কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারে অগ্রগতি কতটা

২০২২ সালের নভেম্বর মাসে ওপেন এআইয়ের (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) এআইভিত্তিক মডেল জিপিটি ফোর বা চ্যাটজিপিটি বাজারে আসার পর প্রযুক্তির জগতে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে। চ্যাটজিপিটি আসার পরপর যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে প্রযুক্তি খাতের বাজার মূলধন প্রায় ৫০ ভাগ বেড়েছে। কারণ, বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বড় ধরনের বিনিয়োগ করছে।

কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তথা এআইভিত্তিক (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) সফটওয়্যারে খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারছে না। দ্য ইকোনমিস্ট–এর সংবাদে বলা হয়েছে, গত বছর মাইক্রোসফটের ক্লাউড কম্পিউটিং বিভাগ অ্যাজুরের মোট রাজস্বের পাঁচ ভাগের এক ভাগ এসেছে এআই থেকে। অন্যদিকে অ্যালফাবেট ও আমাজনের মতো প্রতিষ্ঠান তাদের এআইভিত্তিক সেবা বিক্রির তথ্য প্রকাশ করেনি; কিন্তু বিশ্লেষকদের ধারণা, এআই থেকে তাদের আয় মাইক্রোসফটের চেয়ে কম। এই পরিস্থিতিতে ধারণা করা হচ্ছে, এআইয়ের কারণে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর স্টকের যে মূল্য বেড়েছে, তা ধরে রাখতে হলে এই সেবা বিক্রি থেকে আয় অনেকাংশে বাড়াতে হবে।

সারা বিশ্বে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ব্যাংক, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বা ফিল্ম স্টেরিওগুলোকে এখন চ্যাটজিপিটি–জাতীয় এআইভিত্তিক সফটওয়্যার বড় পরিসরে ব্যবহার করা শুরু করতে হবে। কিন্তু বাস্তব জীবনে জেনারেটিভ এআই ব্যবহারের প্রসঙ্গ যখন আসছে তখন দেখা যাচ্ছে, এ ক্ষেত্রে তেমন একটা অগ্রগতি হয়নি। এ ধরনের ছোট পরিবর্তন সত্ত্বেও ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে যারা হোয়াইট কলার জব বা ব্যবস্থাপনার কাজ করেন তাঁদের কাজের জগতে পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে।

অতীতে যত প্রযুক্তিগত বড় পরিবর্তন এসেছে, তাতে মানুষের কাজের ধরনেও বিপ্লব ঘটেছে। টাইপরাইটার আসার পর অনেক কর্মী কাজ হারিয়েছেন। ১৮৮৮ সালে টাইপরাইটার আসার পর এক পর্যবেক্ষক বলেছিলেন, এই ছোট যন্ত্রের সাহায্যে একজন মানুষ প্রায় ছয়জন মানুষের সমান কাজ করতে পারেন। শুধু তা–ই নয়, ছয়জনের চেয়ে একজন ভালোভাবে সেই কাজ সম্পন্ন করতে পারেন। এর এক শতাব্দী পর কম্পিউটার নিচের সারির অনেক প্রশাসনিক কর্মীকে কাজ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। একই সঙ্গে উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের আরও উৎপাদনশীল হতে সাহায্য করেছে। এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ১৯৭০-এর দশক থেকে শুরু করে ১৯৯০-এর দশক পর্যন্ত কর্মজগতে শ্রমিকদের তুলনায় কলেজ শিক্ষিত তরুণদের যে চাহিদা বেড়েছে, তার পেছনে অর্ধেক কৃতিত্ব হচ্ছে এই কম্পিউটার। 

কথা হচ্ছে, আগের প্রযুক্তিগুলোর মতো জেনারেটিভ এআই কি একই ধরনের গভীর পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারবে। দ্য ইকোনমিস্ট–এর সংবাদে বলা হয়েছে, অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, অর্থনীতিজুড়ে এ ধরনের প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের প্রভাব পড়তে বেশ কয়েক বছর সময় লেগে যায়। গড়পড়তা প্রতিষ্ঠানের গড়পড়তা কর্মী যখন নতুন ধারার এই কাজের ধারার সঙ্গে পরিচিত হবেন, তখনই ধরে নেওয়া যায়, নতুন প্রযুক্তি প্রায় সব ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে।

ব্যক্তিগত কম্পিউটার ব্যবহারের কারণে মানুষের উৎপাদনশীলতা বাড়তে অন্তত এক দশক সময় লেগেছে বলে জানা যায়, সেটা কম্পিউটার প্রচলনের পরের দশকে নয়, বরং কম্পিউটারের বহুল ব্যবহার শুরু হওয়ার এক দশক পর এর প্রভাব অনুভূত হয়েছে। এখন পর্যন্ত এআই ব্যবহারের কারণে অর্থনীতিতে উৎপাদনশীলতা সামগ্রিকভাবে বেড়েছে, তার নজির পাওয়া যায় না। সম্প্রতি বোস্টন কনসালটেন্সি গ্রুপের এক জরিপে জানা গেছে, এআই ঘিরে যে হাইপ বা উন্মাদনা তৈরি হয়েছে, তা পাশ কাটিয়ে সামনের দিকে এগোতে আরও অন্তত দুই বছর লাগবে বলে মনে করছেন বেশির ভাগ নির্বাহী। আরেক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অলিভার ওয়াইমানের জরিপে বলা হয়েছে, এই ব্যবহারের কারণে এখন পর্যন্ত উৎপাদনশীলতা বাড়েনি।