আমদানি করা ফল চড়া
বাজারে এখন দেশি ফলের দাপট
বিদেশি ফলের দাম বাড়তি। তবে দেশি ফলের দাম সহনীয় হওয়ায় এর কদর বেড়েছে। সরবরাহ ভালো, বেচাকেনাও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
দেশের মুদ্রাবাজারে মার্কিন ডলারের দাম বাড়তি। সে জন্য ফল আমদানিতে খরচ বেশি পড়ে। যে কারণে বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে বিদেশি ফল। এই সুযোগে বাজারে দেশি ফলের কদর বেড়েছে। মিলছেও বেশ কয়েক পদের মৌসুমি ফল। সেই সঙ্গে বাজারে আসতে শুরু করেছে গ্রীষ্মের আগাম কিছু ফলও। এতে বাজারে ফলের সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। দামও রয়েছে নাগালের মধ্যে। তাই আমদানি করা ফলের বদলে দেশি ফল বেশি কিনছেন ক্রেতারা।
রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারগুলোতে এখন মৌসুমি ফলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যাচ্ছে কুল। উন্নত জাতের কয়েক পদের কুলে বাজার যেন সয়লাব। অন্যান্য দেশি ফলের মধ্যে আছে পেয়ারা, পেঁপে, কলা, বেল, আনারস ও সফেদা। কয়েক পদের তরমুজও আগাম বাজারে এসেছে। এর বাইরে দেশে উৎপাদিত স্ট্রবেরি আর ড্রাগনও বাজারে আছে।
খুচরা পর্যায়ে মানভেদে প্রতি কেজি কুল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ১০০ টাকা। পেয়ারা ৬০ থেকে ৮০ টাকা ও পেঁপে ৬০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কলার ডজন মানভেদে ৫০ থেকে ৮০ টাকা। আকারভেদে একেকটি আনারস ২০-৫০ টাকা। সফেদার কেজি ১০০-১৫০ টাকা। আর তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৮০ টাকা কেজি। একমাত্র বেল ছাড়া প্রায় সব ধরনের দেশি ফলের দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে বলা যায়। তাতে ক্রেতারা দেশি ফল কিনছেন বেশি। মানভেদে বেলের হালি পড়ছে ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর ফল আমদানি-রপ্তানিকারক ও আড়তদার ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশি ফলের উৎপাদন বেশ ভালো। অনেক বিদেশি ফলও এখন বাংলাদেশে উৎপাদিত হচ্ছে।
‘দাম বাড়ার পর বিদেশি ফলের বিক্রি কমেছে। এখন তো আপেল ও কমলার দাম অতিরিক্ত। এ জন্য দেশি ফল কিনলাম। তাজা ফল, দামও কম। দেড় শ টাকায় এক কেজি কুল আর পেয়ারা কিনলাম।’হাফিজুর রহমান, কারওয়ান বাজারে ফল কিনতে আসা তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ি
বাজারে এখন বেশ কয়েকটি মৌসুমি ফলের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। দামও কম। তাই ক্রেতারা দেশি ফলে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আগাম তরমুজও বাজারে এসেছে। বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার তরমুজের যে ফলন হয়েছে, তাতে দাম কম থাকবে।
সরকারি সংস্থা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে পেয়ারা ৪ লাখ ২৭ হাজার ৮৯৩ টন, কলা ২৯ লাখ ৭৮ হাজার ৭২৩ টন, পেঁপে ৭ লাখ ১৩ হাজার ৯৪৩ টন ও কুল ১ লাখ ৭৬ হাজার ৬৫৭ টন উৎপাদিত হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশি ফলের উৎপাদন ও বাজার দুটোই বেড়েছে। ফলে কৃষকেরা দেশি-বিদেশি উভয় ফলের চাষে ঝুঁকছেন।
কারওয়ান বাজারে ফল কিনতে আসা তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ি এলাকার হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দাম বাড়ার পর বিদেশি ফলের বিক্রি কমেছে। এখন তো আপেল ও কমলার দাম অতিরিক্ত। এ জন্য দেশি ফল কিনলাম। তাজা ফল, দামও কম। দেড় শ টাকায় এক কেজি কুল আর পেয়ারা কিনলাম।’
দেশি ফলের দাম সস্তা হলেও বিদেশি ফলের দাম উচ্চ মূল্যে স্থিতিশীল আছে। বিদেশি সব ফলের কেজি ২০০ টাকার ওপর। দাম বাড়তি থাকায় বিদেশি ফলের আমদানিও কমেছে।
বাজারে এখন মানভেদে প্রতি কেজি সবুজ আপেল ৩০০ টাকার বেশি, লাল আপেল ২৬০ থেকে ৩৪০ টাকা, কমলা ১৮০ থেকে ২২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি সাদা আঙুর ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, কালো ও লালচে আঙুর ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, বড় আনার ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। আমদানি করা মাল্টার কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ১ জুলাই থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিদেশি ফলের মধ্যে আপেল, কমলা, ম্যান্ডারিন (ছোট কমলা), আঙুর ও নাশপাতি আমদানি হয়েছে ৯৩ হাজার ৩৬১ টন। এর আগের বছরে একই সময়ে এই
পাঁচ ধরনের ফল আমদানি হয়েছিল ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩০৬ টন। অর্থাৎ আমদানি নিরুৎসাহিত করার উদ্যোগের ফলে আমদানি কমেছে ৪৫ হাজার ৯৬৫ টন বা ৩৩ শতাংশ।
উল্লিখিত পাঁচ ধরনের ফলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি কমেছে আপেল, কমলা ও আঙুরের। ডলার-সংকটের কারণে ঋণপত্র (এলসি) খোলা কঠিন হয়ে পড়ায় বিদেশি ফলের আমদানি কমেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তবে পবিত্র রমজান সামনে রেখে পর্যাপ্ত খেজুর আমদানি হয়েছে।