১০০ টাকা আদায়ে খরচ ২১ পয়সা

শুল্ক, ভ্যাট ও আয়কর বিভাগ আমদানি শুল্ক, ভ্যাট, আয়কর, সম্পূরক শুল্কসহ বিভিন্ন ধরনের শুল্ক-কর আদায় করে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রধান কার্যালয়
ছবি: সংগৃহীত

প্রায় সবারই ধারণা, করের টাকা মানুষের পকেট থেকে নেওয়া হয়। এ জন্য সরকারকে কোনো অর্থ খরচ করতে হয় না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আয় করতে হলে কিছু খরচও করতে হয়। সংস্থাটির শুল্ক, ভ্যাট ও আয়কর বিভাগ বিভিন্ন পর্যায় থেকে আমদানি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট), আয়কর, সম্পূরক শুল্কসহ বিভিন্ন ধরনের শুল্ক-কর আদায় করে। এনবিআরের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, শুল্ক ও কর বাবদ প্রতি ১০০ টাকা আদায় করতে তাদের ২১ পয়সা খরচ করতে হয়।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। এনবিআরের তিন বিভাগ যে টাকা আয় করে তা খরচ করে না। কারণ, এনবিআরের জন্য রাজস্ব ও পরিচালন খরচ হিসেবে প্রতিবছর বাজেটে আলাদা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তা দিয়েই শুল্ক-কর আদায়ের যাবতীয় খরচ মেটানো হয়। এই খরচের তালিকায় আছে ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, উৎসব বোনাস, সভার সম্মানী, প্রশিক্ষণ সম্মানী, যানবাহন কেনা ও ভাড়া, গাড়ির জ্বালানি, কাগজপত্র, স্টেশনারি ইত্যাদি।

এনবিআর পুরোপুরি উৎসে করনির্ভর রাজস্ব আদায় ব্যবস্থায় চলে গেছে। এভাবে ৮০ শতাংশের বেশি রাজস্ব আদায় হয়। উৎসে কর আদায় করতে কর্মকর্তাদের কিছুই করতে হয় না। কোনো টাকাপয়সা খরচ হয় না।
মোহাম্মদ আবদুল মজিদ সাবেক চেয়ারম্যান, এনবিআর

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে এনবিআরের সব বিভাগ মোট ৩ লাখ ৩০০ কোটি টাকা আদায় করেছে। এর বিপরীতে রাজস্ব ও পরিচালন ব্যয় ছিল প্রায় ৬৩০ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা কম টাকা খরচ করে বেশি কর আদায়কে সাফল্য হিসেবে দেখেছেন। তাঁদের মতে, কম জনবল নিয়ে ও কম খরচ করে বছরে কয়েক লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা হচ্ছে।

কিন্তু এর সঙ্গে কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করেছেন এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এনবিআর পুরোপুরি উৎসে করনির্ভর রাজস্ব আদায় ব্যবস্থায় চলে গেছে। এভাবে ৮০ শতাংশের বেশি রাজস্ব আদায় হয়। উৎসে কর আদায় করতে কর্মকর্তাদের কিছুই করতে হয় না। কোনো টাকাপয়সা খরচ হয় না। অন্য সংস্থাগুলোই কর আদায় করে দেয়। তিনি জানান, ২০০৭-০৮ সালের দিকে একবার একটি হিসাব করা হয়েছিল।

তাতে দেখা যায়, তখন ১০০ টাকা আদায় করতে ৭ টাকা খরচ হলে রাজস্ব আদায় কয়েক গুণ বেড়ে যেত। যেমন যাঁরা টিআইএন নিয়েছেন, তাঁদের রিটার্ন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হলে, বকেয়া কর আদায়ে করা মামলাগুলো দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা, বাড়িওয়ালাদের কাছ থেকে কর আদায়, কর দেয় না এমন কোম্পানিকে করের আওতায় আনা। এসব কার্যক্রম পরিচালনা করতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।

প্রতি ১০০ টাকা রাজস্ব আদায়ে ২১ পয়সা খরচ হয়—এ ক্ষেত্রে সারা বিশ্বে সবচেয়ে কম খরুচে দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। প্রতি ১০০ টাকা শুল্ক-কর আদায়ে পার্শ্ববর্তী ভারতে ৬০ পয়সা, থাইল্যান্ডে ৭১ পয়সা, সিঙ্গাপুরে ৭৯ পয়সা, মালয়েশিয়ায় ১ টাকা খরচ হয়। এ ছাড়া জার্মানি ও জাপানে এই খরচ যথাক্রমে দেড় টাকা ও ১ টাকা ৭০ পয়সা।

বাংলাদেশে কর আদায়ে তুলনামূলক খরচ কম হলেও কর দিতে গিয়ে করদাতাদের অনেক সময়ই নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয় বলে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ আছে। অনলাইন বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কর দেওয়ার ব্যবস্থা এখনো পুরোপুরি চালু হয়নি। এখনো সনাতনী পদ্ধতিই ভরসা।

কর-জিডিপি অনুপাত কম, এমন দেশগুলোর মধ্যে তলানিতে রয়েছে বাংলাদেশ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রতিযোগী ১০ দেশের রাজস্ব-জিডিপি অনুপাতের একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ওই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান সবার পেছনে। অন্য দেশগুলো হচ্ছে শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, ভারত, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া। বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত ১০ শতাংশের মতো। তালিকার বাকি দেশগুলোতে এই হার সাড়ে ১১ শতাংশ থেকে ২৪ শতাংশ।