাতে দেখা যায় অবসরভোগী সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন বাবদ ২৮ হাজার ৩৭ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্রের সুদ বাবদ ৭ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা, করোনার কারণে ব্যাংকের সুদ মওকুফ ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য সুদ ভর্তুকি বাবদ ৫ হাজার কোটি টাকা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বৃত্তির জন্য ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এগুলোকেও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বলছে সরকার।