সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চলতি মাসেই, শুরুতে চার শ্রেণির মানুষ

সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালু করার প্রস্তুতির ঘাটতি রয়েছে। এখনো অনেক কাজ বাকি। তবু চলতি আগস্ট মাসে পরীক্ষামূলক ভিত্তিতে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পেনশন কর্মসূচি উদ্বোধনের সময় চেয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। সময় পাওয়া গেলে আনুষ্ঠানিকভাবে তা জানানো হবে।

পেনশন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হবে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের এখনো কোনো কার্যালয় নেই, লোকবলও নেই। অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কবিরুল ইজদানী খানকে নিজ দায়িত্বের বাইরে অতিরিক্ত কাজ হিসেবে কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়েছে অর্থ বিভাগ।

যোগাযোগ করলে কবিরুল ইজদানী খান আজ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সময় চেয়েছি। সময় পেলেই বলা যাবে, কবে উদ্বোধন হবে এ পেনশন কর্মসূচির।’

পেনশন কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত সূত্রগুলো জানায়, চলতি মাসের শেষ দিকে এ কর্মসূচির উদ্বোধন হবে। অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিন চলতি মাসের শেষ দিকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ছয় ডিএমডির একজন হিসেবে যোগ দেবেন। চেষ্টা করা হবে তিনি অর্থসচিব থাকা অবস্থায় যাতে এ কর্মসূচির উদ্বোধন হয়।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অবশ্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে আশা প্রকাশ করেছিলেন যে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই থেকেই দেশে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করা হবে।

প্রস্তুতি শেষ হয়নি
সূত্রগুলো জানায়, পেনশন কর্মসূচি চালুর আগে পাঁচটি সংস্থার সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) হবে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের। এগুলো হচ্ছে নির্বাচন কমিশন, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, সোনালী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেড। এসব এমওইউর খসড়া হয়ে আছে।

প্রধানমন্ত্রীর সময় পাওয়া গেলেই দপ্তরগুলোর সঙ্গে পেনশন কর্তৃপক্ষের এমওইউ হবে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শুধু এমওইউর মাধ্যমেই এ কর্মসূচির বাস্তবায়ন করা যাবে না। দরকার অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই) করার কাজটিও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এপিআই হচ্ছে এক ধরনের সফটওয়্যার, যার মাধ্যমে একটির সঙ্গে একাধিক কম্পিউটার কর্মসূচির যোগাযোগ স্থাপন করা যায়।

পেনশন ব্যবস্থায় নগদ টাকায় কোনো লেনদেন হবে না। সব কাজ হবে অনলাইনে।

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা, পেনশন কর্মসূচিতে যোগদানের যোগ্যতা ও নিবন্ধনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করার বিধিমালা এবং জাতীয় পেনশন কর্মসূচি (স্কিম) বিধিমালা নামের তিনটি বিধিমালার প্রজ্ঞাপনের খসড়াও তৈরি হয়ে আছে। পেনশন কর্মসূচি চালুর আগে এসব প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

শুরুতে কারা থাকবেন
আগে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সীদের জন্য সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা করার ঘোষণা দিলেও সরকার পরে বয়সের বিষয়টি শিথিল করে ৫০ পার হওয়া ব্যক্তিদেরও পেনশন ব্যবস্থার মধ্যে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

প্রবাসী বাংলাদেশি, বেসরকারি চাকরিজীবী, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মী এবং অসচ্ছল ব্যক্তি—এ চার শ্রেণির ব্যক্তিদের নিয়ে আপাতত পেনশন কর্মসূচি চালু করা হবে।

মাসিক চাঁদা হতে পারে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা আর সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে কর্মসূচি পরিবর্তন এবং চাঁদার পরিমাণ বাড়ানোর সুযোগ থাকছে।

সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালুর আগে আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সরকারি কর্মচারীদের জন্য স্বতন্ত্র নতুন একটি বিমা কোম্পানি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের অধীনে হবে এ কোম্পানি করার চিন্তা চলছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে গত ৩ আগস্ট দেশের সব সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উদ্দেশে চিঠি পাঠিয়ে ২৭ আগস্টের মধ্যে মতামত দিতে বলেছে।

একদিকে আছে রাষ্ট্রীয় সংস্থা জীবন বীমা করপোরেশন। নতুন শুরু হচ্ছে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি। তারপরও সরকারি কর্মচারীদের জন্য আলাদা বিমা কোম্পানি গঠনের উদ্দেশ্য নিয়ে বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের চেয়ারম্যান হাসিনা শেখ প্রথম আলোকে বলেন, এ সময়ে কেন সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন বিমা কোম্পানি গঠনের এমন উদ্যোগ নেওয়া হলো, তা বোঝার বিষয় আছে।