সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে, তবে ঠিক করতে হবে মূল্যস্ফীতির ভিত্তি

বাংলাদেশ সচিবালয়
ফাইল ছবি

সরকারি কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা শেষ পর্যন্ত হচ্ছে না। তবে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী তাঁদের বেতন প্রতিবছর যতটা বাড়ার কথা, এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। কিছুটা বেশি হারে বেতন বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই। সপ্তাহখানেক আগে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধি করা হবে।

সরকারি সূত্রগুলো জানাচ্ছে, বেতন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার কোনটি ধরা হবে—আগামী ১ জুন বাজেট ঘোষণার পর তা নিয়ে কাজ করবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর থেকেই এ ব্যাপারে নতুন করে ভাবা শুরু করেছে অর্থ বিভাগ। আগে তারা এমন হিসাব কষে রেখেছিল যে ১০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতায় ৪ হাজার কোটি, ১৫ শতাংশে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশে ৮ হাজার কোটি টাকা বাড়তি প্রয়োজন হবে।
অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো বলছে, এখন অঙ্কের চেয়ে প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে মনোযোগী অর্থ বিভাগ। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল যে বাজেট বক্তব্য দেবেন, তাতে এ ব্যাপারে কোনো ঘোষণা থাকবে না বলে এখন পর্যন্ত জানা যাচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত কিছু যোগ করা হলেও এক লাইনে কিছু বলা হতে পারে।

২০১৫ সালের বেতন কমিশনেই বলা ছিল যে প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) হবে সরকারি কর্মচারীদের। সে অনুযায়ী তা হয়েও আসছে। জানা গেছে, ২০১৫ সালে মূল্যস্ফীতির হার গড়ে ৫ শতাংশের মতো ছিল বলেই ইনক্রিমেন্ট একই হারে বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছিল। এখন মূল্যস্ফীতি বেশি বলেই ইনক্রিমেন্টের হার বৃদ্ধির আলোচনাটি চলছে।

হারটি কত পারে, তা নিয়েও জল্পনাকল্পনা চলছে অর্থ বিভাগে। আগামী অর্থবছরের জন্য বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ধরা হচ্ছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। সে ক্ষেত্রে এ হারই হতে পারে বেতন বৃদ্ধির একটা ভিত্তি। আবার বাজেট ঘোষণার পর জুন বা জুলাই শেষে মূল্যস্ফীতির হার কত থাকে, সেটাও হতে পারে আরেকটা ভিত্তি। উভয় বিকল্প হাতে নিয়েই এগোচ্ছে অর্থ বিভাগ। তবে যখনই প্রজ্ঞাপন জারি হোক না কেন, তা কার্যকর করা হবে পেছনের তারিখ বা অর্থবছরের প্রথম দিন ১ জুলাই থেকে।

মূল্যস্ফীতির হার

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৫ সালের বেতন কাঠামোর সুপারিশ সরকার না মানার কারণেই বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি সম্প্রতি নতুন করে সামনে এসেছে। বেতন কাঠামোতে বলা হয়, সরকারি কর্মচারীদের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি ৫ শতাংশ হবে। তবে মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের বেশি হলে বেতন বৃদ্ধির হারও সে অনুযায়ী হবে। তবে বাস্তবে তা মানা হচ্ছিল না।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, গত এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। আর গত বছরের আগস্টে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছিল।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘জিনিসপত্রের দামের যে অবস্থা, তা বিবেচনায় নিলে মহার্ঘ ভাতা দেওয়াই উচিত ছিল। এখন যেহেতু মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সংগতি রেখে কিছু একটা করা হচ্ছে, তা–ও এক প্রকার মন্দের ভালো। কিন্তু এর মধ্যে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মচারীদের রাখা উচিত।’

চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। আগামী অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৭৭ হাজার কোটি টাকা। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে মিল রেখে বেতন বৃদ্ধি করা হলে আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ বরাদ্দ কয়েক হাজার কোটি টাকা বাড়তে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ‘উন্নয়ন অন্বেষণ’-এর চেয়ারপারসন রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর প্রথম আলোকে বলেন, চাকরিজীবীদের জীবনযাত্রার ব্যয় সমন্বয় করতে হবে—এটা হচ্ছে খুবই সাধারণ বিষয়। কিন্তু সরকার তো খুব একটা স্বীকারই করতে চায় না যে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে এবং দেশে বেকারত্বের হারও বাড়তি।

রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর আরও বলেন, কর সংগ্রহে সরকারের মনোযোগ কম বা সরকারের এ বিষয়ে ভালো কৌশল জানা নেই। নেই বলেই তৃণমূল পর্যায়ে তহসিলদার আছে, এনবিআরের কোনো কর্মকর্তা নেই। কর আদায় বেশি হলে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে আরও বেশি বেতন বৃদ্ধি করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।