পণ্যমূল্য বৃদ্ধিতে বেচাবিক্রি কমেছে বিপণিবিতানে

গত সপ্তাহে বিআইডিএসের এক সেমিনারে বলা হয়, পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে মানুষের কেনাকাটা বা ব্যয়ের পরিমাণ প্রায় ৫ শতাংশ কমেছে।

নিত্যপণ্যের বাজারের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে বড় বড় বিপণিবিতানে। বিপণিবিতানগুলোয় বিক্রি স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কমে গেছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি রাত আটটায় দোকান বন্ধের সিদ্ধান্তকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে ব্র্যান্ডের দোকানগুলো এখনো ব্যতিক্রম। গতকাল শনিবার রাজধানীর একাধিক বিপণিবিতান ঘুরে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পোশাক থেকে শুরু করে হরেক রকমের কসমেটিকস সামগ্রী—সব পণ্যের বিক্রিই কমেছে।

গতকাল দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর নিউমার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, হাতিরপুল ও কারওয়ান বাজারের বেশ কয়েকটি বিপণিবিতানে ঘুরে দেখা যায়, ছুটির দিনে ক্রেতাদের তেমন ভিড় নেই এসব এলাকার বিপণিবিতানগুলোয়। এসব এলাকার বিপণিবিতানগুলোর মধ্যে তুলনামূলক কিছুটা বেশি মানুষ দেখা গেছে বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে।

অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক সংকটে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন সীমিত আয়ের মানুষ। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। সেই তুলনায় ধনীদের ওপর এ চাপ কম। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়। তাতে বিশ্বের দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির হারও বাড়তে শুরু করে।

কেনাকাটায় একটু ভাটা পড়েছে, এটা সত্য। বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছেন সীমিত আয়ের মানুষেরা। তাই সবাই কেনাকাটা একটু কমিয়ে দিয়েছেন।
দেওয়ান আমিনুল ইসলাম সভাপতি, ঢাকা নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি

এসব কারণে দেশেও দফায় দফায় বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। সংসার খরচ চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে সীমিত আয়ের মানুষকে। এতে অনেকে অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে দিয়েছেন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেনাকাটায়ও লাগাম টেনেছেন।

সম্প্রতি বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত এক সেমিনারেও জানানো হয়, পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় দেশের মানুষ কেনাকাটা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে দিয়েছেন। জাতীয় পর্যায়ে মানুষের কেনাকাটা বা ব্যয়ের পরিমাণ কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ। এর মধ্যে শহরে কমেছে প্রায় ৪ শতাংশ আর গ্রামে ৫ শতাংশ। এই প্রতিবেদনের সঙ্গে বাস্তবতার মিল পাওয়া গেল গতকাল ঢাকার বিভিন্ন বিপণিবিতানে ঘুরেও।

ঢাকার নিউমার্কেটের কসমেটিকস ও বাচ্চাদের খেলনা বিক্রির দোকান নিউ লেডিস কর্নারের বিক্রয়কর্মী পরিমল চন্দ্র মিস্ত্রি জানান, গত কয়েক মাসে বেচাকেনা অর্ধেকে নেমেছে। গত ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে যেখানে গড়ে প্রতিদিন ২৫ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি হতো, এখন তা নেমে এসেছে ১০ হাজারে।

ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের শাড়ির দোকান শোভা জামদানি কুটিরের বিক্রয়কর্মী মো. আফজাল হোসেন বলেন, গত ৪ মাসে ৩০ শতাংশ বিক্রি কমে গেছে। বিক্রি কমার এমন তথ্য দিয়েছেন নুরজাহান সুপারমার্কেট, ইস্টার্ন মল্লিকা, ইস্টার্ন প্লাজা ও বসুন্ধরা সিটির বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীও।

মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি রাত আটটায় দোকান বন্ধের সিদ্ধান্তকেও বিক্রি কমার কারণ বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, এখন গরমের দিন। তাই দিনে লোকজন বের হতে চান না।

জুতার ব্র্যান্ড অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের শাখা ব্যবস্থাপক মো. শামীম শেখ জানান, ‘এখন আমাদের সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার মধ্যেই দোকানের বিক্রি বন্ধ করতে হচ্ছে। এতে ৩০-৩৫ শতাংশ বিক্রি কমেছে। গত শুক্রবার অন্তত ১০ লাখ টাকার পণ্য কম বিক্রি হয়েছে।’

তবে বিপরীত চিত্র পাওয়া গেছে কয়েকটি ব্র্যান্ডের বিক্রয়কর্মীর সঙ্গে কথা বলে। পোশাকের ব্র্যান্ড জেন্টল পার্কের বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স শাখার ব্যবস্থাপক খান আল আমিন জানান, তাঁদের প্রত্যাশা অনুযায়ী পোশাক বিক্রি হচ্ছে। তাঁদের পোশাক যাঁরা কেনেন, তাঁদের ওপর পণ্যমূল্য বৃদ্ধির প্রভাব কম।

বিপণিবিতানগুলোর বেচাকেনা বিষয়ে ঢাকা নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম বলেন, কেনাকাটায় একটু ভাটা পড়েছে, এটা সত্য। বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছেন সীমিত আয়ের মানুষেরা। তাই সবাই কেনাকাটা একটু কমিয়ে দিয়েছেন। এর মধ্যে রাত আটটায় দোকান বন্ধের বড় ধরনের প্রভাবও পড়েছে বিক্রির ওপর।