শ্রমিকদের বেতন বাড়ে না কেন 

অধ্যাপক ইয়ানাতুল ইসলামের মতে, বাংলাদেশে ১০ বছর ধরে প্রকৃত
বেতন-ভাতা ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে।

ট্রাকে তোলা কয়লাগুলো বেলচা দিয়ে ঠিক করছেন এক শ্রমিকফাইল ছবি

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কর্মসংস্থান সুরক্ষাসংক্রান্ত সূচকে বাংলাদেশ এখনো প্রত্যাশিত মানে পৌঁছাতে পারেনি। দেশটিতে শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা এখনো অপ্রতুল। তাঁদের দর-কষাকষির ক্ষমতাও নেই। বাংলাদেশের শ্রমিকদের গড় বেতন দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন, যা মাসে মাত্র ৪৫ মার্কিন ডলার। ১০ বছর ধরে প্রকৃত বেতন-ভাতা ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। আইএলওর সাবেক কর্মকর্তা ইয়ানাতুল ইসলাম এ কথা জানিয়ে প্রশ্ন রাখেন, দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি এত বাড়ে, কিন্তু শ্রমিকদের বেতন বাড়ে না কেন? 

বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ইয়ানাতুল ইসলাম শ্রমিকদের সুরক্ষা বাড়াতে তাঁদের অধিকারগুলোর চর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি তিনি শ্রমিকদের বেতনকাঠামোয় সংস্কার আনারও সুপারিশ করেন। 

গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) আয়োজিত তিন দিনব্যাপী অর্থনীতিবিদ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে একটি অধিবেশনে ইয়ানাতুল ইসলাম এসব মন্তব্য করেন। ওই অধিবেশনে আলোচনার বিষয় ছিল ‘শ্রমবাজার ও অর্থনীতির নীতি: সেখানে কি কোনো শ্রমিকবিরোধী বিষয় আছে?’। রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে এই সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সম্মেলনটি শেষ হবে আজ রোববার।

এই অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কর্মসংস্থানবিষয়ক সাবেক বিশেষ উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ রিজওয়ানুল ইসলাম বলেন, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনার নীতিতেই শ্রমিকদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব তৈরি করা হয়েছে। 

এখনো শ্রমিকদের অধিকার কম। কর্মকর্তাদের যতটা অধিকার আছে, শ্রমিকদের ততটা নেই। নিরাপদ কর্মপরিবেশ এখনো সবার দাবি। 
ইয়ানাতুল ইসলাম, অধ্যাপক, গ্রিফিত বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়া

অর্থনীতিবিদ রিজওয়ানুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফেরাতে নানা আলোচনা হচ্ছে, বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কর্মসংস্থান বা শ্রমিকদের নিয়ে কোনো আলোচনা হয় না। বাংলাদেশ ব্যাংকও কর্মসংস্থান নিয়ে কোনো কথা বলে না। অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা কাজের মধ্যে অন্যতম হলো কর্মসংস্থান তৈরিতে উদ্যোগ নেওয়া। 

অধ্যাপক ইয়ানাতুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যে শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় আইএলওর ভূমিকা নিয়ে কথা বলেন। পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিপরীতে বাংলাদেশের কর্মসংস্থান চিত্র ও সুযোগ-সুবিধা বিশ্লেষণ করেন। 

গ্রিফিত বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক তাঁর উপস্থাপনায় বলেন, একসময় মনে করা হতো সর্বনিম্ন বেতন-ভাতার ব্যবস্থা তুলে দিলে হয়তো বেকারত্ব দূর হবে। তবে ২০০০ সালে পরে সেই চিন্তায় পরিবর্তন আসে। আইএলও শ্রমিকদের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ নিয়ে কথা বলে, কিন্তু শ্রমিকদের ক্ষমতা নিয়ে কথা বলে না। 

ইয়ানাতুল ইসলাম বলেন, এখনো শ্রমিকদের অধিকার কম। কর্মকর্তাদের যতটা অধিকার আছে, শ্রমিকদের ততটা নেই। নিরাপদ কর্মপরিবেশ এখনো সবার দাবি। পাশাপাশি শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষাও দিতে হবে। 

শেষ পর্যায়ে অধ্যাপক ইয়ানাতুল ইসলামের কাছে নানা প্রশ্ন করেন সম্মেলনের অধিবেশনে উপস্থিত শিক্ষার্থী ও গবেষকেরা। তাঁর কাছে একটি প্রশ্ন ছিল, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) কি বেকারত্ব বাড়িয়ে দেবে। এর জবাবে তিনি বলেন, এআই কর্মসংস্থান কমাবে, আবার এআই চালাতে দক্ষ জনবলের জন্য নতুন কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে। তবে দিন শেষে এআইয়ের কারণে কর্মসংস্থান কমবে না।

অনুষ্ঠানের শেষে ইয়ানাতুল ইসলাম সকালের অধিবেশনে অধ্যাপক রেহমান সোবহানের দেওয়া বক্তব্যের রেশ ধরে বলেন, যে দেশে রাজনীতি ব্যবসায়ীদের কাছে কুক্ষিগত হয়ে পড়ে, সেখানে শ্রমিকের অধিকার আবার কী? 

দেশে গত বছরের শেষ তিন মাসে বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়েছে ৪০ হাজার। গত বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে সাড়ে ২৩ লাখ। এর মধ্যে পুরুষ বেকারের সংখ্যা ১৫ লাখ ৭০ হাজার আর নারী বেকারের সংখ্যা ৭ লাখ ৮০ হাজার। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।