কর কার্ড পেলেন ১৪১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমপ্রথম আলো

এবারও জাতীয় পর্যায়ে সেরা করদাতা হিসেবে ১৪১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে কর কার্ড দিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর মধ্যে ব্যক্তি রয়েছেন ৭৬ জন; বাকি ৬৫টি প্রতিষ্ঠান। আজ বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সেরা করদাতা ব্যক্তি ও তাঁদের প্রতিনিধি এবং প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের হাতে কর কার্ড ও সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়।

এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠান হয়। এতে বক্তব্য দেন অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান চৌধুরী, এনবিআর সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ আবু দাউদ প্রমুখ। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তিনি ছিলেন না।

অনুষ্ঠানে অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, রাজস্ব খাতের সংস্কার প্রয়োজন। এই সংস্কার করতে পারলে ২০২৬ সালের মধ্যে এক কোটি প্রত্যক্ষ করদাতা পাওয়া যাবে। আগামী জুন মাসের মধ্যে এনবিআরের মধ্যমেয়াদি সংস্কার কৌশল ঠিক করা হবে। যদি সংস্কার হয়, তাহলে আগামী তিন বছর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী রাজস্ব আদায় বাড়ানো সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম করদাতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা কোনো সমস্যায় পড়লে কর কর্মকর্তাদের কাছে যাবেন। তাঁরা সমস্যার সমাধান করে দেবেন। প্রতি সপ্তাহে প্রতিটি কর কমিশনারেটে গণশুনানি হয়, সেখানে অভিযোগ বা পরামর্শ থাকলে জানাবেন।

একই অনুষ্ঠানে ঢাকা বিভাগের সিটি করপোরেশন ও জেলা পর্যায়ে তিনজন সর্বোচ্চ করদাতা, দুজন দীর্ঘ সময় ধরে কর প্রদানকারী এবং একজন করে নারী ও তরুণ করদাতাকে সম্মাননা হিসেবে সনদ ও ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়। এ বছর জেলা পর্যায়ে সব মিলিয়ে ৫২৫ করদাতাকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। দেশের বিভিন্ন কর অঞ্চল থেকে তাঁদের এই সম্মাননা দেওয়া হয়।

কর কার্ডধারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় সুবিধা ও অগ্রাধিকার পাবেন। যেমন বিমানবন্দরে সিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার; তারকা হোটেলসহ সব আবাসিক হোটেলে বুকিং; নিজে, স্ত্রী বা স্বামীর ও নির্ভরশীল সন্তানের জন্য সরকারি হাসপাতালে কেবিন; আকাশ-রেল-নৌপথে সরকারি যানবাহনের টিকিট এবং জাতীয়, সিটি করপোরেশন, পৌরসভাসহ স্থানীয় সরকার আয়োজিত অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ। এই কর কার্ডের মেয়াদ হবে এক বছরের।

কোন শ্রেণিতে কারা কর কার্ড পেলেন

জ্যেষ্ঠ নাগরিক: বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী; ড্রাগ ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক খাজা তাজমহল, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজ রহমান, সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান এবং ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুর মুক্তাদির।
গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা: এ মতিন চৌধুরী, মো. আমজাদ হোসেন, মো. নাসির উদ্দিন মৃধা, মো. জয়নাল আবেদীন ও আবু সালেহ্ মোহাম্মদ নাসিম।
প্রতিবন্ধী: ঢাকার আকরাম মাহমুদ, সিলেটের মো. মামুনুর রশিদ ও কুষ্টিয়ার মো. শাহজামাল।

মহিলা: আনোয়ারা হোসেন, ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহনাজ রহমান, নিলুফার ফেরদৌস, মিতুলী মাহবুব ও ডা. শায়লা আফ্রিন খন্দকার।
তরুণ: আহমেদ আরিফ বিল্লাহ, মো. শাহেদ শাহরিয়ার, সারদিন রহমান, নাসিরুদ্দিন আকতার রশীদ ও রাকেশ কুমার।

ব্যবসায়ী: হাকিমপুরী জর্দার স্বত্বাধিকারী মো. কাউছ মিয়া, গাজী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গাজী গোলাম মূর্তজা, ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস চেয়ারম্যান এস এম আশরাফুল আলম, চেয়ারম্যান এস এম শামছুল আলম এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মাহবুবুল আলম।

বেতনভোগী: এ শ্রেণির পাঁচজনই একই পরিবারের। তাঁরা হলেন ড্রাগ ইন্টারন্যাশনালের মোহাম্মদ ইউসুফ, রুবাইয়াৎ ফারজানা হোসেন, হোসনে আরা হোসেন, লায়লা হোসেন এবং এম এ হায়দার হোসেন।

চিকিৎসক: জাহাঙ্গীর কবির, এ কে এম ফজলুল হক, এন এ এম মোমেনুজ্জামান, প্রাণ গোপাল দত্ত ও লুৎফুল লতিফ চৌধুরী।

সাংবাদিক: চ্যানেল আইয়ের এমডি ফরিদুর রেজা, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, দৈনিক আজাদীর সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল মালেক এবং চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ।

আইনজীবী: ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, ঢাকার (এমসিসিআই) সাবেক সভাপতি নিহাদ কবির, আহসানুল করিম, তৌফিকা আফতাব ও কাজী মোহাম্মদ তানজীবুল আলম।

প্রকৌশলী: মো. আতিকুর রহমান, দ্য স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের (সেল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল ও অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এইচ এম জহিরুল হক।

স্থপতি: মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ, মো. রফিক আজম ও খান মোহাম্মদ মুস্তাফা খালীদ।
হিসাবরক্ষক (অ্যাকাউনট্যান্ট): মোহাম্মদ ফারুক, মাশুক আহমদ ও স্নেহাশীষ বড়ুয়া।
নতুন করদাতা: রায়ান মাইকেল অট, মো. আলী নুর, মো. রফিকুল ইসলাম, জারা জেরিন জামান, শাহ আলম উদ্দীন, আনতারা জাইমা ও মোহাম্মদ আমিনুল হক।
খেলোয়াড়: ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, মো. মাহমুদ উল্লাহ ও তামিম ইকবাল খান।
অভিনেতা-অভিনেত্রী: মাহফুজ আহমেদ, ফরিদা আক্তার ববিতা ও মো. সিয়াম আহমেদ।

শিল্পী (গায়ক-গায়িকা) : তাহসান রহমান খান, এস ডি রুবেল ও মমতাজ।
অন্যান্য: পলমল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাফিস সিকদার, রাকিন সিটি ডেভেলপমেন্টের পরিচালক এস এ কে একরামুজ্জামান ও মো. মনির হোসেন।

প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে যারা কর কার্ড পেল

ব্যাংক: ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ, ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ও ইস্টার্ণ ব্যাংক।

অ-ব্যাংকিং আর্থিক: ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি, আইডিএলসি ফাইন্যান্স, বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স ফান্ড ও ডিবিএইচ ফাইন্যান্স।
টেলিকমিউনিকেশন: গ্রামীণফোন।

প্রকৌশল: বিএসআরএম স্টিলস, বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস (বিএসআরএম) ও বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি।

খাদ্য ও আনুষঙ্গিক: নেসলে বাংলাদেশ, প্রাণ ডেইরি ও অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ।
জ্বালানি: তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন, শেভরন বাংলাদেশ ব্লক থার্টিন অ্যান্ড ফরটিন এবং পেট্রোম্যাক্স রিফাইনারি।

পাটশিল্প: আকিজ জুট মিলস, আইয়ান জুট মিলস এবং পপুলার জুট এক্সচেঞ্জ।
স্পিনিং ও টেক্সটাইল: স্কয়ার টেক্সটাইলস, কোটস বাংলাদেশ, বাদশা টেক্সটাইলস, এনজেড টেক্সটাইল, কামাল ইয়ার্ন, এসিএস টেক্সটাইলস এবং ফখরুদ্দীন টেক্সটাইল মিলস।

ওষুধ ও রসায়ন: স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ইউনিলিভার বাংলাদেশ, কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার এবং ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালস।

প্রিন্ট ও ইলেট্রনিক মিডিয়া: মিডিয়াস্টার লিমিটেড, ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেড, সময় মিডিয়া ও টাইমস মিডিয়া লিমিটেড।

আবাসন: স্বদেশ প্রপার্টিস, শান্তা হোল্ডিংস এবং এডব্লিউআর ডেভেলপমেন্টস।
তৈরি পোশাক: ইয়াংওয়ান হাইটেক স্পোর্টসওয়্যার, স্কয়ার ফ্যাশনস, রিফাত গার্মেন্টস, তিতাস স্পোর্টসওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ, ইউনিভার্সেল জিনস, নাইস ডেনিম মিলস ও ফকির নিটওয়্যার।

চামড়াশিল্প: বাটা শু কোম্পানি, এপেক্স ফুটওয়্যার এবং অ্যালায়েন্স লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার।

অন্যান্য: ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি, আমেরিকান লাইফ ইনস্যুরেন্স, সাধারণ বীমা করপোরেশন এবং ইডটকো বাংলাদেশ কোম্পানি।
এ ছাড়া অন্যান্য করদাতা পর্যায়ে মেসার্স এস এন করপোরেশন, মেসার্স মো. জামিল ইকবাল, ওয়ালটন প্লাজা, মেসার্স ছালেহ আহাম্মদ, সেতু কর্তৃপক্ষ, সেনাকল্যাণ সংস্থার প্রধান কার্যালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মচারী সমবায় ঋণদাতা সমিতি, ব্র্যাক, আশা, সামওয়ান-মীর আক্তার জয়েন্ট ভেঞ্চার এবং ব্যুরো বাংলাদেশ কর কার্ড পেয়েছে।