কৃষির ক্ষতি রোধে বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে, কর্মশালায় কৃষিবিদেরা

বিরূপ আবহাওয়ার কারণে কৃষির ক্ষতি বাড়ছে। এই ক্ষতি কমাতে আসন্ন বাজেটে বরাদ্দ রাখা দরকার।

প্রচণ্ড গরমের কারণে পুকুরে মাছ মরছে। মৃত্যু হচ্ছে হাঁস-মুরগিসহ গবাদিপশুর। গরমের কারণে ফসল কাটার জন্য শ্রমিকও পাওয়া যায় না। বন্যা ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি হয় ফসলের। এমন বিরূপ আবহাওয়ার কারণে কৃষি খাতের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বিরূপ আবহাওয়ার জেরে কৃষি খাতের ক্ষতি কমাতে আসন্ন বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে।

কৃষি বাজেটবিষয়ক এক কর্মশালায় কৃষিবিদদের বক্তব্যে এসব বিষয় উঠে এসেছে। গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে এই কর্মশালার আয়োজন করে বাংলাদেশ একাডেমি অব অ্যাগ্রিকালচার।

কৃষিবিদেরা বলেন, বিশ্বের চাষাবাদযোগ্য ভূমির মাত্র শূন্য দশমিক ১ শতাংশ রয়েছে বাংলাদেশে। এই অল্প পরিমাণ আবাদযোগ্য ভূমি নিয়ে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২ দশমিক ৭ শতাংশের খাদ্যের সংস্থান করতে হয় বাংলাদেশকে। এর মধ্যে ধান ও মাছসহ কৃষির নানা খাতে প্রবৃদ্ধির হার কমে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় আগামী বাজেটে কৃষি খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।

কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম। তিনি গ্রিনহাউস বা নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে কৃষি উৎপাদনের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীল কৃষিব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা দীর্ঘ মেয়াদে বেড়ে যাচ্ছে। বৃষ্টিপাত কমে যাচ্ছে।

আগামী বাজেটে কৃষি খাতে বরাদ্দ বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, এখন আর নতুন সড়ক দরকার নেই। সেই টাকা এখন কৃষি খাতে দেওয়া উচিত।

বাজেটে সরকার কৃষিকে গুরুত্ব দিচ্ছে উল্লেখ করে কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার বলেন, দেশে কম খরচের প্রযুক্তি প্রয়োজন। বিদেশে রপ্তানির জন্য দেশের কৃষি খাত প্রস্তুত হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো অবকাঠামো নেই।’

কৃষিতে জলবায়ু সহিষ্ণু প্রযুক্তির বিকল্প নেই বলে মনে করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার।

‘বাংলাদেশ: খাদ্য নিরাপত্তা থেকে বাজারচালিত কৃষি প্রবৃদ্ধিতে রূপান্তর’ শিরোনাম অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন থাইল্যান্ডে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সাবেক জ্যেষ্ঠ কারিগরি কর্মকর্তা সুভাষ দাশগুপ্ত। প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে জিডিপিতে কৃষির অবদান ছিল ৩৭ কোটি মার্কিন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ১০০ কোটি ডলারে। তবে গত দুই দশকে দেশে ধান উৎপাদনে প্রবৃদ্ধির হার অনেক কমেছে। লাভ কম হওয়ায় ধান উৎপাদনকারী কৃষকেরা বেশি দরিদ্র থাকছেন।

রাজশাহী অঞ্চলে গরমে পুকুরে মাছ মারা যাচ্ছে উল্লেখ করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য অনুষদের সাবেক ডিন নওশাদ আলম।

এসিআই এগ্রিবিজনেস ডিভিশনের প্রেসিডেন্ট এফ এইচ আনসারী বলেন, এই যে পরিবেশ পরিবর্তন হচ্ছে, মাছ মরে যাচ্ছে, শ্রমিকেরা ধান কাটতে যাচ্ছেন না—এমন নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বেসরকারি খাতের প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্রুত ফসল রোপণ ও তোলা সম্ভব। এসব খাতে বাজেটে সরকারের সহযোগিতা চান তিনি।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারম্যান মো.আবদুর রাজ্জাক বলেন, স্থানীয় বাজারে নিরাপদ খাদ্যের চাহিদা রয়েছে। বাজেটে এই জায়গায় নজর দেওয়া প্রয়োজন।

সরকার ভর্তুকি দিলেও তা দুধ উৎপাদনকারী গরিব খামারিরা পান না। তা পায় দুধ প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠানগুলো—উল্লেখ করেন পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) প্রকল্প পরিচালক শরীফ আহমেদ চৌধুরী।

কর্মশালা পরিচালনা করেন বাংলাদেশ একাডেমি অব অ্যাগ্রিকালচারের সভাপতি লুৎফুল রহমান। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এম এ মজিদ। এ সময় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মো. আলী আকবরসহ অনেকে বক্তব্য দেন।