নন-লাইফ বিমা কোম্পানিগুলো এজেন্ট কমিশন দিতে পারবে না
দেশের ৪৬টি নন-লাইফ অর্থাৎ সাধারণ বিমা কোম্পানির ব্যক্তি এজেন্টদের লাইসেন্স স্থগিত করে দিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। কোম্পানিগুলোর উন্নয়ন কর্মকর্তারা যে সংগৃহীত প্রিমিয়াম থেকে শতকরা হারে টাকা পান, তা-ও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
নন-লাইফ কোম্পানিগুলোর উদ্দেশে গত মঙ্গলবার ‘নন-লাইফ বিমাকারীর ব্যক্তি এজেন্ট কমিশন এবং উন্নয়ন কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা’ শীর্ষক প্রজ্ঞাপন জারি করে আইডিআরএ এসব কথা বলেছে। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে এই প্রজ্ঞাপন কার্যকর হবে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, দেশের কোনো নন-লাইফ বিমা কোম্পানিতে আর কোনো ব্যক্তি বিমা এজেন্ট থাকবে না। ফলে কোনো বিমাকারী আর কমিশনও দিতে পারবে না তাঁদের। তবে ব্যাংকাস্যুরেন্স পরিচালনাকারী ব্যাংক ও ইনস্যুরটেক পরিচালনাকারীদের ক্ষেত্রে এ বিধিনিষেধ প্রযোজ্য হবে না।
বিমা কোম্পানির মালিকপক্ষের সমিতি বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) গত ১৮ নভেম্বরের সুপারিশ এবং আইডিআরএর সঙ্গে গত ৩০ নভেম্বর নন-লাইফ বিমা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এমন প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে বলে বলা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে আইডিআরএ অবশ্য এ-ও বলেছে, নন-লাইফ বিমা পলিসি গ্রাহকদের স্বার্থ সংরক্ষণ, বিমাকারীদের আর্থিক ভিত মজবুত করাসহ সামগ্রিকভাবে বিমা খাতের স্বার্থে এ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
আইডিআরএ ১ ডিসেম্বর বিআইএর কাছে চিঠি পাঠিয়ে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে জানিয়েছিল। সংস্থাটি আরও বলেছিল, আইডিআরএর লোকবলের ঘাটতি থাকায় প্রজ্ঞাপন জারির পর তা লঙ্ঘন হচ্ছে কি না, তা তদারকের ক্ষেত্রে বিআইএ যেন সহযোগিতা করে এবং বিআইএ নিজেও যেন পরিদর্শন দল গঠন করে।
নন-লাইফ কোম্পানিগুলোতে তিন হাজারের কাছাকাছি এজেন্ট রয়েছেন বলে বিআইএ সূত্রে জানা গেছে।
কী অনুরোধ করেছিল বিআইএ
আইডিআরএ চেয়ারম্যান এম আসলাম আলম বরাবর গত ১৮ নভেম্বর ‘এজেন্ট কমিশন শূন্য শতাংশ নির্ধারণ’ শীর্ষক এক পৃষ্ঠার একটি আবেদন করেন বিআইএর সভাপতি সাঈদ আহমেদ।
ব্যক্তি বিমা এজেন্টদের কমিশন বর্তমানে ১৫ শতাংশ। ২০২০ সালের ২৭ আগস্ট জারি করা প্রজ্ঞাপনে আইডিআরএ এজেন্টদের ১৫ শতাংশ কমিশন থেকে ৫ শতাংশ অগ্রিম কর কর্তন করে ১৪ দশমিক ২৫ শতাংশ কমিশন পরিশোধের নির্দেশ দেয় কোম্পানিগুলোকে। প্রবিধানমালা না হওয়ার কারণে ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তা বাতিল করে কমিশন শূন্য ঘোষণা করা হয়। প্রবিধানমালা হয়ে যাওয়ার পর একই বছরের ২৪ অক্টোবর আইডিআরএ যে প্রজ্ঞাপন জারি করে, সে অনুযায়ী আবার চালু হয় কমিশন।
এই তিন প্রজ্ঞাপনের কথা উল্লেখ করে বিআইএ বলেছে, বর্তমানে নন-লাইফ বিমা ব্যবসাসংক্রান্ত সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তারা এক যৌথ সভায় এজেন্ট কমিশন শূন্য নির্ধারণের বিষয়ে একমত হয়েছেন।
এসব কথা উল্লেখ করে বিআইএর দাবি হচ্ছে এজেন্ট কমিশন শূন্যে নামিয়ে আনতে আইডিআরএ যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়।
উন্নয়ন কর্মকর্তাদের বেতন ব্যাংকে যাবে
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, উন্নয়ন কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা সংগৃহীত প্রিমিয়ামের শতকরা হারে আর দেওয়া যাবে না। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ছাড়া অন্য সব উন্নয়ন কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা দিতে হবে কোম্পানির নির্ধারিত বেতন-কাঠামো অনুযায়ী।
শুধু তা–ই নয়, নিয়োগপত্রে উন্নয়ন কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতার কথা উল্লেখ করতে হবে এবং সে অনুযায়ী নিয়মিত বেতন পরিশোধ করতে হবে। ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের জন্য কোম্পানির যে নির্ধারিত ব্যাংক হিসাব রয়েছে, তা থেকে সরাসরি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ ব্যাংক হিসাবে বেতন-ভাতা পাঠিয়ে দিতে হবে। অথবা তা পরিশোধ করতে হবে অ্যাকাউন্ট পেয়ি চেকের মাধ্যমে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, উন্নয়ন কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা ও সুবিধা দেওয়ার তথ্যসংবলিত প্রতিবেদন ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে আইডিআরএর কাছে জমা দিতে হবে। প্রতি ত্রৈমাসিক শেষ হওয়ার ১০ দিনের মধ্যে নির্ধারিত ছক অনুযায়ী পাঠাতে হবে এ প্রতিবেদন। এতে কর্মকর্তাদের নাম, পদবি, শাখা, মোট বেতন, ভবিষ্য তহবিল ও কর কর্তন, নিট বেতন, ব্যাংক হিসাব নম্বর এবং অর্জিত মোট প্রিমিয়ামের তথ্য থাকতে হবে।