বিশ্ব অর্থনীতি ‘অতটা খারাপ’ নয়

আইএমএফপ্রধান গত শুক্রবার ডব্লিউইএফের বার্ষিক সম্মেলনে বলেন, যতটা খারাপ আশঙ্কা করা হয়েছিল, বিশ্ব অর্থনীতি ততটা খারাপ নয়।

আইএমএফ-প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা
ছবি: রয়টার্স

বিশ্ব অর্থনীতি এখনো কঠিন পরিস্থিতি অতিক্রম করছে বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তবে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতির হার কমতে শুরু করেছে। সে কারণে অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের মধ্যে সতর্ক আশাবাদ তৈরি হয়েছে, গত বছরের সবচেয়ে বাজে সময় পেরোনো গেছে। তবে আইএমএফের প্রধান মনে করছেন, নীতি সুদহার বৃদ্ধির প্রভাব এখনো শেষ হয়নি।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বা ডব্লিউইএফের বার্ষিক দাভোস সম্মেলনে গত শুক্রবার ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা এসব কথা বলেন। তাঁর মতে, বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা এখন ‘অতটা খারাপ’ নয়, কয়েক মাস আগে যতটা আশঙ্কা করা হয়েছিল। তবে উল্লসিত হওয়ারও কিছু নেই।

ভবিষ্যতে আরও খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। তার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দেশে দেশে যেভাবে নীতি সুদহার বাড়ানো হয়েছে, তার নেতিবাচক প্রভাব এখনো সেভাবে অনুভূত হয়নি। বিষয়টি হলো, নীতি সুদহার বৃদ্ধির কারণে বেকারত্ব বাড়তে পারে। এমনিতেই বিভিন্ন দেশে সরকারের হাতে অর্থের অভাব। নীতি সুদহার বৃদ্ধিজনিত অর্থনৈতিক সংকোচন বা প্রবৃদ্ধির শ্লথগতির কারণে বেকারত্ব মোকাবিলায় দেশগুলো বিপাকে পড়বে বলেই তাঁর আশঙ্কা। খবর সিএনএনের।

দাভোস সম্মেলনে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন ল্যাগার্ডও বলেছেন, নীতি সুদহার বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখা হবে। ইউরোপীয় ব্যাংকের মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ২ শতাংশের মধ্যে আনতে নীতি সুদহার বাড়ানো হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

অন্যদিকে ফেডারেল রিজার্ভও নীতি সুদহার বৃদ্ধির পথেই হাঁটবে। তারাও মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে নিয়ে আসবে। ফেডের ভাইস চেয়ারম্যান লায়েল ব্রেইনার্ড বলেন, ‘আগামী আরও কিছুদিন নীতি সুদহার বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে। আমরা এ বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ।’

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে গত বছর মোট সাতবার নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে এক ধাপেই শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশীয় পয়েন্ট নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে ফেড। যুক্তরাজ্যও রেকর্ড মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় দফায় দফায় নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। ফলে উভয় দেশেই এখন এক দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ নীতি সুদহার বিরাজ করছে।

মূল্যস্ফীতির চাপ আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন আইএমএফ ও ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান। তাঁরা বলেন, চীন শূন্য কোভিড নীতি থেকে বেরিয়ে এসেছে। এতে তাদের চাহিদা বাড়বে, বিশেষ করে প্রাকৃতিক গ্যাস ও জ্বালানি তেলের।

আইএমএফের পূর্বাভাস, ২০২৩ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার ২ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে আসতে পারে। তা সত্ত্বেও সম্প্রতি কিছু দেশে মূল্যস্ফীতির হার কমে আসায় অনেক অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষক মনে করছেন, অর্থনীতিতে হয়তো কিছুটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে।