বায়ুদূষণের প্রভাব মোকাবিলায় কমানো হয়েছে এয়ার পিউরিফায়ারের শুল্ক
বায়ুদূষণের প্রভাব মোকাবিলায় এয়ার পিউরিফায়ার বা বায়ু বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র আমদানির ওপর শুল্কহার হ্রাসসহ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক এবং আগাম কর প্রত্যাহার করা হয়েছে। জানা গেছে, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দ রিজওয়ানা হাসানের এক চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ পদক্ষেপ নিয়েছে।
এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানকে লেখা চিঠিতে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেছেন, বায়ুদূষণ আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ পরিস্থিতি জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাবের মধ্যে আছে শ্বাসতন্ত্রের রোগ বৃদ্ধি, উৎপাদনশীলতা হ্রাস ও স্বাস্থ্যসেবার খরচ বৃদ্ধি। বায়ুদূষণ মোকাবিলায় এয়ার পিউরিফায়ারের মতো কার্যকর দূষণ নিয়ন্ত্রণের সরঞ্জাম সহজলভ্য করা জরুরি। বর্তমানে উচ্চ আমদানি শুল্কের কারণে এয়ার পিউরিফায়ারের দাম সাধারণ জনগণ ও স্কুল, হাসপাতালের মতো সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য সহজলভ্য নয়। শুল্ক হ্রাস করে এই যন্ত্র সহজলভ্য করা হলে তা বায়ুদূষণ থেকে সৃষ্ট স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
এয়ার পিউরিফায়ারের শুল্ক কমানোর ফলে প্রাথমিকভাবে রাজস্ব কমলেও দীর্ঘ মেয়াদে জনস্বাস্থ্যের উন্নতি ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যয়ের চাপ কমবে বলে মনে করেন পরিবেশ উপদেস্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি মনে করেন, এতে সরকারের আর্থিক সুবিধা বাড়বে। শুল্ক কমানো হলে এয়ার পিউরিফায়ারের আমদানি বাড়তে পারে। তাতে সামগ্রিক রাজস্ব ক্ষতিও পূরণ হয়ে যেতে পারে।
বিশ্বে বায়ুদূষণের শীর্ষে থাকা শহরের তালিকায় ঢাকা ও বাংলাদেশের অন্যান্য শহরের নাম আছে। বৃহত্তর ঢাকার আশপাশের বাতাসে বায়ুদূষণের মূল উপাদান পিএম ৫-এর বার্ষিক মান ৯০–১০০ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার। দেশের অন্যান্য এলাকায় যার বার্ষিক মান ৬০ থেকে ১০০ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্ধারিত মান থেকে যা অনেক বেশি।
চিঠিতে পরিবেশ উপদেষ্টা আরও জানিয়েছেন, ২০১৯ সালে বায়ুদূষণের কারণে দেশের জিডিপির প্রায় ৮ দশমিক ৩ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বায়ুদূষণের কারণে জনস্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিসহ মানুষের গড় আয়ুতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বলেছে, বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় আমদানি পর্যায়ে শুল্ক-কর হ্রাস করার মাধ্যমে এয়ার পিউরিফায়ারের মতো কার্যকর সরঞ্জাম সহজলভ্য করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গতকাল এনবিআরের এই প্রজ্ঞাপনের ফলে এয়ার পিউরিফায়ারের আমদানি খরচ প্রকারভেদে ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত কমবে। আমদানি ব্যয় কমার কারণে এয়ার পিউরিফায়ার সহজলভ্য হবে। এয়ার পিউরিফায়ারের বহুল ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের ওপর বায়ুদূষণের বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রতিরোধে কিছুটা হলেও সহায়ক হবে বলে মনে করে এনবিআর।
এয়ার পিউরিফায়ারের আমদানিতে বিদ্যমান কাস্টমস শুল্ক (সিডি) ২৫ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ও ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে এয়ার পিউরিফায়ার আমদানিতে বিদ্যমান মোট করভার ৫৮ দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে কমে ৩১ দশমিক ৫০ শতাংশ হয়েছে।