ফ্ল্যাট ও জমিতে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ আবার

ফ্ল্যাট ও জমিতে কালোটাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ আবার আসছে। নতুন আয়কর আইনে এভাবেই কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে।
ছবি: সংগৃহীত

ফ্ল্যাট ও জমিতে কালোটাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ আবার আসছে। এলাকা ও আয়তনভেদে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিয়ে সুযোগটি নেওয়া যাবে। এ ছাড়া কর দিয়ে কালোটাকায় নতুন শিল্পকারখানাও স্থাপন করা যাবে। ১০ শতাংশ কর দিয়ে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাইটেক পার্কে শিল্প স্থাপনের বিদ্যমান সুযোগটিও অব্যাহত থাকবে।

নতুন আয়কর আইনে এভাবেই কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই আইনের প্রথম তফসিল অনুযায়ী, শিল্পে কালোটাকা বিনিয়োগে অর্থের উৎস সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করা হবে না। যদিও ফ্ল্যাট ও জমিতে কালোটাকা বিনিয়োগ করতে গেলে অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন করা হবে কি না, সেটি পরিষ্কার করা হয়নি। তবে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ফ্ল্যাট বা জমি ক্রয়ে কোনো অর্থ বিনিয়োগ করে ওই করবর্ষে নির্দিষ্ট হারে কর দিলে বিনিয়োগ করা অর্থের উৎস সম্পর্কে ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে বলে গণ্য হবে। অবশ্য অপরাধমূলক কার্যক্রম কিংবা অবৈধ উৎস থেকে অর্জিত অপ্রদর্শিত অর্থ ফ্ল্যাট ও জমিতে বিনিয়োগ করার সুযোগ মিলবে না।

জাতীয় সংসদে নতুন আয়কর আইন পাসের জন্য অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত বৃহস্পতিবার ‘আয়কর বিল-২০২৩’ উত্থাপন করেন। পরে বিলটি পাঁচ দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। আয়কর বিলে সব মিলিয়ে ২৫টি অধ্যায়, ৩৪৫টি ধারা ও ৮টি তফসিল আছে।

আয়কর অধ্যাদেশের ১৯ এএএএএ ধারায় জমি ও ফ্ল্যাট কিনে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন সময় সুযোগটি নানাভাবে দেওয়া হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে বিনা প্রশ্নে জমি ও ফ্ল্যাট কিনে এলাকা ও আয়তনভেদে নির্ধারিত কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই সুবিধা রাখা হয়নি। এর পরিবর্তে ইতিপূর্বে পাচার করা টাকা ৭ শতাংশ কর দিয়ে দেশে ফেরত আনার সুযোগ দেওয়া হয়। তবে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে এ বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যানুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ২ হাজার ২৫১ জন অবৈধভাবে উপার্জিত টাকায় ফ্ল্যাট ও জমি কিনেছেন। তাঁরা নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিয়ে কর নথিতে ওই সম্পদ দেখান।

কোথায় বিনিয়োগে কত কর

রাজধানীর গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল ও দিলকুশায় ২০০ বর্গমিটারের (১ বর্গমিটার = ৯ বর্গফুট) কম আয়তনের ফ্ল্যাট ও বাণিজ্যিক ভবন কিনলে প্রতি বর্গমিটারে ৪ হাজার টাকা কর দিতে হবে। ২০০ বর্গমিটারের বেশি হলে দিতে হবে ৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া জমি কেনার ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটারে ১৫ হাজার টাকা কর দিতে হবে। তাতে এক কাঠা জমির বিপরীতে কর দাঁড়াবে ১০ লাখ ৩ হাজার টাকা।

একইভাবে ঢাকার ধানমন্ডি, সব ডিওএইচএস, মহাখালী, লালমাটিয়া, উত্তরা, বসুন্ধরা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, কারওয়ান বাজার, বিজয়নগর, সেগুনবাগিচা ও নিকুঞ্জ এবং চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, খুলশী, আগ্রাবাদ ও নাছিরাবাদ এলাকায় ফ্ল্যাট ও ভবন কেনায় ২০০ বর্গমিটারের কম আয়তনের ক্ষেত্রে বর্গমিটারপ্রতি কর দিতে হবে ৩ হাজার টাকা। আর ২০০ বর্গমিটারের বেশি হলে ৫ হাজার টাকা কর দিতে হবে। এসব এলাকায় জমি কিনলে প্রতি বর্গমিটারে কর হবে ১০ হাজার টাকা।

উল্লিখিত এলাকাগুলো ছাড়া সিটি করপোরেশনের অন্যান্য জায়গায় ১২০ বর্গমিটারের কম আয়তনের ফ্ল্যাট ও ভবন কেনায় প্রতি বর্গমিটারে দিতে হবে ৮০০ টাকা। ১২০-২০০ বর্গমিটারের মধ্যে হলে প্রতি বর্গমিটারে ১ হাজার টাকা ও ২০০ বর্গমিটারে বেশি হলে প্রতি বর্গমিটারে দেড় হাজার টাকা কর দিতে হবে। এসব এলাকায় জমি কিনলে প্রতি বর্গমিটারে কর হবে ৫ হাজার টাকা।

পৌরসভা এলাকায় ১২০ বর্গমিটারের কম আয়তনের ফ্ল্যাট ও ভবন কিনলে প্রতি বর্গমিটারে ৩০০ টাকা, ১২০-২০০ বর্গমিটারের মধ্যে হলে ৫০০ টাকা এবং ২০০ বর্গমিটারের বেশি হলে ৭০০ টাকা কর দিতে হবে। এসব এলাকায় জমি কিনলে প্রতি বর্গমিটারের জন্য কর ১ হাজার টাকা। এর বাইরের এলাকায় ১২০ বর্গমিটারের কম আয়তনের ফ্ল্যাট ও ভবনের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটারে ২০০ টাকা, ১২০-২০০ বর্গমিটারের ক্ষেত্রে ৩০০ টাকা এবং ২০০ বর্গমিটারের জন্য ৫০০ টাকা কর দিতে হবে। এসব এলাকায় প্রতি বর্গমিটার জমির জন্য কর হবে ৫০০ টাকা।

জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেন সরকার ধারাবাহিকভাবে সুযোগটি দিচ্ছে, সেটি সরকারই ভালো বলতে পারবে। তবে জমি ও ফ্ল্যাটে কালোটাকা সাদা করার সুযোগটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, বৈষম্যমূলক এবং সমাজে এমন বার্তা দেয় যে তোমরা অনিয়ম দুর্নীতি করো, তারপর আমাদের কাছে আসো। এটি দুর্নীতি বিস্তারের সুযোগ ও উৎসাহ দেয়। নতুন আয়কর আইনে এই সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা, এমন রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হচ্ছে। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’