৬৭% আয় বাড়বে ঢাকার

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন যান চলাচল চালু করা গেলে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার প্রকৃত আয় বাড়বে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন

  • চট্টগ্রামের ৫৯% প্রকৃত আয় বাড়বে।

  • বাংলাদেশের জাতীয় আয় বাড়বে ১৭%।

  • এফটিএ ও নিরবচ্ছিন্ন পণ্য চলাচল হলে ভারতে রপ্তানি বাড়বে ২৯৭%।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন পণ্যবাহী যান চলাচল চালু করা গেলে ঢাকা সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে। এই জেলার প্রকৃত আয় বাড়বে ৬৭ শতাংশ। এরপরই চট্টগ্রামের আয় বাড়বে। জেলাটির প্রকৃত আয় ৫৯ শতাংশ বাড়বে। এ ছাড়া বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় জেলা এবং পশ্চিমের কিছু জেলার প্রকৃত আয় ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ বাড়বে। এ জন্য বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের (বিবিআইএন) মধ্যে মোটরযান চলাচল চুক্তি পূর্ণমাত্রায় চালুর পাশাপাশি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সমন্বিত পরিবহন যোগাযোগ তৈরি করতে হবে। শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করতে হবে।

বিশ্বব্যাংকের ‘সমৃদ্ধির জন্য আন্তযোগাযোগ: দক্ষিণ এশিয়ার পূর্বাঞ্চলের সমন্বিত পরিবহনব্যবস্থা চালুর চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য দেওয়া হয়। গতকাল মঙ্গলবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে প্রকৃত আয় বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশের শ্রমিকদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ অভিবাসনও বাড়বে। দক্ষিণাঞ্চলের শ্রমিকেরা দেশের পূর্বাঞ্চলের জেলা এবং উত্তরের জেলায় অভিবাসন করবেন। দুই দেশের মুক্তবাণিজ্য চুক্তির পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন যান চলাচল নিশ্চিত করতে পারলে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রায় ৩০০ শতাংশ বাড়তে পারে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দুই দেশের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন পরিবহনব্যবস্থা চালু করতে পারলে সার্বিকভাবে বাংলাদেশের জাতীয় আয় ১৭ শতাংশ বেড়ে যাবে। আর ভারতের জাতীয় আয় বাড়বে ৮ শতাংশ। এভাবেই দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথা বলেছে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশের মতো ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গও লাভবান হবে।

প্রতিবেদনটি প্রকাশ উপলক্ষে ভারত ও বাংলাদেশে গতকাল একযোগে অনলাইন সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে বিশ্বব্যাংক। সেখানে প্রতিবেদনের নানা দিক তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ মাটিয়াস হেরেরা ডাপ্পি ও বেসরকারি খাত বিশেষজ্ঞ চার্লস কুনাকা। নিরবচ্ছিন্ন পরিবহনব্যবস্থা চালু হলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়বে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে মোটর ভেহিকেলস অ্যাগ্রিমেন্ট (এমভিএ) চুক্তি পর্যালোচনা করা হয়। এই চুক্তির বাস্তবায়ন শক্তিশালী করতে চারটি সুপারিশও করা হয়েছে। যেমন চালকদের লাইসেন্স ও ভিসাপ্রক্রিয়া সহজ করা; একটি আঞ্চলিক পরিবহনব্যবস্থা চালু করা; বাণিজ্য ও পরিবহনসংক্রান্ত কাগজপত্র ডিজিটাল করা এবং বাণিজ্যপথ নির্বাচনের প্রক্রিয়া সহজ করা।

বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন বলেন, ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ হলো ভারত, নেপাল, ভুটান ও অন্য পূর্ব এশীয় দেশগুলোর গেটওয়ে। আঞ্চলিক বাণিজ্য, ট্রানজিটসহ অন্যান্য বাণিজ্য সহায়ক কাঠামো উন্নত করে বাংলাদেশ এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক শক্তির কেন্দ্র হতে পারে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ১ হাজার কোটি ডলারের বাণিজ্য বাড়ানোর সম্ভাবনা আছে।

একই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ভারতে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর জুনায়েদ আহমেদ। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার পূর্বাঞ্চলের মধ্যে আন্তযোগাযোগ জোরদার করলে তা পুরো দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধির চালিকা শক্তি হবে। এই যোগাযোগের মধ্যে থাকতে হবে জ্বালানি, বাণিজ্য ও পরিবহনব্যবস্থা। ভারত ও বাংলাদেশ এখন আন্তদেশীয় যোগাযোগ বাড়াতে বিনিয়োগ করছে।

পণ্য চলাচল সহজ করা

দুই দেশের আমদানি-রপ্তানি সহজ করতে সীমান্তে পণ্যবাহী যান চলাচল সহজ করার সুপারিশ করা হয়েছে বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে। পাশাপাশি ভারতের মূল খণ্ড থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে সহজে যাতে পণ্যবাহী যান চলাচল করতে পারে, সেই ব্যবস্থা চালুর সুপারিশও করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের মতে, পণ্য চলাচল সহজ হলে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে ভারতের একটি কোম্পানি বাংলাদেশের একটি কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসা করলে যত খরচ হয়, তার চেয়ে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ খরচ কম হয় যদি ওই কোম্পানি ব্রাজিল বা জার্মানির একটি কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসা করে। উচ্চ কর, প্যারা ট্যারিফ, অশুল্ক বাধাসহ বিভিন্ন কারণে দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভারতের শুল্ক-কর হার বিশ্ব শুল্ক-করের গড় হারের দ্বিগুণ।

অন্যদিকে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যও তুলনামূলক কম। বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের মাত্র ১০ শতাংশ হয় ভারতের সঙ্গে। অন্যদিকে ভারতের মাত্র ১ শতাংশ ব্যবসা-বাণিজ্য হয় বাংলাদেশের সঙ্গে।