সাবরাংয়ে বিনিয়োগ হচ্ছে ২ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা

গত ১৬ জুলাই কক্সবাজারের সাবরাং টু৵রিজম পার্কে সর্বশেষ সাতটি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন করে সরকার।

এগিয়ে চলছে টেকনাফের সাবরাং পর্যটন অঞ্চলের কাজ। ইতিমধ্যে মাটি ভরাটের প্রথম ধাপের কাজ শেষ হয়েছে আর প্রকল্প এলাকার সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৫০ শতাংশের বেশি। এখন পর্যন্ত ১৮টি দেশি-বিদেশি কোম্পানি সাবরাংয়ে বিনিয়োগের অনুমোদন পেয়েছে। বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) জানিয়েছে, আগামী বছরের শুরুর দিকে বিনিয়োগকারীরা স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু করতে পারবেন।

কক্সবাজার থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে টেকনাফ উপজেলার সাবরাং এলাকায় প্রায় ১ হাজার একর জমিতে গড়ে উঠছে বিশেষ পর্যটন এই অঞ্চল। থাইল্যান্ডের পাতায়ার আদলে এই এলাকা আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা আছে বেজার।

বেজার তথ্যানুসারে, এখন পর্যন্ত সাবরাং পর্যটন অঞ্চলে বিনিয়োগে আগ্রহী ১৮টি কোম্পানিকে প্রায় ১৪০ একর জমি বরাদ্দের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় ৩০ কোটি ২৮ লাখ ডলার বা প্রায় ২ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে।

প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হয়েছে। এখন দ্বিতীয় ধাপের কাজ চলছে। সেটা শেষ হতে আরও পাঁচ-ছয় মাস লাগবে। এরপরই আমরা বিনিয়োগকারীদের জমি বুঝিয়ে দিতে পারব।
শেখ ইউসুফ হারুন, নির্বাহী চেয়ারম্যান, বেজা

গত ১৬ জুলাই কক্সবাজারের সাবরাং টু৵রিজম পার্কে সর্বশেষ সাতটি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন করে সরকার। নতুন অনুমোদন পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো ৯ কোটি ৪৪ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার বা ৮৯৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা বিনিয়োগ করবে। এর আগের দুই অর্থবছরে ১১টি প্রতিষ্ঠানকে সাবরাংয়ে বিনিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়।

বিনিয়োগকারীরা এখানে পাঁচ তারকা হোটেল, কটেজ ও রিসোর্ট, খেলাধুলাসংক্রান্ত পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করবে। এসব প্রতিষ্ঠানে ১০ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এ ছাড়া এখানে থাকবে ক্লক টাওয়ার, লেক, গলফ খেলার স্থান, ইকোপার্ক, জেটিসহ বিভিন্ন স্থাপনা। তবে প্রকল্প এলাকার ভূমি উন্নয়নকাজ সম্পূর্ণ শেষ না হওয়ায় এখনো তাদের জমি বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।

বেজার পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের ব্যবস্থাপক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সব মিলিয়ে ৫০ শতাংশের বেশি কাজ শেষ হয়েছে। আশা করছি, আগামী বছরের শুরুতে বিনিয়োগকারীরা পুরোদমে স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু করতে পারবেন।’

সাবরাংয়ে বিনিয়োগ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১৬টি দেশীয়। এরা হলো হোয়াইট অর্চিড গেস্টহাউস, মুনলাইট ওভারসিস, গ্রেট আউটডোর অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার, গ্রিন অরচার্ড হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস, সানসেট বে, বিসমিল্লাহ মেরিন সার্ভিসেস, ইফাদ অটোস, ইফাদ মোটর, ইস্ট-ওয়েস্ট ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, পাটওয়ারি এন্টারপ্রাইজ, ডার্ড গ্রুপের ডার্ড কম্পোজিট টেক্সটাইলস, ডার্ড গার্মেন্টস ও দীপ্ত গার্মেন্টস। বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট ও বিসিএস (প্রশাসন) বহুমুখী কল্যাণ সমবায় সমিতিও সাবরাংয়ে হোটেল-রিসোর্টে বিনিয়োগ করবে।

এ ছাড়া দুটি বিদেশি কোম্পানি সাবরাং এলাকায় হোটেল ও স্থাপনা বানাবে। কোম্পানি দুটি হলো সিঙ্গাপুরভিত্তিক ইন্টার এশিয়া গ্রুপ ও নেদারল্যান্ডসভিত্তিক কোম্পানি লিজার্ড স্পোর্টস।

সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে বিনিয়োগ করা কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক ইন্টার এশিয়া গ্রুপ। এ পর্যটন অঞ্চলের ৮৩ একর জমিতে ৮৫৫ কোটি টাকা (৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) ব্যয়ে হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট নির্মাণ করতে যাচ্ছে তারা। এখানে কর্মসংস্থান হবে প্রায় ৬ হাজার মানুষের।

অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পর্যটকদের জন্য ১০ একর জায়গায় ৩২৩ কোটি টাকা (৩৪ মিলিয়ন) ব্যয়ে হোটেল ও রিসোর্ট বানাবে বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট। এখানে কর্মসংস্থান হবে প্রায় ২৮৮ জন মানুষের। পাঁচ তারকা মানের হোটেল বানাতে সাবরাং পর্যটন অঞ্চলে ১০ একর জমি বরাদ্দ পাচ্ছে বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি। সংগঠনটি ১০৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ করবে এখানে।

একটি পাঁচ তারকা হোটেল তৈরি করতে গ্রিন অরচার্ড হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস ও সানসেট বে প্রায় ২৫১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করবে। পর্যটন অঞ্চলের তিন একর জমিতে খেলাধুলাসংক্রান্ত পরিবেশবান্ধব স্থাপনা নির্মাণ করতে যাচ্ছে গ্রেট আউটডোর অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার।

কোম্পানিটি ৫২ কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ করবে। পর্যটকদের জন্য স্নোরকেলিং, স্কুবা ডাইভিং, প্যারাসেইলিং, বিচ ভলিবল ইত্যাদি সুবিধা দেবে তারা। তিন একর জমিতে ৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট বানাবে মুনলিট ওভারসিজ। এখানে কর্মসংস্থান হবে প্রায় ৯৩৬ জন মানুষের।