সূর্যমুখী তেলের দামও ঊর্ধ্বমুখী

গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করার পর দেশ দুটি থেকে তেল আমদানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।

সয়াবিন তেলের পাশাপাশি সরবরাহ কমেছে সূর্যমুখী তেলের। তাই দামও বেশি। চট্টগ্রাম নগরের প্রবর্তক মোড় এলাকায় অবস্থিত একটি সুপারশপ থেকে সূর্যমুখী তেল কিনছেন একজন ক্রেতা। গতকাল বিকেল চারটায়
ছবি: সৌরভ দাশ

বাজারে ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধির যে মিছিল চলছে, তাতে যোগ দিয়েছে সূর্যমুখী তেল বা সানফ্লাওয়ার অয়েল। সর্বশেষ খবর হলো, বাজারে এখন এই তেলের সরবরাহেই টান পড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দোকানে গিয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে ক্রেতাদের। এ পরিস্থিতির কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে সূর্যমুখী তেলের ৫৮ শতাংশ উৎপাদিত হয় রাশিয়া ও ইউক্রেনে। গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর দেশ দুটি থেকে তেল আমদানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। সরবরাহ পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, তা-ও বলতে পারছে না বিপণনকারী কোম্পানিগুলো।

বাংলাদেশে সূর্যমুখী তেলের ভোক্তা মূলত মধ্যম ও উচ্চমধ্যম আয়ের মানুষেরা। বাজারে এখন ৫ লিটারের এক বোতল সূর্যমুখী তেলের দাম ব্র্যান্ডভেদে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮৭৫ টাকা, যা গত বছরের শুরুতে ৯৫০ থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকা ছিল। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, তেলটির দাম দফায় দফায় বেড়েছে। রোজার মধ্যেও বেড়েছে লিটারপ্রতি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা।

দেশে সূর্যমুখী তেল আমদানি ও বাজারজাত করে ফেয়ার ফুড অ্যান্ড লাইফস্টাইল, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল, এসিআই এডিবল অয়েলস, স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, প্রাণ অ্যাগ্রো লিমিটেডসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।

ফেয়ার ফুড অ্যান্ড লাইফস্টাইলের ব্যবসা উন্নয়ন বিভাগের প্রধান আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্ববাজারে সূর্যমুখী তেল সরবরাহে সংকট তৈরি হয়েছে। দামও অস্বাভাবিক বেড়েছে। বৈশ্বিক সরবরাহকারীরা চাহিদামতো সূর্যমুখী তেল দিতে পারছে না।

আমদানি কমছে

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) হিসাবে, সয়াবিন, পাম, শর্ষে ও কুঁড়ার তেল মিলিয়ে দেশে প্রায় ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। অলিভ অয়েল ও সূর্যমুখী তেলের বাজার ছোট বলে জাতীয় চাহিদার হিসাবের ক্ষেত্রে তা আলাদাভাবে বিবেচনা করা হয় না। অবশ্য যেসব পরিবার সূর্যমুখী তেল দিয়ে রান্না করে, তাদের ক্ষেত্রে সরবরাহ জরুরি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যে দেখা যায়, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭০ লাখ লিটার সূর্যমুখী তেল আমদানি হয়েছে, অর্থাৎ ৭ হাজার টন। আমদানির ৫৫ শতাংশই এসেছে ইউক্রেন থেকে। এদিকে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) আমদানি কমে দাঁড়ায় ৩৬ লাখ লিটারে। এর মধ্যে ইউক্রেন থেকে এসেছে ৪২ শতাংশ, যা মূলত আমদানি বন্ধের আগে জাহাজে ওঠে। ইতালি, তুরস্ক, রাশিয়া, স্পেন, মালয়েশিয়া থেকেও এই তেল আমদানি হয়।

এ খাতের একটি শীর্ষস্থানীয় কোম্পানির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সব দেশেই সূর্যমুখী তেল সরবরাহে টান পড়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক কবে হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

বাজারে সরবরাহ কম

বাজারে সাধারণত বড় দোকান ও সুপারশপে সূর্যমুখী তেল বিক্রি হয়। এই তেলের ব্র্যান্ড ছিল ১৫ থেকে ১৬টি। এখন বাজারে গুটিকয় ব্র্যান্ডের সূর্যমুখীর তেল পাওয়া যাচ্ছে।

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী কমপ্লেক্সের পাশে কিচেন ভ্যান নামের একটি বড় মুদিদোকানে দেখা যায়, সূর্যমুখী তেলের দুটি ব্র্যান্ডের কয়েকটি বোতল রয়েছে। দোকানটির মালিক আবুল হাসান প্রথম আলোকে জানান, এ বছরের এই পাঁচ মাসে সূর্যমুখী তেলের লিটারপ্রতি দাম ৫৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

এদিকে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট বাজারের শাহজালাল স্টোরের মালিক আবদুল মান্নান জানালেন সরবরাহের ঘাটতির কথা।

ঢাকার চিত্রও একই। কারওয়ান বাজারের বড় মুদিদোকানগুলোতে আগে সূর্যমুখী তেলের বোতলে লেখা দাম থেকে কিছুটা ছাড় দিয়ে বিক্রি করতেন বিক্রেতারা। এখন ছাড় নেই। সরবরাহেও ঘাটতি।

কারওয়ান বাজারের আল্লাহর দান জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা জাকির হোসেন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, একটি কোম্পানি তাঁদের কাছ থেকে সরবরাহ আদেশ নিয়ে গেছে। এতে প্রতি ৫ লিটারের বোতলের নতুন দাম দাঁড়াবে ২ হাজার ২০০ টাকা।

[প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা]