খেলাপি ঋণের মডেলই এখন দেশে বিজনেস মডেল: সালেহউদ্দিন আহমেদ

অর্থনীতির চালচিত্র ও প্রস্তাবিত বাজেট ২০২৪-২৫’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তব্য রাখছেন সালেহউদ্দিন আহমেদছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘আপনি ব্যাংক থেকে ঋণ নেবেন, আর ফেরত দেবেন না। দেশে এখন এ মডেল চলছে। খেলাপি ঋণের এ মডেলই এখন দেশের বিজনেস মডেল।’

আজ সোমবার সম্পাদক পরিষদ ও সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) আয়োজিত ‘অর্থনীতির চালচিত্র ও প্রস্তাবিত বাজেট ২০২৪-২৫’ শীর্ষক আলোচনায় সালেহউদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন।

আরও পড়ুন

প্রস্তাবিত বাজেটে কোনো নতুনত্ব নেই—এমন মন্তব্য করে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাজেটটা দেওয়া হয়েছে চ্যালেঞ্জিং সময়ে। এতে কোনো নতুনত্ব দেখছি না। আগের বাজেটের অঙ্ক শুধু এদিক-সেদিক করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, সংকোচনমূলক বাজেট, অথচ বাজেটের ঘাটতি দেখে তা সংকোচনমূলক মনে হয় না।’

বাজেট–ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকঋণের ওপর নির্ভরতা বাড়ানো হয়েছে এবং এতে বেসরকারি খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘সরকার যদি বেশি ঋণ নেয়, তাহলে বেসরকারি খাত ঋণ পাবে কীভাবে? আর বেসরকারি খাত ঋণ না পেলে কর্মসংস্থান হবে কীভাবে।’ প্রস্তাবিত বাজেটের কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতও ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে তিনি মনে করেন।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে সুদহার ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না বলে মনে করেন সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি যে পর্যায়ে গেছে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ জন্য বাজার তদারকি ও সরবরাহ বাড়াতে হবে।

আরও পড়ুন

ব্যাংক খাত নিয়ে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংক খাতের মর মর অবস্থা এবং সুশাসনে চরম ঘাটতি চলছে। প্রস্তাবিত বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার যে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে, তা উচিত হয়নি বলে জানান সালেহউদ্দিন আহমেদ। বলেন, এ মুহূর্তে এডিপির আকার এক থেকে দেড় লাখ কোটি টাকার বেশি করার দরকার ছিল না।

নতুন করে যে ১ হাজার ২৮৫টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, তার সমালোচনা করে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এটা অর্ধেক করে দিলেই সরকারের ঋণ নির্ভরতা ও বাজেট–ঘাটতি কমবে। বাজেটের নীতি কৌশল ও দর্শনে বলিষ্ঠ কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। অথচ এ সময়ে সেটাই দরকার ছিল।

আরও পড়ুন

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাজেট করতে হবে পারফরম্যান্স–নির্ভর। কিছু সংস্থা দরকার হলে বন্ধ করে দিতে হবে। আর কিছু সংস্থার জনবল কমাতে হবে। শুধু বাজেটের অঙ্ক এদিক-সেদিক করে কোনো লাভ নেই। কঠিন পদক্ষেপ নিতে হবে। সূর্যের আলোর মতো স্বচ্ছ হতে হবে। তখন বাজেট যে আকারেরই হোক, কোনো সমস্যা হবে না।